Saturday, November 15, 2025

মমতাদির জীবনের অন্যতম সেরা পারফরমেন্স, কোনো কথা হবে না।কুণাল ঘোষের কলম

Date:

Share post:

কুণাল ঘোষ

কিছু বিষয়ে ভিন্নমত থাকতে পারে।

অনেকে অনেক ব্যাপারে সহমত হবেন না।
কিছু ক্ষেত্রে সমালোচনা বা বিরোধিতাও অস্বাভাবিক নয়।

কিন্তু একজন সাংবাদিক ও রাজনীতিসচেতন নাগরিক হিসেবে, তিন দশকের বেশি সময় মমতাদিকে কাছ থেকে দেখার পর আমার স্থির বিশ্বাস, করোনা নিয়ে 30/3/20 সোমবার মমতাদির জেলাওয়াড়ি প্রশাসনিক বৈঠকটি তাঁর জীবনের অন্যতম সেরা পারফরমেন্স।

জাস্ট কোনো কথা হবে না।

একজন নেতা বা নেত্রী কোন উচ্চতায় পৌঁছলে এই পর্যায়ের আত্মবিশ্বাসী বৈঠক করা যায়।

প্রতিটি জেলার সঙ্গে ভিডিও বৈঠক।
বোঝা গেল, প্রতিটি জেলার প্রতি এলাকা, হাসপাতালের অবস্থান ও অবস্থা, মানুষের প্রয়োজন, বেসরকারি হাসপাতাল, অন্য সরকারি আবাসন, এমনকি হোটেলও মমতাদির মুখস্থ।

বেড বাড়ানোর প্রশ্নে কোথা থেকে বাড়তি কাঠামো নিতে হবে, তিনি এমনভাবে বলেছেন, জেলার কর্তারাও অবাক। জেলা, সাবডিভিশন ধরে ধরে জায়গার নাম, করণীয় বলেছেন তিনি। ভাবা যায় না।

একজন রাজনীতিবিদ দীর্ঘদিন বাংলার সব প্রান্ত না চষে ফেললে এটা সম্ভব না।

মমতাদি যে গতিতে ও দক্ষতায় নতুন অস্থায়ী হাসপাতাল কাঠামো তৈরির কথা বলেছেন, তাতে শুধু ভূগোল জানলে হবে না, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতায় ভরপুর থাকতে হবে।

ঝাড়গ্রামে স্থানীয় ভাষায় প্রচারের কথা বলেছেন; উত্তরের জেলার সীমানায় গুরুত্বপূর্ণ এলাকার কথা বলেছেন- অর্থাৎ কোন জেলার কোথায় কী ওষুধ, ওঁর মুখস্থ।

অধিকাংশ অফিসারকে নামে চেনেন। নামে ডাকেন। এনিয়ে ইতিউতি বিতর্ক আছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর কী অনায়াস নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব। জরুরি এলাকায় কোথায় দায়িত্বভাগ দরকার এবং কাকে পাঠালে ভালো হয়; এমনকি কে পারবে না, সব তাঁর নখদর্পণে।

কী অসাধারণ সংবেদনশীলতায় বললেন,” ওসি ভার্মা কে আছে? ওকে বলো মানুষের সঙ্গে ঠিক ব্যবহার করতে। কড়াকড়ি চাই। বাড়াবাড়ি নয়।”
কোন্ এলাকায় পুলিশের কোন্ অফিসারের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ, তিনি জানেন এবং প্রকাশ্যে দাওয়াই দেন।

প্রশাসক যদি এতটাই উচ্চতায় নিজেকে নিয়ে যেতে পারেন, প্রশাসনিক কর্তারা প্রভাবিত হতে বাধ্য। কাজ ভালো হবেই।

2011তে পর প্রথম প্রশাসনিক বৈঠক দেখেছিলাম পুরুলিয়াতে। সোমবার তার এক শৈল্পিক সংস্করণ দেখলাম। আরও অভিজ্ঞ, আরও পরিণত, আরও ধারালো। এই মুখ্যমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে পার পেতে পারবেন না কোনো অফিসার।

মুখ্যমন্ত্রী? নাকি অভিভাবক? নাকি শিক্ষিকা?

