চেনা পৃথিবীর ওপারে

ভূত বিশ্বাস বা অবিশ্বাসে আপনার ব্যাক্তিগত স্বাধীনতা ছিল, আছে, থাকবে। তবে কি জানেন শহর কলকাতাতেই এমন কিছু জায়গা আছে, যেখানে ঘটে যাওয়া ঘটনা আপনাকে ভাবাবে। তবে কি আমাদের পৃথিবীর মধ্যে রয়েছে অন্য আর এক পৃথিবী! আপনার চারপাশে অন্য এক স্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছে অবয়বহীন অস্তিত্বরা!!!!

খিদিরপুর বন্দর
মল্লিকদের ঘাট

ভূত নিয়ে ভূতলামি নেই এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কেউ ইচ্ছে করে বিশ্বাস করেন না। আবার কারও ঝুলিতে রয়েছে ভূত দেখার ডজন ডজন গল্প। আপনার বিশ্বাস থাকতেই হবে যদিও তার কোনও মাথার দিব্যি দেওয়া নেই, তবে তেনাদের উপস্থিতি নিয়ে আলোচনা, তরকারিতে নুনের মতনই মানানসই। কলকাতাতেও ভূতদের উপস্থিতি নিয়ে নানান গল্প কথা আছে। তবে তা গল্প বলে মানতে নারাজ ভূতবিশ্বাসী অনেকেই। দু-চারটি উদাহরণ তুলে ধরলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। যেমন ধরুন হাওড়ার ব্রিজের ঠিক তলায় জেনানাদের স্নান ঘাট বা মল্লিকদের ঘাট। এমনিতে ভূতুড়ে বলে বোঝার কোনও উপায়ই নেই । কিন্তু অনেকে বলেন এখানে অনেক কিছুই ঠিক যেন স্বাভাবিক নয়। মানে ধরুন আপনি গঙ্গাপারে,সূর্যটা নিভুনিভু। একটু শিরশিরে হাওয়া, অদ্ভুত অচেনা একটি গন্ধ। হঠাৎ দেখলেন গঙ্গায় কেউ ডুবছে। আপনি পড়িমরি করে ছুটে গেলেন জলের দিকে…। কোথাও কিছু নেই। পুরোটাই কি আপনার মনের ভুল… নাকি কেউ ছিল ওখানে ? আবার উত্তর কলকাতার হরচন্দ্র লেনের ২২ নম্বর বাড়িটি।পরিচিত নাম পুতুল বাড়ি। এককালে এর জৌলুশ যে চোখে পড়ার মতন ছিল তা এর বাইরের দেওয়ালেই পরিষ্কার। পুতুলবাড়ি কীভাবে ভূতুড়ে হল তার সঠিক কোনও তত্ত্ব নেই। কিন্ত অনেকেই নাকি নিকষ অন্ধকারে এই বাড়িতে ভূতুড়ে অনুভূতির মুখোমুখি হয়েছেন। নুপুরের শব্দ, মহিলাদের আর্ত চিৎকার, হঠাৎ করে কানের কাছে ফিসফিসানি… গল্প বলে এক কালে অনেক মানুষকেই নাকি গুম খুন করা হয়েছে এই বাড়িতে। বাবু কালচারে সতীত্ব নষ্ট করে গলা টিপে খুন করা হয়েছে বহু মহিলার। তবে কি তারা এখনও আছেন অতৃপ্ত অবস্থায়? লক্ষ্ণৌএর মসনদচ্যুত করার পর কলকাতায় ঠাঁই নিয়েছিলেন নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ। খিদিরপুর ডকেই প্রথম পা রেখে ছিলেন তিনি। আজও মাথার ওপর চাঁদ উঠলে আচমকা দেখা যায় ছায়া মানব। শোনা যায় এখনও নাকি ব্রিটিশদের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার আকাঙ্ক্ষায় খিদিরপুর ডকে ঘুরে বেড়ায় নবাবি আত্মা। অবয়ব হীন অস্তিত্বরা জানান দিচ্ছে শহর জুড়ে। কখনও নাগের বাজার ফ্লাই ওভারে ছায়ামানবী রূপে, আবার কখনও বা রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশনে, অস্ফুট কোনও এক চরিত্র রূপে। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মাঝের পার্থক্যটা চুল ব্যাসার্ধ সুতোর মতন। প্রশ্নটা সনাতন। ভূত আছে অথবা নেই। অদেখা ভগবানে বিশ্বাস থাকলেও কৌলিন্য না থাকার জন্য ভূতের ক্ষেত্রে অবিশ্বাস অনেকেরই। কিন্তু ন্যশনাল লাইব্রেরির ময়দানে অশ্বারোহীর অস্তিত্ব, বিষাদ ভরা সুরেলা সঙ্গীত…সবটাই কি গল্প কথা? কিংবা মিউজিয়ামের পাশের রাস্তায় মধ্যরাতে হঠাৎ চিৎকার ? পার্কস্ট্রিটের কবরস্থানে প্রতি সন্ধ্যায় ও কাদের ফিসফিসানি? প্রশ্নটা কি অতই সহজ? আমাদের পৃথিবীর মধ্যে নেই তো অন্য কোনও পৃথিবী ? আপনার অস্তিত্বের ওপারে শুধুই কি শূন্য ?

ন্যাশনাল লাইব্রেরি
পুতুল বাড়ি
পার্ক স্ট্রিট কবরস্থান

আরও পড়ুন-ইতিহাসের বাংলা ঘড়ি, ভীম নাগের দোকানে

Previous articleচিনে করোনা’র ‘সাইড- এফেক্ট’! গৃহবন্দিত্বের জেরে বেড়ে চলেছে বিবাহবিচ্ছেদ
Next articleউন্নয়নমূলক কাজে ঢিলেমি বরদাস্ত নয়: অনুব্রত