পরামর্শ দিতে এত ছুৎমার্গ কেন ? কণাদ দাশগুপ্তের কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

দেশে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার অতিক্রম করেছে৷

মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল, সকাল ৮টায় কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, গোটা দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০,৩৬৩ জন৷ এর মধ্যে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৮,৯৮৮ জন৷ ছাড়া পেয়েছেন ১,০৩৫ জন৷ এবং মৃত্যু হয়েছে ৩৩৯ জনের৷ গত ২৪ ঘন্টাতেই মৃত্যু হয়েছে ৩১ জনের৷

কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান বলছে, দেশে মোট আক্রান্ত ১০,৩৬৩ জনের মধ্যে ৮,১৫৩ জনই বাস করেন ৮ টি রাজ্যে৷ এই রাজ্যগুলি হলো, মহারাষ্ট্র, দিল্লি,তামিলনাড়ু, রাজস্থান, তেলেঙ্গানা, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ এবং গুজরাত ৷

এই ৮ রাজ্যেই দেশের মোট করোনাক্রান্তের ৭৯% রয়েছেন৷ বাকি ২১% বা ২২১০ জন দেশের বাকি রাজ্য মিলিয়ে বাস করছেন৷

গোটা দেশের যা ছবি, ঠিক তার উল্টো ছবি কেরলে৷ ওই রাজ্যে গত ১ সপ্তাহ যাবৎ নতুন সংক্রমিতের সংখ্যার থেকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া রোগীর সংখ্যা বেশি।

সোমবারের পর কেরলে আপাতত সক্রিয় রোগীর সংখ্যা কমেছে৷ এবং ছাড়া পাওয়া ব্যক্তিদের সংখ্যা বেড়েছে। তাই কেরল এখন দাবি করছে, করোনা-গ্রাফ ‘সমান’ হচ্ছে কেরলে।

লকডাউন এবং সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং-ই এখন গোটা দেশের জন্য একমাত্র ওষুধ৷ কিন্তু এর পাশাপাশি ওই ৮ রাজ্য, দেশের যে রাজ্যগুলি এই মুহুর্তে কার্যত করোনার তথাকথিত ‘হটস্পট’, সেই মহারাষ্ট্র, দিল্লি, তামিলনাড়ু, রাজস্থান, তেলেঙ্গানা, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ এবং গুজরাত-এর জন্য বাড়তি কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা বা আর কঠোর কিছু শর্তাদি পালনের কথা এদিন প্রধানমন্ত্রীর বলা দরকার ছিলো৷

এই ৮ রাজ্য এবং কেরলকে একাসনে বসানো হলে ওই ৮ রাজ্যের প্রতি অবিচার হয়৷ এতে ৮ রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা থাকবে৷

এই রাজ্যগুলির মধ্যেই আছে যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশ৷ প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী কেন্দ্রও এই উত্তরপ্রদেশেই৷ এবং অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রাজ্য গুজরাত৷

দেশের স্বার্থে দেশবাসী নিশ্চিতভাবেই আগামী ৩ মে পর্যন্ত কঠোরভাবে লকডাউন পালন করবেন৷ সকলেই এই দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে চাইছেন৷ লকডাউন এবং সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং-ই যে করোনাভাইরাসের একমাত্র ‘ওষুধ’, সেটাও দেশের মানুষ বুঝেছেন৷ তাই, ৩ মে পর্যন্ত লকডাউন ফের সফল হবেই৷

গোটা দেশ এখন দলীয় রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে ঐক্যবদ্ধভাবে করোনা যুদ্ধে সামিল৷ তার মাঝেও এই সংহতি বিনষ্ট করার একটা চেষ্টা চলছে বিশেষ এক রাজনৈতিক দলের আইটি সেলের তরফে৷

ওই সেলের কিছু বসন্তের কোকিল অযাচিতভাবে এবং অনধিকার চর্চা চালিয়ে বিভিন্ন রাজ্যকে “পরামর্শ” দিয়ে চলেছে৷ তাদের ধারনা, এই পরামর্শ মানলেই অবধারিতভাবে করোনা থেকে মুক্তি মিলবে৷

হয়তো তাদের এই ধারনা সঠিক৷ তাহলে একটা প্রশ্ন তো থাকছেই, ওই রাজনৈতিক দলের আইটি সেল এই ধরনের মহামূল্যবান পরামর্শ টুইটের মাধ্যমে কেন দিচ্ছে না উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ বা গুজরাত সরকারকে ? পরামর্শ দিতে এত ছুৎমার্গ কোন রহস্যে ?

এই ৩ রাজ্যের মানুষ করোনা’র হাত থেকে রক্ষা পান, তা কি চাইছে না ওই আইটি সেল ?

সাধারন মানুষ যখন জীবন বাঁচাতে মরিয়া লড়াই চালাচ্ছে, তখন “পরামর্শ” দেওয়ার ক্ষেত্রে ওই রাজনৈতিক দলের আইটি সেলের এই দ্বিচারিতা কেন ?

এই ৩ রাজ্যের নাগরিকরা কি ‘দেশদ্রোহী’ ?

Previous articleকরোনার জের, পয়লা বৈশাখে জনশূন্য তারাপীঠ
Next articleলকডাউনে খোশ মেজাজে বেঙ্গল সাফারি পার্কের বাসিন্দারা, খোঁজ নিলেন পর্যটন মন্ত্রী