Friday, August 22, 2025

নিজামুদ্দিনের ঘটনা কী দেশের ‘নয়া কেলেঙ্কারি’ হবে! অভিজিৎ ঘোষের কলম

Date:

Share post:

অভিজিৎ ঘোষ

নিজামুদ্দিনের ঘটনা দেশে করোনার পরিস্থিতিকে ক্রমশ ঘোরাল করছে। এই নিজামুদ্দিন দেশের ‘অন্ধকূপ’ হবে না তো? বিশেষজ্ঞ মহল বলছে, নিজামুদ্দিন আগামিদিনে দেশের করোনা সংক্রমণের আঁতুড়ঘর হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

ইতিমধ্যে এই সভায় যাওয়া মানুষের মধ্যে তেলেঙ্গানায় ৬জন, কাশ্মীরে ও কর্নাটকে ১জনের মৃত্যু হয়েছে। যে আন্দামান নিকোবরে করোনার ‘ক’ ছিল না, সেই আন্দামান থেকে ১০জন গিয়েছিলেন নিজামুদ্দিনে। তার মধ্যে ৯জনই করোনায় আক্রান্ত। আরও আতঙ্কের বিষয় হলো এই বাংলা থেকে ৭০জন সেই নিজামুদ্দিনে গিয়েছিলেন। তাদের এখন খুঁজে পেতে মরিয়া রাজ্য প্রশাসন। পাওয়া গিয়েছে ১৬জনকে। পাঠানো হয়েছে কোয়ারান্টাইনে।

করোনার প্রকোপ যখন ইতালি, ফ্রান্স, স্পেনে ব্যাপক আকার নিয়েছে, তখন দিল্লির বুকে কম করে দশটি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে এই ধর্মসভা কী করে হলো? জবাব নরেন্দ্র মোদি আর অরবিন্দ কেজরিওয়ালকেই দিতে হবে। এই প্যান্ডেমোনিয়াম তৈরির কারণ তো তাঁরাই জানাবেন। মুখ্যমন্ত্রী কেন এই করোনার পরিবেশে তিন হাজার মানুষের জমায়েত হওয়ার অনুমতি দিলেন? আর ভিসা দিয়ে বেআইনিভাবে বিদেশের প্রতিনিধিরা কী করে ধর্মপ্রচার করলেন তা প্রধানমন্ত্রী জানাবেন তো!

এখানেই শেষ নয়, ১৫-১৭মার্চ এই জামাত হওয়ার পর হঠাৎ উধাও হয়ে গেলেন মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিরা। সেই সংখ্যাটা বিরাট। বিদেশি প্রতিনিধিদের অনেকে ধর্মস্থানের মধ্যে বেআইনিভাবে রয়ে গেলেন। এই অবস্থার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার কেন ফেলল? বিদেশি প্রতিনিধিদের পত্রপাঠ কেন বিদায় করা হলো না? ভিসার নাম ধরে ধরে তাদের বের করে দিলে এই কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের সম্ভাবনা কমত। জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার আগে তো এটাই দরকার ছিল।

আর কেজরিওয়াল সাহেব, দিল্লির হিংসা ছড়ানোর সময় তো বাড়িতে ঢুকে বসেছিলেন। ৫০-এর বেশি মানুষ মারা যাওয়ার পর মুখ খুলেছিলেন। এবারও তাই। জামাতে বিদেশিরা এসে করোনা ছড়ানোর পর তাদের ফেরানো, কোয়ারান্টাইনের কথা ভাবেননি। এখন লোক দেখানো মিটিং করে আয়োজকদের বিরুদ্ধে এফআইআর করার কথা বলেছেন। নির্লজ্জের মতো আচরণ। মূল অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাওয়ার পর ২৮মার্চ অবধি প্রায় দেড় হাজার মানুষ জমায়েত করে ছিলেন। বারবার চিঠি দিয়েছে দিল্লি পুলিশ। শুধু জমায়েত সরিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু লক ডাউনের পরেও কী করে এই জমায়েত রইল? নিজামুদ্দিন এলাকার বিধায়ক আপের, সাংসদ বিজেপির, আর পুরসভা বিজেপির। কে দায় এড়াবেন!

শাস্তির কথা বলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার এই চেষ্টা কেন? এতে কী সংক্রমন বন্ধ হবে? প্রত্যেকটি রাজ্য থেকে প্রতিনিধি ছিলেন। অসমে সবচেয়ে বেশি, ২১৬জন, পশ্চিমবমঙ্গের ৭৩জন। প্রত্যেকটি রাজ্যের প্রতিনিধিরা ফিরে গিয়েছেন। তারা তো সংক্রমণ ছড়াচ্ছেন। ৩৪০জন হাসপাতালে। তাদের কতজন পজিটিভ হবেন? দিল্লি পুলিশের দায়িত্ব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর কাছে কোনও উত্তর আছে কী? এটা তো আর যাই হোক কংগ্রেসের রাজত্বকালের সময় নয় যে তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে রেহাই দেওয়া যাবে। তাহলে? যেখানে জমায়েত হলো, তার ৫০মিটার দূরে পুলিশ থানা। তারা কী করোনাকে প্যারাসিটামল খাওয়া জ্বর মনে করছিলেন?

নিজামুদ্দিনের দৌলতে রাজ্যে রাজ্যে এই পরিস্থিতি অশনি সঙ্কেত হতেই পারে। গোষ্ঠী সংক্রমণের শুরুয়াৎ কী হয়ে গেল? আগামী এক সপ্তাহে পরিষ্কার হয়ে যাবে নিজামুদ্দিন ভারতে করোনা সংক্রমণের এপি সেন্টার হবে কিনা। সেদিন কিন্তু মোদি-অমিত-কেজরিওয়ালকেই জবাব দিতে হবে।

spot_img

Related articles

সোনা জয়ী অভিনবকে শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর

এশিয়ান শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপ জুনিয়র (Asian Shooting Championship) এয়ার রাইফেল বিভাগে বাংলার অভিনব সাউয়ের (Abhinaba Shaw)। তাঁর এই সাফল্যই...

পুজোর আগে রাজ্য পুলিশের শীর্ষস্তরে রদবদল! পরিবর্তন হল ৬ জেলার এসপি-ডিসি

পুজোর মুখে রাজ্য পুলিশের শীর্ষ পদে বড়সড় রদবদল করল নবান্ন। বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, একাধিক জেলায় পুলিশ...

‘নোরা ফাতেহি’ হতে হবে! স্ত্রীকে জোর করে শরীরচর্চা করিয়ে গর্ভপাত শিক্ষকের

যোগীরাজ্যে স্কুলশিক্ষকের ফ্যান্টাসির চূড়ান্ত নমুনা! স্ত্রীকে হতে হবে রোগা ছিপছিপে চেহারার। আর সেই চেহারা বানাতে গিয়েই স্বামীর নির্মম...

গান-কবিতায় সংসদে সরব তৃণমূল! বয়কট রাজ্যসভার চা-চক্র

বৃহস্পতিবার অধিবেশনের শেষ দিনে সংসদ উত্তাল হল বাংলা গান, কবিতা, বিক্ষোভ, প্রতিবাদে। সংসদের অন্দরে যেমন কালাকানুন, এসআইআর, ভাষাসন্ত্রাসের...