লাগে রহো কেজরিওয়াল,অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের কলম

অনিকেত চট্টোপাধ্যায়

দিল্লি তে তৃতীয়বার আপ সরকার শপথ গ্রহণ করল। হম হোঙ্গে কাময়াব গাইলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
একবারও সিএএ-র কথা বলেননি, এনআরসি-র কথা বলেননি, সারা দেশ এর বিরোধী রাজনীতির নেতাদের ডাকেননি। বলেছেন দিল্লিওয়ালো আগামী পাঁচ বছর আপনাদের সঙ্গে আছি আমরা, আরও স্কুল। আরও ভালো শিক্ষা, আরও ভালো মহল্লা ক্লিনিক। গরীবস্য গরীবদের জন্য আরও অনেক অনেক কিছু যা কেবল কথা বা বর্ণমালা নয়, যা দেখা যায়, ছোঁয়া যায়, আমরা দেবো। আপ দেবে।

আচ্ছা এই যে গরীবস্য গরীবদের কিছু দেওয়া, কিছুটা পাইয়ে দেওয়া, সেটা কী রাজনীতি নয়? স্কুলে, শিক্ষায় ২৬ শতাংশ বাজেট খরচ করা কী রাজনীতি নয়? ব্যাঙের ছাতার মত রক্তচোষা ডায়গনিস্টিক সেন্টারের হাত থেকে গরীব মানুষগুলোকে বাঁচানো কি রাজনীতি নয়? নিম্নবিত্ত মানুষগুলোর নাভিশ্বাস উঠছে, মুল্যবৃদ্ধির জন্য, বেকারির জন্য, সেই নিম্ন বিত্ত গরীব মহিলাদের বাসে যাতায়াত ফ্রি করে দেওয়া রাজনীতি নয়? মঞ্চ আলো করে কেবল প্রধানমন্ত্রী হতে চাওয়া লোভে চক চক মুখগুলোকে মঞ্চে না ডাকাটাও একটা রাজনীতি। আলবাত রাজনীতি। লক্ষকোটি টাকা ব্যাঙ্কের লোন, ধার মুকুব করে দেওয়াটাও রাজনীতি, কর্পোরেট ট্যাক্স মুকুব করতে থাকাটাও রাজনীতি, বুলেট ট্রেণ চালানো টাও রাজনীতি, ব্রাজিলের চরম দক্ষিণপন্থী রাষ্ট্রপতি বোলসেনারো কে ২৬ এ জানুয়ারী প্রধান অতিথি করাটাও রাজনীতি আবার কেবল ট্রাম্প এর গুজরাট ভ্রমণের জন্য ১০০ কোটি টাকা খরচ করাটাও একটা রাজনীতি।

এটা দুই বিপরীত রাজনৈতিক দর্শন। একটা কথা ভাবুন না, ভাবতে তো পয়সা খরচা হয় না। যদি কেজরিওয়াল হেরে যেতেন, তাহলে কী কী হতো? তার পরেরদিন সাতসকালে মেরে শাহীনবাগ খালি করে দিতো? অনেকে প্রশ্ন করবেন, পারতো? হ্যাঁ পারতো। তাদের দিল্লি জয় তাদের সে ক্ষমতা দিত। দিল্লি সরকার রাস্তা খালি করার কথা বলতো। পুলিশ কে বলতো আপনারা ব্যবস্থা নিন। দরকারে গুলি করুন, দরকারে জরিমানা করুন। খালি করুন। খালি হতো। যে বিপ্লবীরা ঘরে বসে ভাবছেন, তাহলেতো কেজরিওয়াল বিপ্লবী নয়, আসুন এই সিএএ আর এনআরসি কে হাতিয়ার করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করি। তাদের নিয়ে আজ আলোচনা করবো না, সিরিয়াস বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি তো তাই। যেদিন মেজাজ ফুরফুরেথাকবে সেদিন এই বিপ্লবীদের নিয়ে আলোচনা করা যাবে। আবার কেজরিওয়ালে ফিরি। কেজরিওয়াল কোথাও বলেন নি যে এই রাষ্ট্রযন্ত্র তিনি বা তার দল দখল করবেন, খোল নলচে পালটে নতুন সমাজ বানাবেন। তিনি বার বার বলছেন যে ভাই চুরি আর দূর্নীতি থামাতে পারলে অনেকটা বেশি পয়সা গরীব মানুষগুলোর জন্য খরচ করা যায়, আমরা সেটাই করার কথা বলছি। শিক্ষার গুরুত্ব বোঝেন বলেই শিক্ষাকে আরো প্রসারিত করার কথা বলছেন, আরও বেশি সাধারণ ঘরের ছেলেমেয়েরা পড়াশুনো করুক, কারণ শিক্ষা আনে চেতনা আর চেতনা আনে? আনে অনেক কিছু আনে।

