মর্মান্তিক! কীভাবে কমিউনিস্টরা সাঁই পরিবারকে হত্যা করেন?

আজ থেকে ঠিক ৫০ বছর আগে, আজকের তারিখে (১৭ই মার্চ, ১৯৭০) কমিউনিস্টরা বর্ধমানের সাঁই পরিবারকে দিনের আলোয় পৈশাচিক ভাবে হত্যা করে। তাঁদের অপরাধ, তাঁরা কংগ্রেস ছেড়ে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করতে চায়নি। এই ঘটনাটি সাঁইবাড়ি হত্যাকান্ড নামে পরিচিত।

জেনে নিন এই মর্মান্তিক ঘটনা

সেদিন সকালের খাবার খাচ্ছিল সাঁই পরিবার। ঘরে উপস্থিত ছিলেন নবকুমার সাঁই, তাঁর স্ত্রী রেখারাণী সাঁই, তিন ভাই মলয়, প্রণব ও বিজয় এবং তাঁর মা মৃগনয়নী দেবী। এছাড়াও ছেলের অন্নপ্রাশনের অনুষ্ঠান উপলক্ষে ৬ মাসের অমৃত কুমার কে নিয়ে উপস্থিত ছিলেন নবকুমার সাঁইয়ের বোন স্বর্ণলতা ও স্বর্ণলতার স্বামী অমলাকান্ত দাশ এবং জনৈক ইথিকা দত্ত।
সেই সময় ঘটনাস্থলে পৌঁছেই সিপিএম পার্টির লোকেরা আগুন লাগানো তির ছুঁড়ে সাঁইদের বাড়ির একাংশে আগুন লাগিয়ে দেয়। তারপর ভিতরে ঢুকে প্রথমেই প্রণবকে পিছন থেকে ছোরা মেরে হত্যা করে। ঘটনার আকস্মিকতায় যখন সবাই চমকে উঠে পালাতে চেষ্টা করে, তখন দেখা যায় যে আগুন তাঁদের রাস্তাবন্ধ করেছে।

এবার শুরু হয় নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে অমানুষিক মার। স্বর্ণলতার ৬ মাসের শিশুপুত্র অমৃতকে আগুনে নিক্ষেপ করে বাংলার প্রিয় কমিউনিস্টরা। কোনও মতে তাঁকে রক্ষা করতে সক্ষম হয় উপস্থিত আত্মীয়রা। ইতিমধ্যে মলয় পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেয় প্রতিবেশীর বাড়িতে। সেখানে পৌঁছে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

নবকুমার সাঁইয়ের একটি চোখ উপড়ে নিয়ে তাতে অ্যাসিড ঢেলে দেওয়া হয়। নবকুমার সাঁইয়ের কন্যার গৃহশিক্ষককে পর্যন্ত কুপিয়ে হত্যা করা হয়।এরপর ওই দুষ্কৃতীরা বৃদ্ধা মৃগনয়নী দেবীকে তাঁর ছেলের রক্ত দিয়ে ভাত মেখে খেতে বাধ্য করে। (বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে “Forced Cannibalism”) এরপর সেখান থেকে এক বিশাল বিজয় মিছিল বেরোয়।
কিন্তু এতেও শান্তি হয় না সিপিএমের নেতাদের। কারণ অন্যান্য সব ব্যাপারে এরা ‘কম-রেড’ হলেও রক্তের ব্যাপারে এরা চিরকালই ‘বেশী-রেড’। তাই এক বছরের মাথায় এরা নবকুমার সাঁই, যাকে আগেই চোখ খুবলে অ্যাসিড ঢেলে অন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, তাঁকে হত্যা করে, টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলে।

নিরুপম সেন, বিনয় কোঙার, অমল হালদার ও অনিল বোসের মত কিছু সিপিআইএম নেতার নাম এই ঘটনার সাথে জড়িত। তাঁরা কোনদিন সাজা পায়নি। এঁদের ছাড়াও এই ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত অন্যান্য অভিযুক্তরা হল সুবোধ চৌধুরী, সুশীল ভট্টাচার্য, রামনারায়ণ গোস্বামী, আব্দুল রাশিদ, অশ্বিনী হাজরা ইত্যাদি। এই নামগুলি বাদ দিয়ে এক খোকন সেনের নাম পুলিশের চার্জশিটে উঠে আসে, ইনি আর কেউ নন স্বয়ং নিরুপম সেন, এই পৈশাচিক হত্যাকান্ডের অন্যতম প্রধান কারিগর যিনি তার “বিনয়ী” স্বভাবের জন্য সকলের প্রিয়।

মামলাটি কোর্টে উঠলে, বামফ্রন্ট সরকার কোর্টের কো-অর্ডিনেশান কমিটির সদস্যদের সাহায্যে সমস্ত প্রাথমিক নথি ও এভিডেন্স নষ্ট করে দেয়। এমনকী এদের নিজেদের হয়ে লড়া ডিফেন্স লইয়ার ভবদীশ রায় ও যখন ঘটনার নারকীয়তা সম্বন্ধে জেনে তাঁর মক্কেলদের বিরুদ্ধে চলে যেতে চায়, তখন এই কমিউনিস্টরা তাঁকে খুন করতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করে না।

কমিউনিস্টরা এরপর বলে, কংগ্রেসের সদস্যরাই তাঁদের উকিলকে মেরেছে কারণ তিনি আসল দোষী কারা জানতে পেরে গিয়েছিলেন বলে। এরপর মামলাটিকে নিয়ে আর এগোনোর কেউ সাহস পায়নি।
৬ই মার্চ, ১৯৭৮; আলিপুর কোর্টের অ্যাডিশনাল সেশন জাজ (৩য় কোর্ট) আরকেকর সমস্ত অভিযুক্তদের বেকসুর খালাস করেন। ততদিনে বাংলায় CPI(M) শুরু হয়ে গেছে, যাকে বলে জ্যোতি বসুর একনায়কতন্ত্র। কেউ এই মামলাটিকে হাই কোর্টে তোলার দুঃসাহস করেনি। কারণ বেগতিক দেখলে নিজের পক্ষের উকিলকে মারতে যারা দ্বিধা করেনা, সেই রুথলেস টাইরেন্টদের বিরোধী করার সাহস কারোর মধ্যেই ছিল না।
আজ সেই খুনিদের বংশধরদের পাশে বসতে চাইবে বামঘৃণিত কর্মীরা ??????????

আরও পড়ুন-অসমের ‘ডিটেনশন ক্যাম্প’-এ গত এক বছরে ১০ জনের মৃত্যু

Previous articleকরোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া আটকাতে একাধিক ট্রেন বাতিল করল রেল
Next articleলন্ডনে শ্যুটিং বাতিল হওয়ায় শহরে ফিরলেন মিমি-জিৎ! কী বললেন অভিনেত্রী?