ইয়েস ব্যাঙ্কের ভরাডুবির জন্য কেন দায়ী করা হচ্ছে রানা কাপুরকে, জানেন ?

ব্যাঙ্ক কেলেঙ্কারির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন ইয়েস ব্যাঙ্কের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, প্রাক্তন সিইও রানা কাপুর ।

ইয়েস ব্যাঙ্কের যে দেউলিয়া পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং তার জন্য লাখ লাখ গ্রাহকের মাথায় হাত পড়েছে। এর নেপথ্যে উঠে আসছে রানা কাপুরের কিছু সিদ্ধান্তের কথা। কিন্তু জানেন কী যে কে এই রানা কাপুর ? কী ভাবে তিনি ইয়েস ব্যাঙ্কের কর্ণধার হয়ে উঠলেন ?
১৯৫৭ সালে দিল্লিতে স্বচ্ছল পরিবারে জন্ম রানা কাপুরের। ১৯৭৩ সালে দিল্লির ফ্রাঙ্ক অ্যান্টোনি পাবলিক স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করেন।
এরপর ১৯৭৭ সালে শ্রী রাম কলেজ অব কমার্স থেকে স্নাতক হয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য চলে যান নিউ জার্সিতে। সেখানে রুটগার্স ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন।


তাঁর ব্যাঙ্কিং কেরিয়ার শুরু হয় ১৯৮০ সালে। প্রথমে ম্যানেজমেন্ট ট্রেনি হিসাবে ব্যাঙ্ক অব আমেরিকায় যোগ দিয়াছিলেন তিনি। ১৬ বছর এই ব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
১৯৯৫ সালে তাঁর সামনে একটা বড় সুযোগ নিয়ে ভারতে আসে রাবোব্যাঙ্ক।
১৯৯৭ সালে রাবোব্যাঙ্কের সাহায্যে প্রথমে তিনি এবং তাঁর শ্যালক একটি নন-ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল কোম্পানি তৈরি করেন। ২০০৩ সালে তাঁরা তাঁদের সমস্ত শেয়ার বিক্রি করে দেন এবং সেই টাকায় ইয়েস ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা করেন। ইয়েস ব্যাঙ্কে রানা কাপুরের ২৬ শতাংশ, অশোক কাপুরের ১১ শতাংশ এবং রাবোব্যাঙ্কের ২০ শতাংশ শেয়ার ছিল।
২০০৮ সালে ২৬/১১ সন্ত্রাসবাদী হামলায় অশোক কাপুরের মৃত্যু হয়। এর পর বোর্ড ডিরেক্টর কে হবেন তা নিয়ে অশোক কাপুরের স্ত্রী এবং রানা কাপুরের মধ্যে দীর্ঘ আইনি যুদ্ধ চলেছিল।


২০১৮ সাল নাগাদ রানা কাপুরের কিছু ভুল সিদ্ধান্তের জেরে ইয়েস ব্যাঙ্কের শেয়ার হু হু করে পড়তে শুরু করে। এর পরই ২০১৯ সালে ৩১ জানুয়ারি রানাকে সিইও পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। তারপর সিইও হন রভনীত গিল।
রানা কাপুরের তিন মেয়ে। রাধা, রাখি এবং রোশনী। ২০১৮ সালে মুম্বইয়ে ১২৮ কোটি টাকা ব্যয় করে একটি বিলাসবহুল বাড়ি কেনেন রানা। ঠিক মুকেশ অম্বানীর বাড়ির পাশেই তাঁর বাড়ি।
তাঁর মেয়ে রাখি কাপুর আইপিএলে একসময় দারুণ নজর কেড়েছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো ভাইরাল হয়ে গিয়েছিলেন সুন্দরী এই কন্যা। এ ছাড়াও তিনি ছিলেন ইয়েস ব্যাঙ্কের ম্যানেজিং ডিরেক্টর। আর এক মেয়ে রাধা কাপুর মুম্বইয়ের ইন্ডিয়ান স্কুল অব ডিজাইন অ্যান্ড ইনোভেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর।
অভিযোগ, ২০১২ সালে রানা কাপুর ইয়েস ব্যাঙ্কের যে ইতিহাস প্রকাশ করেছিলেন তাতে কোথাও উল্লেখ ছিল না অশোক কাপুরের নাম। আসলে আইনি লড়াই শেষে
২০১৫ সাল থেকেই পুরো ব্যাঙ্কের দখল চলে যায় রানা কাপুরের হাতে। অভিযোগ, এই সময় থেকেই  ঋণ দেওয়ার হার বাড়িয়ে দিয়েছিল ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক সংস্থাকে ঋণ দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ।
ইডি সূত্রের বক্তব্য, রানা ইয়েস ব্যাঙ্কের শীর্ষ পদে থাকার সময় এমন বহু সংস্থাকে ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছিল, যারা লোকসানে ডুবে রয়েছে। ঋণ শোধ না-হওয়ার আশঙ্কা সত্ত্বেও মূলত রানার নির্দেশেই ব্যাঙ্কের কর্তারা ঋণ মঞ্জুর করেন।
বিনিময়ে ওই সংস্থাগুলি রানা, তাঁর স্ত্রী ও তিন কন্যার মালিকানাধীন বিভিন্ন সংস্থায় টাকা ঢেলেছিল। অভিযোগ, এই ভাবে ইয়েস ব্যাঙ্কে আমজনতার সঞ্চয়ের টাকা ঘুরপথে রানা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সিন্দুকে চলে যায়। তল্লাশিতে দাউদ-যোগেরও প্রমাণ পেয়েছে ইডি।
২০১৮ সাল থেকেই ক্ষতির মুখ দেখে ইয়েস ব্যাঙ্ক। সেই সময় থেকেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া ইয়েস ব্যাঙ্কের ওপর নজর রাখতে শুরু করে।
১ জানুয়ারি, ২০১৯- ইয়েস ব্যাঙ্কের প্রধান রানা কাপুরকে  সরে যাওয়ার নির্দেশও দেয়। রানা কাপুরও সরে যান। কিন্তু তারপরেও ডরাডুবির হাত থেকে রক্ষা করা যায়নি ইয়েস ব্যাঙ্ককে।

Previous articleরাজ্যসভা: তৃণমূলের মতোই বাম-কংগ্রেসের প্রার্থী বিকাশের নাম মিলিয়ে দিলো বিশ্ববাংলা সংবাদ
Next articleহোলিকা দহনে মুম্বইবাসী এবার জ্বালিয়ে দিলো ‘করোনাসুর’-কেই