দায়িত্বে বেঁধে দিয়েছেন আমলাকে,” একটা না খেয়ে মৃত্যু হলে তোমাকে ধরব।”

-” না, তুমি বুঝতে পারছো না। ওভাবে হয় না। দেখো আমি শিখিয়ে দিচ্ছি।”

এই অনবদ্য স্টাইলে আত্মবিশ্বাসী প্রশাসক স্পষ্ট।

আমলা বলছেন,” ম্যাম, অনেক সময় এমএলএদের চিঠিতে অসুবিধা হচ্ছে।”

-” কোনো এমপি, এমএলএর কথা শুনবেন না। যেটা আইনে আছে করবেন। বাড়াবাড়ি হলে বলবেন। দেখে নেব।”

এই মুখ্যমন্ত্রী এই যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কড়া প্রশাসক। দল নয়। সরকারি কাঠামো আগে।

আবার প্রতিমুহূর্তে মানবদরদী।
-” রেশনকার্ড না থাকলেও বা ভিনরাজ্যের শ্রমিক; এখানে যেন খাবার পায়।”

আবার জরুরি পরিষেবায় বীমা যখন বাড়িয়েছেন, ঝুঁকি নিয়ে কাজের উপেক্ষিত পেশাও সেই তালিকায় যোগ করেছেন অবলীলায়।

দীর্ঘদিন সরাসরি মানুষের মধ্যে থেকে কাজের ফলে যে অভিজ্ঞতা, তার সঙ্গে মিশেছে প্রশাসক মমতাদির সত্তা।

আমি বিরোধী নেত্রী লড়াকু মমতাদিকে দেখেছি। আমি রেলমন্ত্রী মমতাদিকে দেখেছি। আমি মুখ্যমন্ত্রী মমতাদিকে দেখেছি।

কিন্তু সোমবারের বৈঠকে দেখলাম যে মমতাদিকে, তিনি নেত্রী মমতাদি, মানুষের প্রতিনিধি মমতাদি ও সরকারের প্রধান মমতাদির এক সর্বোচ্চ পর্যায়ের মিলিত শক্তি।

অতি বড় সমালোচককেও মানতে হবে, এমন কঠিন সময়ে এমন দক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির রূপরেখা প্রদর্শন ও প্রশাসনকে সামনে থেকে নিজে নেতৃত্ব দেওয়া, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এই মুহূর্তে একমেবদ্বিতীয়ম্।

আবার বলছি, জাস্ট কোনো কথা হবে না।

করোনাযুদ্ধে বাংলা লড়ছে। লড়বে।
এমন অধিনায়ক মাঠে থাকলে, এই লড়াই প্রশাসন অনেক বেশি কার্যকর হয়ে উঠতে বাধ্য।
সব জায়গার এতদিনের সব ক্ষত রাতারাতি ঠিক হবে না; সব মানুষ সমান সচেতন নন; এই সব প্লাস মাইনাস আমাদের সমাজের স্বাভাবিক নিয়ম।

কিন্তু একজন অভাবনীয় নেতা নিজে অনেকটা ড্যামেজ কন্ট্রোল করার দূরদর্শিতা রাখেন।

আমি সেই মমতাদিকেই দেখলাম।

 

spot_img

Related articles

রবীন্দ্র সরোবরের ছয় ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি: সম্পূর্ণ আইনি পথে কর্পোরেশন

প্রায় পাঁচ দশক পর রাবীন্দ্র সরোবর চত্বরে অবস্থিত ছ’টি ক্লাবের সঙ্গে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক ভাড়ার চুক্তি করল কলকাতা...

বিহারে কমিশনের কারচুপি, তোপ অখিলেশের: ঘুরিয়ে কংগ্রেসকে কটাক্ষ ওমরের

বিহারে এসআইআর প্রয়োগ করে ভোটারদের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কংগ্রেস-আরজেডির (RJD) মহাজোটের এটাই ছিল বিহার নির্বাচনের মূল...

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী কে: ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট JD(U)-এর!

বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ২৪৩ টি আসনের মধ্যে বিজেপি ৮৯ আসনে জয়ী। নীতীশ কুমারের জেডিইউ জিতেছে ৮৫ টি আসন।...

জাদুসম্রাটের বাড়িতে বিয়ের আসর! বিজ্ঞাপন দেখে পাত্র পছন্দ মৌবনীর

জিনা বন্দ্যোপাধ্যায় জনে জনে বার্তা রুটি গেল ক্রমে, বিয়ে করছেন মৌবনী শীতের মরশুমে! মেয়ের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন পিসি সরকার, সেখান থেকেই পাত্র...