ইয়েচুরি প্রার্থী হলে জিততে পারবেন ? কণাদ দাশগুপ্তর কলম

    কণাদ দাশগুপ্ত

শুধু পুরভোট নয়, এই এপ্রিলে রাজ্যসভায় রাজ্যের ৫ আসনেও ভোট হতে চলেছে।

বর্তমানে এই আসনগুলির মধ্যে ৪টি তৃণমূল কংগ্রেসের৷ পঞ্চম আসনে
২০১৪ সালে সিপিএম প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন ঋতব্রত বন্দোপাধ্যায়৷ নানা বিতর্কিত কারনে ২০১৭ সালে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করে সিপিএম। তাঁকে সিপিএম দল সংসদে পাঠালেও ঋতব্রত সাংসদ পদে ইস্তফা দেননি৷ তারপর থেকে রাজ্যসভায় “তৃণমূলের ছায়াসঙ্গী এক নির্দল সদস্য” এই ঋতব্রত৷

এবারের রাজ্যসভার ভোটে তৃণমূলের বিধায়ক সংখ্যার নিরিখে ৫ আসনের প্রথম ৪টিতে তৃণমূলের জয় নিশ্চিত৷ রাজনৈতিক মহলের নজর এখন রাজ্যসভার পঞ্চম আসনের দিকে৷

বিধানসভায় এখন বাম বা কংগ্রেসের যা শক্তি, তাতে তারা নিজেদের কাউকে রাজ্যসভায় পাঠানোর জায়গায় নেই৷ তবে সম্প্রতি জোটবদ্ধ হওয়া এই দু’দলের ধারনা এবং আশা, এক হয়ে একজন প্রার্থী দিলে পঞ্চম আসনে জোটপ্রার্থী জিতবে৷

২০১৯-এর লোকসভা ভোটের পর থেকে লোকসভা এবং রাজ্যসভায় বঙ্গ- সিপিএমের কোনও প্রতিনিধিত্বই নেই। ১৯৬৪ সালে সিপিএম তৈরি হওয়ার পর প্রথমবার এই ঘটনা ঘটেছে। তাই সিপিএম এবার এই আসনে প্রার্থী দিতে চাইছে৷ এ রাজ্য থেকে দলের সাধারন সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিকে জোটের প্রার্থী করতেও উদ্যোগী হয়েছে৷ ইয়েচুরির সংসদীয় ভূমিকা তুলে ধরে রাজ্য সিপিএম এক প্রস্তাব নিয়েছে সম্প্রতি। প্রস্তাবে ২০০৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সংসদে ইয়েচুরি-র লড়াকু
ভূমিকার কথাই তুলে ধরা হয়েছে৷ ইয়েচুরির জন্য কংগ্রেসের সহায়তাও প্রার্থনা করেছে সিপিএম৷

ফলে, একাধিক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে এই পঞ্চম আসন ঘিরে৷ জাতীয় রাজনীতিতেও হয়তো ছাপ ফেলতে পারে এই ‘পঞ্চম আসন’৷

ঠিক কোন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে রাজ্যসভায় এ রাজ্যের পঞ্চম আসন ?

◾রাজ্য বিধানসভার মোট বিধায়ক সংখ্যা ২৯৪ জন৷

◾বিজেপির বিধায়করা সম্ভবত এই ভোটে অংশ নেবেন না৷ এমন বিধায়ক ৬জন৷

◾ফালাকাটার তৃণমূল বিধায়ক প্রয়াত হয়েছেন৷ ফলে একটি আসন শূন্য।

◾মোট ২৯৪ থেকে ৭টি প্রথম পছন্দের ভোট কমে যেতে পারে।

◾বাম ও কংগ্রেস থেকে যাওয়া বিধায়কদের নিয়ে তৃণমূলের সদস্য সংখ্যা এখন মোট ২৩৪ জন।

◾ হিসাবে আপাতত দেখা যাচ্ছে, রাজ্যসভায় একজন প্রার্থীকে জয়ী করতে প্রথম পছন্দের ভোট প্রয়োজন হবে ন্যূনতম ৪৮টি৷

◾ ৪৮টি করে প্রথম পছন্দের ভোট ন্যূনতম প্রয়োজন হলে, তৃনমূলের ৪ জন প্রার্থীকে জেতাতে দরকার হবে ৪৮ x ৪ = মোট ১৯২টি ভোট৷

◾চারজনকে জেতানোর পরেও তৃণমূলের হাতে অক্ষত ও অতিরিক্ত
থাকবে ৪২টি ভোট৷

◾পঞ্চম প্রার্থীকেও জয়ী করাতে যে সংখ্যা প্রয়োজন, তৃণমূলের হাতে তার থেকে কম থাকছে মাত্র ৬টি ভোট৷

