পলিটব্যুরোয় ইয়েচুরির নাম খারিজ, সংকটে বাম-কং জোট কণাদ দাশগুপ্তর কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

আশঙ্কাই সত্যি হলো৷ ২০১৮ সালে হয়নি, ২০২০ সালেও হলো না৷

রাজ্যসভায় এবারও প্রার্থী হওয়া হচ্ছে না সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির৷ বঙ্গ-সিপিএমের পাঠানো প্রস্তাব সরাসরি ফেরত পাঠালো দলের পলিট ব্যুরো৷

সিপিএমের এই সিদ্ধান্তের ফলে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী এবার কথা বলবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এবং এবারও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন চাইবেন৷ এই কথা আগেই জানিয়েছেন সোনিয়া৷ কংগ্রেস হাই-কম্যাণ্ড সলতে পাকাচ্ছে ২০১৮-র মতো এবারও তৃণমূলের সমর্থন নিয়ে দলীয় প্রার্থীকে সংসদে পাঠানোর৷ এমন হলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বামেদের হাত ধরে পুরভোটের মঞ্চে কংগ্রেস দাঁড়ালে, তা হবে কংগ্রেসের নিতান্তই এক দ্বিচারিতা৷ সিপিএমের এই সিদ্ধান্তের প্রভাব এবার পড়বে পুরভোটে বাম-কং জোটে৷ শুধু প্রভাব পড়াই নয়, সঙ্কটে পড়তে পারে এই জোটের অস্তিত্বও৷

বাম ও কংগ্রেস বিধায়কদের ভোট এক বাক্সে আনতে পারলে পঞ্চম আসনে জোট প্রার্থীর জয় নিশ্চিত৷ সে কারনেই সীতারাম ইয়েচুরিকে এ রাজ্য থেকে রাজ্যসভার পঞ্চম আসনে প্রাথী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলো কংগ্রেস হাই কম্যাণ্ড৷ তবে কংগ্রেসের এই সমর্থন শুধুই ইয়েচুরির জন্য, অন্য বাম-প্রার্থী এই সুযোগ পাবেন না বলেও কংগ্রেস জানিয়ে দেয়৷ সেই সমঝোতার ভিত্তিতেই বেশ কিছুদিন আগে বঙ্গ-সিপিএম প্রস্তাব আকারে ইয়েচুরির নাম পাঠায় দলের শীর্ষস্তরে৷
রাজ্যসভার নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে৷ মনোনয়ন দাখিলের শেষ তারিখ ১৩ মার্চ৷ অথচ এখনও বাম-কং জোটপ্রার্থীর খোঁজ নেই৷

এদিকে নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর, ইয়েচুরিকে প্রার্থী করতে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের প্রস্তাব এবারও খারিজ করেছে গোপালন ভবনের কাস্টোডিয়ানরা৷
শনিবার সিপিএমের পলিটব্যুরো এই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে বলে দলীয় সূত্রের খবর৷ পলিটব্যুরো দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা সীতারামকে রাজ্যসভায় পাঠাতে ২০১৮-র মতো ২০২০ সালেও নারাজ বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ শুধু তাই-ই নয়, সিপিএম পলিটব্যুরো ওই ইয়েচুরিকেই কংগ্রেস হাই কম্যাণ্ডের সঙ্গে কথা বলে সমঝোতার ভিত্তিতে বিকল্প নাম স্থির করার দায়িত্ব দিয়েছে ৷ জানা গিয়েছে, পলিটব্যুরোয় ইয়েচুরির বিকল্প হিসেবে প্রকাশ কারাত-লবির মহম্মদ সেলিমের নাম পছন্দ করছে৷ দিল্লি- সিপিএমের অন্দরে চর্চা চলছে সেলিমের নাম নিয়ে৷ প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ সেলিমকে রাজ্যসভায় পাঠানোর ব্যাপারে স্পষ্ট
আপত্তি জানিয়েছে। ফলে সিপিএম কিছুতেই সেলিমের নাম কংগ্রেসের কাছে পাঠাতে পারছে না৷ কংগ্রেসকে রাজি করানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইয়েচুরিকে৷ ওদিকে, সিপিএমের পলিটব্যুরোর বৈঠক আগামী ১৪-১৫ মার্চ দিল্লিতে হবে। কিন্তু রাজ্যসভার মনোনয়ন দাখিলের শেষদিন ১৩ মার্চ৷ ফলে পলিটব্যুরোয় এই নিয়ে আলোচনার সুযোগ নেই৷ জানা গিয়েছে, শনিবারের বৈঠকে ইয়েচুরি, কারাট-দম্পতি প্রমুখ ওই ছিলেন। পলিটব্যুরোর দুই সদস্য, সূর্যকান্ত মিশ্র ও মহম্মদ সেলিমের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলা হয়। ওই বৈঠকে উপস্থিত সংখ্যাগরিষ্ঠ পলিটব্যুরো সদস্যই সীতারাম ইয়েচুরিকে সাংসদ করতে রাজি হননি৷
ওদিকে, শনিবারই কলকাতায় ‌রাজ্যসভা ভোটবঙ্গ- নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের সঙ্গে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর আলোচনা হয়েছে। বিমানবাবুকে সোমেন মিত্র নাকি বলেছেন, প্রার্থী ঠিক করা নিয়ে সিপিএম যেন এবার সরাসরি কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের সঙ্গেই কথা বলে৷ কারণ, রাজ্যসভা নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই পুরোপুরি হাইকম্যান্ডের হাতে। প্রদেশ কংগ্রেসের এ ব্যাপারে কিছু করার নেই৷
———-

Previous articleসেই পুরনো শচীন-শেহবাগ জুটি
Next article“দেশকে গর্বিত করো”, নারী দিবসে মহিলা বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে শুভেচ্ছা বার্তা মমতার