বিজেপিতে ন্যূনতম মর্যাদাও নেই, তৃণমূলে ফিরতে চান মুকুল- সঙ্গীরা

নাঃ! এবারও বিজেপি রাজ্যসভা দিল না মুকুলকে

নতুন দলে স্বীকৃতির তো প্রশ্নই নেই, ন্যূনতম মর্যাদাটুকুও নেই৷

অথচ অনেক আশা নিয়ে মুকুল রায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে দল ছেড়েছিলেন বেশ কিছু পুরনো তৃণমূল নেতা-কর্মী৷ ‘দাদা’-র কথায় নাম লেখান বিজেপিতে৷ ওদিকে নেই নেই করেও কেটেছে প্রায় ৩ বছর৷ এই সময়কালে নতুন দল বিজেপিতে পুরনো এই তৃণমূল নেতা-কর্মীদের কার্যত কেউ পাত্তাই দিচ্ছে না৷
তার ওপর এই নেতা-কর্মীরা চোখের সামনে দেখছেন, তৃণমূলের একদা সেকেণ্ড-ইন-কম্যাণ্ড মুকুল রায়ের মতো নেতাকেই কার্যত মাঠের ধারে বসিয়ে রেখেছে বিজেপি৷ মুকুল রায়ের কপালে জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য পদ ছাড়া এখনও পর্যন্ত আর কিছুই জোটেনি। অথচ বার বার বাঘের মুখে তাঁকেই ফেলা হচ্ছে৷ মুকুল বিজেপিতে যোগ দিয়েই তৃণমূল ভাঙার প্রক্রিয়া জবরদস্তভাবে চালু করে দিয়েছিলেন৷ ফলও মিলছিলো৷ একের পর এক পুরসভা হাতছাড়া হচ্ছিলো তৃণমূলের ৷ একাধিক বিধায়কও গেরুয়া-শিবিরে নাম লেখাচ্ছিলেন৷ ঠিক সেই সময়ই রাশ টেনে ধরা হয় মুকুলের৷ বন্ধ হয় দলবদল৷ সেই দায়িত্ব নেন বঙ্গ-বিজেপির সভাপতি স্বয়ং৷ ইতিমধ্যেই যে সব নেতা-বিধায়ক- কাউন্সিলর মুকুল রায়ের হাত ধরে বিজেপিতে সামিল হয়েছেন, ধরে নেওয়া হয় এরা সবাই মুকুলের ‘লোক’৷ তাঁদের প্রতি ‘নজর’ কমিয়ে দেয় বিজেপি৷ ওদিকে তৃণমূলের স্থানীয় চাপ বাড়তে থাকে৷ এদিকে মুকুল রায় এবং তাঁর সঙ্গেই দলবদল করে বিজেপিতে আসা নেতা-কর্মীদের নিধিরাম সর্দার করে দেওয়া হয়েছে৷ তৃণমূল ছেড়ে যারা বিজেপিতে যোগ দিলেন, তাদের ন্যূনতম ‘প্রোটেকশন কেউ দিলো না৷ ফলে এরা দলে দলেই ফিরে গেলো পুরনো দলে৷ হাতছাড়া হওয়া পুরসভাগুলিও পুনর্দখল করে নিলো তৃণমূল৷ মুকুলের উদ্যোগে ঠাণ্ডা জল ঢেলে দিলো বিজেপি৷

লোকসভা নির্বাচনে যথেষ্ট পরিশ্রম করেছেন মুকুল অ্যাণ্ড কোম্পানি৷ ১৮ আসন লাভের পর সব কৃতিত্ব খেয়ে নেয় বিজেপির আদি নেতারা৷ অথচ এই নেতাদের সিংহভাগ জানেনই না ভোট কীভাবে করতে হয়৷ নির্বাচন পরিচালনার প্রশ্নে এরা মুকুলের নখের যোগ্যও নয়৷ কিন্তু তারাই দলে হিরো’র মর্যাদা পেলেন ৷ মুকুল-কোম্পানি থাকলো তস্য পিছনের সারিতে৷