এবার শংকা টা কোথায়? সংশয়টা কোথায়? প্রশ্ন টা কোথায়? দুটো জায়গায় স্যর কেজরিওয়াল। আমরা পশ্চিমবাংলার মানুষ, আমার বাবা কাকা রা এমনি এক সরকারের শপথগ্রহন সমারোহে হাজির ছিলেন, যারা সেদিনও এমনিই গান গেয়েছিলেন আমরা করবো জয়। সেই সরকারের নির্মম পতনের পরে যে যে কারণগুলো উঠে এসেছিল, তারমধ্যে এই মোদ্দা দুটো বিষয় আপনি মনে রাখবেন। মাথায় রাখবেন।

১) সুবিধা, মানে এই জল শিক্ষা বাসস্থান বিদ্যৎ, হাসপাতালের সুবিধা আরও আরও অনেক বেশি চাহিদা তৈরি করবে। অনেক বেশি। আপনি যা দিতে পারছেন, যা দিতে পারবেন তার চেয়েও বেশি। এই চাহিদা সামলানোর ব্যবস্থা আপনাকে এখন থেকেই ভাবতে হবে। হবেই। কারণ আপনার উল্টোদিকে বসে থাকা দল দিল্লির সাব বাসিন্দার পুরো বিদ্যুৎ বিল ফ্রি করার দাবী করবে এবং তারা এক আধ বছরের জন্য করেও দেবে। এই বাড়তে থাকা চাহিদা র দাওয়াই এক রাজনীতি যা আতিশি র আছে, যা আপনার আছে যা মণীষের আছে, সাধারণ মানুষের নেই। সেই রাজনীতি ছড়িয়ে দিতে না পারলে এই চাহিদা কে সামলানো অসম্ভব। বুদ্ধ ভট্টাচার্য বলেছিলেন, যে গ্রামে রাস্তা ছিলনা রাস্তা হবার পরেই তারা বাস চেয়েছে, আমাদের কাছে পয়সা নেই।
২) উন্নয়ন এক নেশাও বটে। বিদেশ ঘুরে মনে হয় আহা যদি এমন পরিস্কার ঝাঁ চকচকে হতো আমাদের শহর গ্রাম। ব্যস, সেই উন্নয়নের জন্য কাছা খুলে নেমে পড়া। বড় বড় রাস্তা, কেয়ারি করা বাগান, বিরাট বিরাট মল, চারিদিকে গাড়ি যন্ত্রপাতি রোবটিক্স কমপিউটার হাব। কিসের বিনিময়ে? যা খুশি, সবটার বিনিময়ে, সরকার কে বাঁচাতে শিল্প চাই, চাকরি চাই, জমি চাই। চাই তো চাই। মুক্তকচ্ছ হয়ে নেমে পড়লেন এবং মানুষ আপনার কাছ থেকে সরে গ্যালো। কারণ মানুষ সেই উন্নয়ন চায় নি। মানুষ যে উন্নয়ন চায়না তাকে আপনি উন্নয়ন মনে করতেই পারেন, সত্যি করেই সেটা হয়তো উন্নয়নই ছিল, কিন্তু ঐ জনগণেশের রায় ছাড়া আপনার উন্নয়ন, আপনার বিকাশ মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য।

কেজরিওয়াল স্যর নেমে পড়ুন মাত্র এই দুখানা কথা মাথায় নিয়ে। আপনার জয় হোক। লগে রহো কেজরিওয়াল।

আরও পড়ুন-Actor killed by politics. তাপস পালকে নিয়ে কুণাল ঘোষের কলম

Previous articleমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পাশে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ
Next articleবাজল শীতের বিদায়-ঘণ্টা