Wednesday, December 24, 2025

সুরাইয়ার প্রভাবে ১২ মের পর পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে রোগ-ব্যাধি! কামাল হোসেনের কলম

Date:

Share post:

কামাল হোসেন

ইসলামিক (হাদিস) মতে, ১২ মে পৃথিবী থেকে করোনা ভাইরাস বিদায় নেবে। এটা কি সত্যি?
গত কয়েক দিন ধরে শিক্ষা জগতের বিভিন্ন ব্যক্তি বা ছাত্র-ছাত্রী এই কথাটা বারবার জানতে চেয়েছে যে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের প্রচারিত হচ্ছে যে হাদিস মতে করোনা ভাইরাস এই পৃথিবী থেকে ১২ মে চিরতরে বিদায় নেবে এবং বহু দিন যেহেতু আমি পত্র-পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত, তাই অনেক সাংবাদিক বন্ধু একই প্রশ্ন আমাকে করেছিলেন।
যেহেতু আমি খুব বেশি হাদিস বা কোরআন নিয়ে চর্চা করি না কিন্তু হাদিস এবং কোরআন পুরোপুরি ভাবে মেনে চলি এবং আমার সাধ্যমতো আমি রোজা এবং নমাজ আদায় করি।
তাই ১২ মে পৃথিবী থেকে সত্যি কি এই ভাইরাস নির্মূল হবে? তা নিয়ে কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন হাদিস নিয়ে পড়াশোনা করে যেটুকু বুঝলাম বা অনুধাবন করলাম তার সংক্ষিপ্ত রূপ হল-
ইসলামিক মতে, একটি তারকাপুঞ্জ আছে যার আরবি নাম সুরাইয়া। বাংলায় একে বলে কৃত্তিকা এবং ইংরেজিতে বলে Pleiades। ইসলামিক মতে, এই সুরাইয়া নক্ষত্র উদিত হয় মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ। তবে প্রকৃত তথ্য যদি বিশ্লেষণ করা যায় তাহলে বলতে পারি ইমাম (আততাহয়ী) তার “শারহ মুস্ কিল আল আসার” নামক গ্রন্থে ইমাম আবু হানিফার জন্য একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন এবং এখানে তিনি উল্লেখ করেছেন যে আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূল (সা:) বলেছেন “যখন তারাটি উঠবে তখন প্রতিটি শহরবাসী থেকে ব্যাধি উঠিয়ে নেওয়া হবে”।
অন্য একটি হাদিস থেকে পাওয়া গিয়েছে যে আব্দুল্লাহ ইবনে উমার-এর এক প্রশ্নের উত্তরে মহানবী (সা:) বলেছেন যে ” আহা বা রোগব্যাধি চলে যাওয়ার আগে ফল বিক্রি কর না”। এখানে ব্যাধি বলতে খেজুরের রোগের কথা বলা হয়েছে। ইসলামি অভিধান মতে আহা শব্দের অর্থ রোগ বা বিপদ এবং মূলত এটি খেজুরের সঙ্গে যুক্ত একটি রোগ। আরবের হেজাজ অঞ্চলে মূলত প্রচুর পরিমাণে খেজুর উৎপন্ন হয়। গরম আসার আগে বসন্তের সময় খেজুরের মধ্যে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব হয় তাই সুরাইয়া নক্ষত্র উঠলে রোগের উপক্রম কমে যায়। আর তারপরেই মহানবী সাঃ খেজুর বিক্রি করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

আরবে সাধারণত অক্টোবর মাস নাগাদ শীত পড়তে শুরু করে এবং শীত কমে গিয়ে ধীরে ধীরে মে মাসে গরমের আবির্ভাব ঘটে। তখনই সুরাইয়া নক্ষত্র ভোরের দিকে উদিত হয়। ইসলামিক নানা হিসেব অনুযায়ী, সুরাইয়া তারা ভোরের দিকে উদিত হয় সাধারণত মে মাসের ১২ তারিখ নাগাদ। শীতের সঙ্গে সঙ্গে সারা পৃথিবীতে নানারকম রোগের মহামারীর প্রাদুর্ভাব দেখা যায়, সেটা আরবের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য। কিন্তু ধীরে ধীরে যত গরম পড়তে থাকে ততো রোগের প্রাদুর্ভাব কমতে থাকে। তাই নানা হাদিস বা দলিল পর্যালোচনা করে যেটা আমি সিদ্ধান্তে এসেছি যে এই রোগ বলতে খেজুরের রোগের কথা বলা হয়েছে এবং সুরাইয়া নামক নক্ষত্রপুঞ্জ মে মাসের মাঝামাঝি উদিত হলে এই রোগ এবং যাবতীয় রোগ সম্বন্ধীয় বিপদ-আপদ পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে। এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার যে মে মাসের ১২ তারিখে ১৯/২০ কুড়িটি রোজা হবে এবং শেষ ১০ দিন লাইলাতুল কদরে আল্লাহতালা এই দুনিয়াতে প্রচুর সংখ্যায় রহমতের ফেরেশতা পাঠাবেন।