আসন্ন পুরসভা ভোটে বঙ্গ-বিজেপি ফের বাঘ মারতে ‘শত্রু’-কেই পাঠিয়েছে৷ নির্বাচন কমিটি হয়েছে ৫৭ জনের! তার আহ্বায়ক মুকুল রায়৷ পুরভোটে যে উল্লাস করার মতো ফলাফল হবেনা, তা বিজেপি জানে৷ তাই কাঁধও আগেই স্থির করে রেখেছে৷ নির্বাচন কমিটির আহ্বায়ককেই যে ভোটে খারাপ ফলের জন্য কাঠগড়ায় তোলা হবে, এটা নিশ্চিত ৷ কিন্তু মুকুলের হাতে কোনও ক্ষমতাই দেওয়া হয়নি৷ ক্ষমতা থাকলেই যে মুকুল ম্যাজিক দেখাতেন, এমন একেবারেই নয়৷ তবু মুকুল ও তাঁর অনুগামীরা নতুন দলে সামান্য হলেও সম্মান ও স্বীকৃতি পেতেন! সে দরজাতেও একাধিক তালা ঝুলিয়েছেন রাজ্য নেতারা৷ সব মিলিয়ে, মুকুল রায়ই যেখানে বিজেপিতে ক্রমশ প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছেন, সেখানে তাঁর অনুগামীরা যে এক পয়সারও সম্মান ও স্বীকৃতি পাবেন না, প্রতি পদেই তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷

এসব সঙ্গত কারনেই
বিজেপিতে মুকুল রায়ের ডাকে সামিল হওয়া অনুগামীরা হতাশ, বিভ্রান্ত৷ সামনে পুরভোট৷ এই ভোটে ঘরে বসে ভোট দেখা ছাড়া অন্য কাজ বিজেপি দেবেনা৷ তেমন হলে এলাকায় এতদিন ধরে গড়ে তোলা ইমেজ ধ্বংস হবে৷ এনারা পাশাপাশি এটাও জানেন, মুকুলের ‘ঘর-ওয়াপসি’ অসম্ভব হলেও, তাঁদের ঘরে ফেরায় তেমন আপত্তি তৃণমূলে উঠবেনা৷
তাই বিজেপিতে যোগ দেওয়া তৃণমূল নেতা-কর্মীরা শুরু করে দিয়েছেন তৃণমূলে ফেরার চেষ্টা৷ তৃণমূল ‘পুরনো কর্মীদের’ মর্যাদা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করায় এই নেতা-কর্মীরা একটু আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন৷ বিজেপিতে যোগ দেওয়া মুকুল-অনুগামীরা বিকল্প ভাবছেন৷ বিজেপির হয়ে পুরভোটে নেমে নতুনভাবে শাসকদলের কোপের মুখেও পড়তে চাইছেন না এই নেতাকর্মীরা। মুকুল-অনুগামী প্রাক্তন তৃণমূলীদের অনেকেই পুরনো দলের নেতা-বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করতে শুরু করেছেন। আর তৃণমূলে যদি এখনই সেভাবে ঠাঁই না মেলে, সেক্ষেত্রে বিজেপিতে নিষ্ক্রিয় হয়েই থাকতে চাইছেন তারা৷ তাতে একদিকে তৃণমূলকে ইতিবাচক বার্তা দেওয়া যাবে, অন্যদিকে থানা-পুলিশের হাত থেকেও রেহাই মিলবে৷

বিজেপির অভ্যন্তরের মুকুল-অনুগামীরা এই মুহুর্তে যে লাইনে ভাবছেন, তাতে পুরভোটের মুখে কিছুটা হলেও ধাক্কা খাবে গেরুয়া শিবির। এবং এই ধাক্কা খাওয়ার পরিবেশ- পরিস্থিতি বিজেপির নেতারাই ‘সযত্নে’ তৈরি করেছেন৷

Previous article২২ কং বিধায়কের ইস্তফা, লাইনে আরও?
Next articleমমতার দরাজ প্রশংসায় বিজেপি সাংসদ রূপা