“ব্যালকনিতে ব্লাড ক্যাম্প”, বামেদের রক্তদান প্রয়াসে মমতার অত্যাধুনিক ভ্রাম্যমান গাড়ি

করোনার বিরুদ্ধে চলছে বিশ্বযুদ্ধ। চলছে গ্লোবাল ইমার্জেন্সি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে লকডাউন একমাত্র পথ। তাই মানুষ গৃহবন্দি। কিন্তু এর মাঝেও রক্তের প্রয়োজন। বিশেষ করে গরমের সময় রক্তের চাহিদা একটু বেশি থাকে। আর রক্তের কোনও বিকল্প নেই। সেই চাহিদা পূরণ করে বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি, রাজনৈতিক সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার রক্তদান শিবিরগুলি। করোনা সঙ্কটে সেই রক্তদান শিবিরগুলিও কার্যত বন্ধ। কারণ, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে কেউ রক্তদান শিবিরের অনুমতি পাচ্ছে না।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে শহর ও জেলাগুলিতে রক্তের এই চাহিদা মেটাচ্ছে পুলিশ প্রশাসন। করোনা যুদ্ধের মধ্যেই থানাগুলি রক্তদান শিবির আয়োজন করছে। পুলিশকর্মীরা নিজেরাই সেখানে রক্ত দিচ্ছেন। তবে এই ধরণের প্রতিটি ক্যাম্পে খুব স্বল্প সংখ্যায় রক্তদাতাদের রক্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে।

এরই মাঝে এক অভিনব রক্তদান শিবিরের আয়োজন করলো টালিগঞ্জ এরিয়া-২ সিপিএম লোকাল কমিটি। আজ, শুক্রবার নেতাজি নগর নারকেল বাগান মোড় থেকে শুরু হয়েছিল এই শিবির। যার অন্যতম উদ্যোগতা ছিলেন সিপিএম জেলা সম্পদক মন্ডলীর অন্যতম সদস্য সুদীপ সেনগুপ্ত।

কিন্তু এই রক্তদান শিবিরের অভিনবত্ব কোথায়? আসলে আমরা যে ধরণের রক্তদান শিবির দেখে অভ্যস্ত, এটা ঠিক সেরকম ছিল না। অর্থাৎ, এক জায়গায় জমায়েত করে বহু মানুষের সমাগমে এই শিবির নয়। একটি ভ্রাম্যমান গাড়িতে
(MOBILE BLOOD) রক্তদান শিবির। যার নামকরণ করা হয়েছে ” ব্যালকনিতে ব্লাড ক্যাম্প”। এখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের অত্যাধুনিক একটি গাড়ির (MOBILE BLOOD) মধ্যে নেওয়া হয়েছে রক্ত। এই বাতানুকূল গাড়িতে রক্ত সংগ্রহের সমস্ত ব্যবস্থাই করা আছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মাত্র দু’জন করে রক্তদাতা গাড়িতে উঠে রক্তদান করতে পারবেন। এবং ৩০ জন রক্তদাতার রক্ত সংগ্রহের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

MOBILE BLOOD-এর মাধ্যমে রক্তদান শিবির এই রাজ্যে প্রথম অনুষ্ঠিত হলো নেতাজি নগরের বামেদের উদ্যোগে। এই রক্তদান শিবিরে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্ৰী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে রাজ্যে ১০টি অত্যাধুনিক মোবাইল ব্লাড গাড়ি চালু করা হয়েছে। আজই প্রথম তার সূচনা হলো নেজাতি নগরে এই রক্তদান শিবিরের মধ্য দিয়ে। আগামিদিন বিভিন্ন জায়গায় রক্তদান শিবিরগুলিতে এই গাড়ি গিয়েই রক্ত সংগ্রহ করবে। যা করোনা সঙ্কটের মধ্যে রক্তের চাহিদা যেমন মেটাবে, ঠিক একইভাবে লকডাউনে সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকবে। যদিও আমাদের রাজ্যে যথেষ্ট রক্তের মজুদ রয়েছে।”

এরপরই চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা চাই করোনা সঙ্কটের মধ্যে রাজনীতির ঊর্ধে উঠে সকলে কাজ করুন। তাই আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনীতির রং না দেখে এমন উদ্যোগের সূচনাটাই সুজন চক্রবর্তীর মাধ্যমে করলেন। সুজনবাবু অনেকদিন ধরে চাইছিলেন রক্তদান শিবিরের আয়োজন করতে। তাই মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছাতেই তাঁকেই প্রথম মোবাইল ব্লাড গাড়ি অনুমোদন করেছেন।”

রাজ্যের অপর মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক অরূপ বিশ্বাস বলেন, “এরকম মোবাইল ব্লাড গাড়ি এই প্রথম। আজ নেতাজি নগরে হলো। আগামীকাল আমিও একটা এমন রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছি।”

যাদবপুরের বিধায়ক তথা বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী সম্প্রতি রক্তদান শিবির করার অনুমতি চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন। তারপর তাঁর দলের উদ্যোগেই এবং রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় এমন MOBILE BLOOD, অর্থাৎ ভ্রাম্যমান গাড়িতে রক্তদান শিবির। সুজন চক্রবর্তী বললেন, “গরমে রক্তের চাহিদা থাকে। তাই আমরা অনেকদিন ধরেই চাইছিলাম একটি রক্তদান শিবির করতে। কিন্তু প্রয়োজনীয় অনুমতি মিলছিল না। করোনা যুদ্ধের মধ্যে এমন উদ্যোগ মানুষের মঙ্গলে লাগবে। এই উদ্যোগে সহযোগিতার জন্য রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। তবে এটা শুধু শহর নয়, বিভিন্ন জেলাতেও ছড়িয়ে দিতে হবে। এই ভ্রাম্যমান গাড়ি তাই আগামীদিনে জেলায় জেলায় হোক, এমনটাই চাইবো।”

দেখুন ভিডিও…

Previous articleসামাজিক দূরত্ব কার্যকর করতে তৎপর মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ
Next articleলকডাউনে বাংলা দূরদর্শনে ফিরছে “আবার যখের ধন”