অনেকেই বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করছেন যে ১২ তারিখে পৃথিবী থেকে এই করোনাভাইরাস দূর হয়ে যাবে। তাঁরা হয়তো বা এই ভেবে বলছেন যে রমজান মাসের শেষ ১০ দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন লক্ষ লক্ষ ফেরেস্তা এই দুনিয়াতে পাঠাবেন এবং শয়তানদের কার্যক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেবেন। তাই হয়তো এই রোগটি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সারা পৃথিবীতে থেকে নির্মূল করে দিতে পারেন। কারণ, করোনা নামক এই অতিমারী পৃথিবীতে থাকতে পারে না যখন রহমতের ফেরেশতা এই পৃথিবীতে পদার্পন করবেন।

যে সমস্ত ভাই-বোনরা বা ইসলামিক আদর্শ অনুপ্রাণিত বিজ্ঞ ব্যক্তিরা নিশ্চিতভাবে বলছেন যে ইসলামিক নিয়ম অনুযায়ী, 12 তারিখে সুরাইয়া নক্ষত্র উঠলে সারা পৃথিবী থেকে এই অতিমারী রোগটি নির্মূল হয়ে যাবে তারা খুব ভেবেচিন্তে এটি প্রচার করুন নানারকম মাধ্যমে। কারণ ১২ তারিখে কেন তার আগেই এই করোনাভাইরাস পৃথিবী থেকে নির্মূল হয়ে যাক, তা সমস্ত পৃথিবীবাসী চান। শুধু মুসলমান নয়, খ্রিস্টান নয়, হিন্দু নয় বিশ্ববাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন কবে পৃথিবী আবার নতুনভাবে হাসবে।
কিন্তু যদি ১২ তারিখে এই করোনাভাইরাস পৃথিবী থেকে বিদায় না নেয়, তাহলে ইসলাম সম্বন্ধে সারা পৃথিবীর সমস্ত ধর্মাবলম্বী মানুষের কাছে কী ধারণা জন্মাবে? তাই দয়া করে ইসলামকে বিকৃত করবেন না। প্রকৃত পক্ষে হাদিস এবং কোরআনের সঠিক ব্যাখ্যা করা আছে সেগুলো বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে প্রমাণ সহ ছড়িয়ে দিন।
তাই আমার একান্ত অনুরোধ সঠিক তথ্য না জেনে ইসলামকে সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে ছোট করবেন না। আর সবাইকে বলছি, দয়া করে ইসলামকে খারাপ করবেন না। কিছু মুসলমান খারাপ হতে পারে, তাদের ব্যবহার বা কথাবার্তা ইসলামকে কলুষিত করছে- দয়া করে সেটা করবেন না। ইসলামকে কলুষিত করার আগে আমি করজোড়ে অনুরোধ করছি আপনারা পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনের বাংলা পড়ুন। আশাকরি আপনাদের সব ভুল ধারণা চলে যাবে। কোরআনকে না পড়ে ইসলামকে খারাপ করবেন না। বেশ কিছু মুসলিম ব্যক্তির ব্যবহারের জন্য ইসলামকে দয়া করে কলুষিত করবেন না।

spot_img

Related articles

শালবনিতে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র, হুগলিতে ওয়্যারহাউস! সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভার 

কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি শিল্প পরিকাঠামো বৃদ্ধি করতে বড় সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে...

ডিরেক্টরেট স্তরের কর্মীদের জন্য কমন ক্যাডার গঠন, সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভায়

রাজ্য সরকার এবার সচিবালয়ের কর্মীদের মতোই ডিরেক্টরেট স্তরের কর্মীদের জন্য কমন ক্যাডার গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নবান্ন সূত্রে জানা...

পর্যটন মরশুমে নিয়মে বদল! বড়দিন ও নববর্ষে খোলা থাকবে ডুয়ার্সের জঙ্গল 

পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে ভরা পর্যটন মরশুমে বড় সিদ্ধান্ত নিল বনদফতর। জঙ্গল সাফারির সাপ্তাহিক রুটিনে সাময়িক পরিবর্তন এনে...

গান্ধীর নাম বাদের প্রতিবাদে কংগ্রেসের মিছিল ঘিরে অশান্তি

দিন কয়েক আগেই বিরোধীদের প্রবল বিক্ষোভ সত্ত্বেও মনরেগার (MGNREGA) পরিবর্তে জি রাম জি বিল পাশ করিয়েছে মোদি সরকার...