করোনাকে বাপি বাড়ি যা বলে এগোবে অর্থবাজার

পার্থসারথি গুহ

করোনা কাঁটায় জর্জরিত সারা দুনিয়া। যার ভালমতো আঁচ এসে পৌঁছেছে ভারতেও। প্রাণহানি বা আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ার সঙ্গেই ভারতের অর্থবাজারও দুমড়ে মুচড়ে পড়েছে। অবশ্য ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়ার শেয়ার বাজারেরও সঙ্গীন। মাত্র দিন ১৫-২০ আগেই ভারতীয় সূচকদ্বয়ের রূপটা ছিল এইরকম। নিফটি প্রায় ১২,৫০০ র কাছাকাছি। সেনসেক্স ৪২-৪৩ হাজার। এই জায়গায় থেকেই ৪০ শতাংশ পতন ঘটেছে সূচকজোরে। নিফটি প্রায় ৭,৫০০ আর সেনসেক্স ২৬ হাজারের কাছে আসে। এই জায়গা থেকে উনিশ-বিশ উন্নতি হলেও বাজার যে দ্রুত স্থিতাবস্থা ফিরে পাবে এমন ভাবনা কোনও পাগলেও ভাবছে না। এই ভয়ঙ্কর অবস্থা কতদিনে কাটবে সেটাও বোঝা অসম্ভব। তবে গ্রীষ্মের দেশ ভারতে এই রোগের প্রাদুর্ভাব একটা জায়গায় থমকে যাওয়ার আশা রয়েছে অনেকের মনেই। সেক্ষেত্রেও সময়টা ৩-৬ মাস লাগতেই পারে। তারপর কি সব মিটে যাবে? উত্তর মোটেই না। বরং এরপর শুরু করোনা আফটার এফেক্ট। যার জের কতদিন বা বছর গড়াবে তা এই মুহূর্তে আন্দাজ করাও অসম্ভব।

তবে এটা ঠিক সূচক সাম্প্রতিক অতীতে যে উচ্চতা দেখেছে তা ফিরে পেতে বহু সময় লাগবে। হয়তো দেখা যাবে আগের হিরোরা পরিবর্তিত অবস্থায় কোনও কাজেই আসছে না। নতুন কিছু সেক্টর বা শেয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সময় নিশ্চিতভাবে জায়গা করে নেবে। লগ্নিকারীদেরও তাই এই বিপদের সময় দাঁড়িয়ে এমন কিছু সেক্টর বেছে নেওয়া জরুরি। আর নতুন লগ্নি? এতটা নিচে বাজার। তাই অনেকের হয়তো মনে হচ্ছে এখন থেকেই ভাল শেয়ার কেনা শুরু করা উচিত। তাঁদের একটাই কথা বলার। কিনুন, নিশ্চয়ই বিনিয়োগ করুন। কিন্তু আপনার মোট ক্রয় ক্ষমতার পুরোটা ভুলেও এখন লগ্নি করবেন না। যদি খুব ভাল মানের কিছু শেয়ার কিনতেই হয় তবে মোট পুঁজির সিকিভাগ এখন বিনিয়োগ করুন। অপেক্ষা করুন। হয়তো নিফটি ৬ হাজার পর্যন্ত চলে আসতে পারে। সেনসেক্স ২০-২২ হাজারের জায়গা ছুঁতে পারে। ফলে লগ্নি হবে ধাপে ধাপে। আবারও বলা হচ্ছে ভাল শেয়ার কিনুন ঠিক আছে। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কিনতে হবে সেসব শেয়ারও যা করোনাত্তর জমানার ট্রাম্প কার্ড হয়ে উঠতে পারে।

সাম্প্রতিক ১২ হাজারি উচ্চতার পর প্রায় ৫ হাজার পয়েন্ট খোয়াল নিফটি। শতাংশের বিচারে প্রায় ৪০ শতাংশ। এই পতনে আবার বিদেশি ফান্ডগুলোর বড় বিক্রি মস্ত বড় কারণ। তবে আশার কথা এখনও কিনে চলেছেন দেশি মিউচুয়াল ফান্ডগুলো। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পালা বড় ফান্ডের। অর্থনীতির প্রত্যাবর্তন ঘটলে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে৷ আর ডামাডোল এলে আরও পতনের জন্য তৈরি থাকতে হবে।


‌বিগত সপ্তাহে অর্থবাজার বেশ ব্যাকফুট মেজাজে শুরু করেছে।
অল্প কয়েকদিন আগে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ সূচক নিফটির সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ১২,৩৫০।  কিছুদিন সেই রেকর্ড ভাঙল নিফটি। তারপর আবার একটা ছোট্টব্যাক সাড়ে ১১ হাজারের কাছে গোত্তা খেতে দেখা যায় নিফটিকে। সেই জায়গা থেকে ওস্তাদের মার শেষ রাতের মতো সপ্তাহের শেষ দিন ঘুরে দাঁড়াল ভারতীয় সূচকজোর। যা নিসন্দেহে বুল তথা ইতিবাচক লগ্নিকারীদের পক্ষে স্বচ্ছ বাতাবরণ গড়ে তুলছে। কেন্দ্রে স্থায়ী সরকারের পুনর্প্রতিষ্ঠাই এখনও ভারতীয় শেয়ার বাজারকে উদ্দীপ্ত করেছিল। তার সঙ্গে যোগ করতে হচ্ছে বিদেশিদের কেনার ব্যাপারটাও।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ র সেপ্টেম্বরে এই উচ্চতা স্পর্শ করে ছিল নিফটি মহারাজ। সেনসেক্সও অনুরূপভাবে নতুন উচ্চতা ছুঁয়েছে। এখন আরো বৃদ্ধি না কিছুটা সেটব্যাক সেটা নিয়েই এখন প্রশ্ন। তবে এবারের কেনায় নিশ্চিতভাবে বিদেশিদের নিয়ন্ত্রণ একটা বড় ব্যাপার। অবশ্য গাছে তুলে মই কেড়ে নেওয়ার খেলা এই বিদেশিরা আগেও দেখিয়েছেন। সেদিক থেকে ডোমেস্টিকরা অনেক নিরাপদ। কিন্তু তাদেরও কেনার একটা লিমিট আছে।
‌বুলরা মূলত বাজারের বাড়ার পক্ষে সওয়াল করে। আর বেয়াররা ওকালতি করে বাজারের পতনের পক্ষে। শুধু সূচকের বাড়া বা কমার মধ্যেই বুল-বেয়ারদের লড়াই থেমে থাকে না। কোনও শেয়ারের উত্থান পতন নিয়েও এদের আকচাআকচি চলে। সোজা সাপ্টা ভাষায় বললে বুল ও বেয়াররা ইতিবাচক ও নেতিবাচক চিন্তার প্রতিভূ হয়ে থাকে।

যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলাই হয়ে উঠবে নতুন আঙ্গিকে নয়া চ্যালেঞ্জ। এখানেও লগ্নিকারীদের অটল থাকতে হবে তাদের বেসিক জায়গায়। হুটপাট করে বিনিয়োগ না বাড়িয়ে দেখেশুনে কেনায় যেতে হবে। কারণ, এখন ভুলভাল শেয়ার বাছাই করলে বড়সড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন লগ্নিকারীরা। সুতরাং সবকিছু ভেবে চিন্তে তবেই পদক্ষেপ করতে হবে।

Previous articleপ্রধানমন্ত্রীর সাত দফা নির্দেশ
Next articleকরোনা সচেতনতার মাধ্যমে নববর্ষ পালন কোন্নগরের বিধায়কের