◾কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট ত্যাগ করেছেন, এমন বিধায়কদের বাদ দিলে আজ, এখন পর্যন্ত দু’শরিকের বিধায়ক- সংখ্যা ২৪ জন করে৷ অর্থাৎ, মোট ৪৮টি ভোট৷ রাজ্যসভায় একজন প্রার্থীকে জয়ী করতে ন্যূনতম প্রথম পছন্দের ভোট প্রয়োজন এই ৪৮টি ভোটই৷

◾এই ৪৮ ভোট এক বাক্সে আনতে পারলে কং-বাম যৌথভাবে পঞ্চম প্রার্থীকে রাজ্যসভায় পাঠাতে পারে।

◾এটাও মাথায় রাখতে হবে, কম থাকা মাত্র ৬টি ভোট ‘জোগাড়’ করে পঞ্চম আসনও দখল করা তৃণমূলের পক্ষে অসম্ভব কোনও কাজ নয়৷

◾ঠিক এখানেই বড় ভাবে উঠে আসবে পঞ্চম আসনে জোটের প্রার্থী কে হচ্ছেন, সেই বিষয়টি৷ প্রার্থী পছন্দসই না হলে তৃণমূলও পঞ্চম আসনে প্রার্থী দিয়ে বাম-কং শিবিরে ৬টি ভোটের জন্য হানা দিতে পারে৷ এবং সে ক্ষেত্রে তৃণমূল প্রার্থী করতে পারে ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে৷ জিতলে ১০০% লাভ, হারলে সরাসরি দলের কোনও ক্ষতি নেই৷ অনেকটা ‘শত্রুকে বাঘ মারতে পাঠানো’-র মতো৷

◾আর এই পরিস্থিতিতে সুকৌশলে চাল দিতে চাইছে কংগ্রেস ৷

◾ইতিমধ্যেই উত্তর প্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি-র সাধারন সম্পাদক হিসাবে ‘অ্যাক্টিভ’ রাজনীতিতে নজর কেড়েছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী৷ সাংগঠনিক দায়িত্বও পালন করছেন৷

◾লোকসভার বিরোধী দলনেতা অধীর চৌধুরি ইতিমধ্যেই বলেছেন, দলের নির্দেশ পেলে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে বাংলা থেকে রাজ্যসভায় পাঠানোর কাজে নামতে তিনি তৈরি৷

◾প্রিয়াঙ্কা গান্ধী সংসদীয় রাজনীতিতে পা দিতে রাজি হলে জাতীয় রাজনীতির মোড় ঘুরে যেতে পারে৷ প্রদেশ কংগ্রেস যতই গোষ্ঠী- কোন্দলে দীর্ণ হোক, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর নামে রাজ্য কংগ্রেসের কোনও অংশই আপত্তি জানানোর সাহস দেখাবে না৷ সেক্ষেত্রে ইয়েচুরিকে সমর্থন করারও প্রশ্ন থাকবেনা৷

◾মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রিয়াঙ্কার নামে তেমন আপত্তি নাও জানাতে পারেন৷ ইয়েচুরি প্রার্থী হলে কং-বাম শিবিরে থাবা বসাতে তৃণমূল যতখানি তৎপর হবে, প্রিয়াঙ্কা প্রার্থী হলে তৃণমূল তেমন না করার সম্ভাবনাই বেশি৷ এক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের দুই কৌঁসুলি, অভিষেক মনু সিংভি এবং কপিল সিবাল উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারেন৷

◾অন্যদিকে, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী প্রার্থী না হয়ে জোটের প্রার্থী ইয়েচুরি হলে কংগ্রেস শিবিরে ফাটল ধরানো তৃণমূলের পক্ষে অনেক সহজ৷ তৃণমূল সে চেষ্টা করতেই পারে৷ যতই দলের শৃঙ্খলাবদ্ধ সৈনিক হোন, সিপিএমকে ভোট দিতে অনেক বিধায়কেরই আপত্তি আছে৷ এবং তার ওপর থাকবে তৃণমূলের কিছু ‘প্রস্তাব’৷ ৫-এ-৫ করার এই সুযোগ তৃণমূল নেবেই৷

◾ফলে, কং-বাম জোট যতই অঙ্ক করুক, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী প্রার্থী হোন বা না হোন, কোনওক্রমে ৪৮-এ দাঁড়িয়ে থাকা জোট প্রার্থীর পক্ষে পঞ্চম আসনে জয়ী হওয়ার পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়৷ যদি না সিপিএম বা ইয়েচুরি সাহেব নিজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সমর্থন প্রার্থনা করেন৷

পঞ্চম আসন নিয়ে বঙ্গে অনেক রাজনীতি অপেক্ষা করছে৷

Previous articleলালগ্রহে পা বাঙালি মেয়ের! মঙ্গল না ‘অমঙ্গল’?
Next articleবারামুল্লা থেকে গ্রেফতার হিজবুল মুজাহিদিন জঙ্গি