রেড জোনে মুখ্যসচিবের ছাড় আতঙ্ক বাড়াচ্ছে, পুলিশের পক্ষে সর্বত্র নজরদারি অসম্ভব

তৃতীয় দফার লকডাউনে একগাদা ছাড় ঘোষণা করেছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা৷ সোমবার নবান্নে তিনি বলেছেন, শর্তাধীন ছাড় দেওয়া হচ্ছে৷ নিয়ম মানতে হবে সকলকে৷ নিয়ম ভাঙলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷

প্রশ্ন উঠেছে, মুখ্যসচিব নবান্নে বসে এমন কয়েকটি ছাড় ঘোষণা করেছেন, যার জেরে এবার সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিতভাবেই শিকেয় উঠবে৷ রেড জোনে এই নির্দেশ ভয়ঙ্কর হয়ে দেখা দেবে বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞরা৷

মুখ্যসচিব বলেছেন, বিধি মেনে চলতে হবে৷ কিন্তু বিধি মানা হচ্ছে কি’না, তা দেখবে কে ? মুখ্যসচিব নিশ্চিতভাবেই বোঝাতে চেয়েছেন, গোটা বিষয়ে নজর রাখবে পুলিশ, যদিও স্পষ্টভাবে তিনি কিছু বলেননি৷
কথা হচ্ছে, পুলিশ আর কতদিকে নজর দেবে ? একেবারে মাইক্রো- লেভেলে সর্বত্র নজরদারি রাখার পরিকাঠামো কোন থানার আছে ? এত সময়ই বা পুলিশ কোন জাদুবলে পাবে ?
ফলে, ফাঁক থাকবেই, আর সেই ফাঁক দিয়ে করোনা প্রবেশ করলে, দায় কে নেবেন ? রাজ্যের মুখ্যসচিব প্রস্তুত আছেন ?

মুখ্যসচিবের ঘোষণা মতো ছাড় দেওয়া হয়েছে –

◾জেলার মধ্যে বাস চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে ৷ তবে, জেলার সীমানা ছাড়িয়ে বাইরে যেতে পারবে না৷

— মুখ্যসচিবের এই নির্দেশ মানা হচ্ছে কি’না তা দেখবে পুলিশ৷

◾ দূরত্ব বজায় রেখে কম সংখ্যক যাত্রী নিয়ে চালাতে হবে বাস৷

— মুখ্যসচিবের এই নির্দেশ মানা হচ্ছে কি’না তা দেখবে পুলিশ৷

◾ মিষ্টির দোকানের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে, সন্ধে ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকবে মিষ্টির দোকান৷

— মুখ্যসচিবের এই নির্দেশ মানা হচ্ছে কি’না তা দেখবে পুলিশ৷

◾ চা-পানের দোকান খোলা যাবে৷ দোকানে চা পান করা যাবে না৷ কিনে নিয়ে বাড়ি চলে যেতে হবে৷

— মুখ্যসচিবের এই নির্দেশ মানা হচ্ছে কি’না তা দেখবে পুলিশ৷

◾ 25% কর্মী নিয়ে বেসরকারি অফিস খোলা যেতে পারে৷ অফিস চালু থাকবে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত৷

— মুখ্যসচিবের এই নির্দেশ মানা হচ্ছে কি’না তা দেখবে পুলিশ৷

◾ গাড়িতে ড্রাইভার সহ ২ জন যাত্রী যেতে পারবে৷

— মুখ্যসচিবের এই নির্দেশ মানা হচ্ছে কি’না তা দেখবে পুলিশ৷

◾শপিং মল, মার্কেট কমপ্লেক্স খোলা যাবে না৷

— মুখ্যসচিবের এই নির্দেশ মানা হচ্ছে কি’না তা দেখবে পুলিশ৷

◾৭ জনের বেশি জমায়েত করা যাবে না৷

— মুখ্যসচিবের এই নির্দেশ মানা হচ্ছে কি’না তা দেখবে পুলিশ৷

◾ মিছিল বা দলবদ্ধ যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা ৷

— মুখ্যসচিবের এই নির্দেশ মানা হচ্ছে কি’না তা দেখবে পুলিশ৷

◾অত্যাবশ্যকীয় পণ্যে যে ছাড় আছে, তা বহাল থাকবে

— মুখ্যসচিবের এই নির্দেশ মানা হচ্ছে কি’না তা দেখবে পুলিশ৷

এদিন মুখ্যসচিবের যে নির্দেশ নিশ্চিতভাবেই লকডাউন বা সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং-এর বারোটা বাজাবে, তা হলো, রাস্তার চা-পানের দোকান খোলারও অনুমতি দেওয়া৷ রাজ্য বলেছে, এ ক্ষেত্রে শর্ত, দোকানে দাঁড়িয়ে বা বসে চা-পান চলবে না৷ দোকান থেকে চা কিনে চলে যেতে হবে৷

পাড়ার অলিগলিতে হাজারো চায়ের দোকানের উপর কে নজর রাখবে? কারা চা নিয়ে চলে যাচ্ছে আর কারা ওখানেই চা পান করছে, আড্ডা দিচ্ছে, তা পুলিশের পক্ষে নজর রাখা সম্ভব?

মুখ্যসচিবের এই নির্দেশ রাজ্যকে অজানা আশঙ্কা আর আতঙ্কের মধ্যেই ঠেলে দিলো বলে অনেকেই মনে করছেন৷

Previous articleলকডাউন: নয়া নির্দেশিকা জারি রাজ্যের, কোন কোন বিষয়ে ছাড়?
Next articleভারতে করোনা টেস্ট ১০ লক্ষ পেরিয়েছে, সংক্রমণ বাড়লেও সুস্থ হওয়ার হার ২৭.৫২ শতাংশ