দুই হাজার কুড়ি সালের পয়লা এপ্রিল , ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া মার্জ হয়ে গেল পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের সঙ্গে । শেষ হয়ে গেল বাঙালির আর এক গৌরবময় অধ্যায়। ইতিহাসটা একটু পিছিয়ে দেখা যাক। ১৯১৪ সালে মাত্র 3 হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে কুমিল্লায় প্রতিষ্ঠিত হল কুমিল্লা ব্যাংকিং কর্পোরেশন । প্রতিষ্ঠা করলেন এক বাঙালি শিল্পপতি। নাম নরেন্দ্র চন্দ্র দত্ত । ১৯১৮ সালে জে সি দাস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বেঙ্গল সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক। ১৯২২ সালে ইন্দুভূষণ দত্ত প্রতিষ্ঠা করেন কুমিল্লা ইউনিয়ন ব্যাংক, এবং ১৯৩২ সালে ডি এন মুখার্জি প্রতিষ্ঠা করেন হুগলি ব্যাংক। এর সদর দফতর ছিল ধর্মতলায়।ব্যাঙ্কগুলি স্বতন্ত্রভাবে চলেছিল বেশ কয়েক বছর ।এরপর নগদ অর্থের অভাব দেখা দিলে ১৯৫০ সালে এই চারটি বাঙালি ব্যাংক মার্জ হয়। নতুন নাম হয় ইউবিআই অর্থাৎ ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া।১৯৬৯ সালে ১৯ জুলাই ।আরও ১৩ টি ব্যাংকের সঙ্গে ইউবিআই কেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার অসংখ্য শাখা ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিমবঙ্গে। প্রত্যন্ত সুন্দরবন অঞ্চলে আজ থেকে প্রায় ৪৪ বছর আগে নদীপথকে ব্যবহার করেই সেখানে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা চালু করেছিল ইউবিআই। দুটি ভ্রাম্যমাণ লঞ্চে ব্যাঙ্কের শাখা চালু করে তারা। সেগুলো বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে মানুষকে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা দিত।গোটা দেশে ২৮ টি আঞ্চলিক কার্যালয় এবং ১৪৫৩ টি শাখা ছিল এই ব্যাংকটির। ২০১৯ সালের ৩০ আগস্ট অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ইউনাইটেড ব্যাংক এবং ওরিয়েন্টাল ব্যাঙ্ক অফ কমার্স কে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ করার সিদ্ধান্ত নেন। দুই হাজার কুড়ি সালের পয়লা এপ্রিল সেই সিদ্ধান্ত কার্যকরী হয়।এখনকার জেনারেশন জানতেই পারলো না ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া , পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চারটি বাঙালি ব্যাংকের অস্তিত্ব মুছে গেলো সম্পূর্ণভাবে। শেষ হয়ে গেল ভারতীয় অর্থনীতিতে চার বাঙালির গৌরব গাঁথা।
