আসন্ন রাজ্যসভা নির্বাচনে ইতিমধ্যেই নিজেদের নিশ্চিত ৪টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রকৃত নির্বাচন হবে পঞ্চম আসনে। যেখানে চার প্রার্থীকে জেতানোর পর আরও কিছু সংখ্যা হাতে থাকবে তৃণমূলের, যা ঘোলা জলে মাছ ধরার পক্ষে যথেষ্ট। কিন্তু বাম-কংগ্রেস কোনও ভাবেই রাজ্যের শাসক দলকে সেই সুযোগ দিতে চায় না। তাই রাজ্যবাসী ও নিজেদের হাইকমান্ডের কাছে জোরদার জোট বার্তা দিতে চায় রাজ্য বামফ্রন্ট ও প্রদেশ কংগ্রেস। তাই রাজ্যসভার প্রার্থী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় অন্দর মহলে মতানৈক্য হলেও তা যেন কোনওভাবে বাইরে না আসে সেই চেষ্টাই চালাচ্ছে বাম-কংগ্রেস।

আর সেখানেই তাল কেটেছেন বাম বিধায়ক আলী ইমরান, যিনি ভিক্টর নামেই জনপ্রিয়। উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়ার ফরওয়ার্ড ব্লকের এই জনপ্রিয় বিধায়ক সম্প্রতি রাজ্যসভার প্রার্থী নিয়ে সিপিআই নেতা কানাইয়া কুমারের নাম প্রস্তাব করেন ফ্রন্টের অন্দরে। কিন্তু বড় শরিক সিপিএম একেবারেই তাতে রাজি হয়নি। এবং কানাইয়াকে নিয়ে কোনওরকম আলোচনাহবেও না বলে সাফ জানানো হয়েছে ভিক্টর ও অন্য শরিক নেতাদের।

এই মুহূর্তে রাজ্য বিধানসভার সর্বকনিষ্ঠ বিধায়ক ভিক্টর এই ইস্যুতে ঘনিষ্ঠ মহলে সিপিএমের দাদাগিরি জন্য ক্ষোভ প্রকাশ এবং অপমানিত বোধ করেন। জানা গিয়েছে, ভিক্টরের ইচ্ছা ছিল, একবার অন্তত আলোচনায় আসুক কানাইয়ার নাম। কিন্তু সিপিএমের সরাসরি খারিজ করে দেওয়াটা ভালভাবে নেয়নি ভিক্টর। আবার ভিক্টরের আচরণ ভালো নজরে নেয়নি সিপিএম। এবং তখন থেকেই ফ্রন্টের মধ্যে ভিক্টরকে কোণঠাসা করা শুরু হয়ে যায়। সম্প্রতি, MLA হোস্টেলের ক্যান্টিনে গণ্ডগোল করে আরও ব্যাকফুটে ভিক্টর।

প্রসঙ্গত, এই মুহূর্তে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় যুবনেতা জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সভাপতি কানাইয়া কুমার। নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহের কট্টর বিরোধী বলে পরিচিত কানাইয়া। শিক্ষিত-মার্জিত-সুবক্তা কানাইয়া নতুন প্রজন্মের হার্ট থ্রব বলা চলে। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা কানাইয়ার সৃষ্ট “আজাদী” স্লোগানে মুখর। যা কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের NRC-CAA বিরোধী মুভমেন্টে ট্যাগ লাইনে পরিণত হয়েছে, বিশেষ করে ছাত্রযুবদের মধ্যে। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনেও বিহারের বেগুসরাই থেকে সিপিআই-এর হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন কানাইয়া। যদিও হারতে হয়েছিল তাঁকে। তবে দেশের তাবড় রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন কানাইয়ার মধ্যে জননেতা হয়ে ওঠার সমস্ত গুণ রয়েছে।

সেই “গান্ধীবাদী” সিপিআই যুবনেতা কানাইয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক ভিক্টরের। ভিক্টরের ডাকে কলকাতা ও রাজ্যে NRC-CAA বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন কানাইয়া। এদিকে কানাইয়াকে দারুন পছন্দ করেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতারাও। তাছাড়া দল অন্য হলেও সোনিয়া-রাহুলের গুড বুকেও আছেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক্তনী। তাই হয়তো ভিক্টর ভেবেছিলেন কানাইয়ার নাম উত্থাপন করলে তা আলোচনায় রাখতে পারে “বড় দাদা” সিপিএম। কিন্তু তাঁর ধারণা যে ভুল, তা প্রমাণ হয়ে গেল। আসলে বঙ্গের সিপিএম আছে সিপিএমেই। তারা ভাঙবে তবু ছোট শরিকদের সামনে মচকাবে না। পাছে রাশ আরও আলগা হয়ে যায়।

কানাইয়ার নাম আলোচনার টেবিলে আসার আগেই তা খারিজ হওয়ার অন্য একটি কারণ হলো, সিপিএমের বঙ্গ ব্রিগেড কখনোই চায় না, টিমটিম করে জ্বলতে থাকা তাদের “শেষ সম্বল”-এ যেন ভাগ না বসায় কানাইয়ার জনপ্রিয়তা। তাছাড়া কানাইয়া যে সিপিএমের কথায় উঠতে বললে ওঠা কিংবা বসতে বললে বসার পাত্র নয়, তা আলবাদ জানে আলিমুদ্দিন। কানাইয়া যতবার এরাজ্যে এসেছেন, ততবারই সিপিএমের পক্ককেশী নেতাদের পরোক্ষে কটাক্ষ করেছেন। এবং সেটা যুক্তি দিয়ে, তথ্য দিয়ে, পরিসখ্যান দিয়ে।

সুতরাং, কানাইয়া নামক “বাঁশ”কে ঘরে না ডেকে ঝারেই রাখাটা নিরাপদ বলে মনে করছে সিপিএম। আর ভিক্টর যাতে বিষয়টি নিয়ে বেশি নাড়াচাড়া না করে সেজন্যই তাকে আপাতত এড়িয়ে চলছে ফ্রন্টের দাদারা।
