‘আজকাল’ : কর্মীদের তীব্র ক্ষোভের মুখে সত্যম রায়চৌধুরীর কমিটি

চলতি করোনা সঙ্কটে প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন ছিল বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের উপর কোপ না দেওয়া।

সঙ্কটের তীব্রতায় তা সম্ভব হচ্ছে না। মিডিয়াতেও হাত পড়ছে। বাংলার একটি বড় কাগজ ইতিমধ্যেই ১৫ শতাংশ বেতন হ্রাসের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

কিন্তু জটিলতা বেড়ে বিক্ষোভ তুঙ্গে উঠেছে ‘আজকাল’ পত্রিকায়।
তাদের সমর্থনের জন্য মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য সরকার বিজ্ঞাপনবাবদ আয় বাড়িয়ে দিয়েছেন। বিজ্ঞাপনবিভাগের দায়িত্বে থাকা প্রদীপ দাশগুপ্তও লড়াই করছেন। এহেন অবস্থায় ‘আজকাল’-এর নতুন মালিক বলে পরিচিত সত্যম রায়চৌধুরী যে কমিটি গড়ে দিয়েছেন, তা নিয়ে ক্ষোভ তুঙ্গে। অভিযোগ, কর্মী ইউনিয়নের সঙ্গে কথা না বলে সইহীন নোটিসে বেতনকাটার কথা বলা হয়েছে। এনিয়ে প্রতিবাদ, পোস্টারিং চলছে। মঙ্গলবার ম্যানেজমেন্ট ও কর্মীদের বৈঠক ভেস্তে গেছে। কারণ কমিটির কিছু লোক কর্মীদের পুরনো অভিজ্ঞতা ও আবেগকে সম্মান না দিয়ে অপমানজনক মানসিকতা দেখাচ্ছেন বলে ইউনিয়নের অভিযোগ। ‘আজকাল’ ঐতিহ্যশালী কাগজ। কিছুকাল ধরে সঙ্কটে আছে বলেই নতুন মালিকানার প্রক্রিয়া। কিন্তু তাঁদের কিছু লোক যদি সংবাদপত্র ও আজকালের পুরনো গন্ধ না জেনে ফতোয়া দিয়ে পরিচালনা করতে যান, সমস্যা বাড়ছে। সম্পাদক অশোক দাশগুপ্ত কাকে কী বলছেন, ইউনিয়ন এখনও অন্ধকারে।

সবচেয়ে বড় ইউনিয়নটির সম্পাদক দেবাশিস দত্ত এনিয়ে পরপর দুটি ফেসবুক পোস্ট করেছেন। আমরা সেদুটি হুবহু দিলাম। প্রতিষ্ঠানের সঙ্কটে অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে হয়, আমরা মানি। কিন্তু যদি অপরিকল্পিত অদক্ষ হাতে কর্মীদের মানসিকতাকে উপেক্ষা করে জলঘোলার বাধ্যতামূলক পরিস্থিতি তৈরি হয়, আমরা সেক্ষেত্রে বিষয়টিকে আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা ‘ আজকাল’ পরিবারের ভালো চাই।

দেবাশিস দত্তর প্রথম পোস্ট:

আরও ভয়াবহ হয়ে উঠলো করোনা আতঙ্ক। আজকাল পরিবারে। না মৃত্যুর বা আক্রান্তের ভয় না। দুবেলা খাওয়ার লড়াই করতে হবে কয়েকশো পরিবার কে। ম্যানেজমেন্টের হাস্যকর এক সাক্ষরহীন নোটিশে। তাতে বলা হয়েছে কর্মী দের বেতন কাটা হবে ৫ থেকে ৩০ শতাংশ। এবং সেটা করা হল কর্মী সংগঠন কে অন্ধকারে রেখে।এটার কি কোনও দরকার ছিল ? আজকালে সরকার অনুমোদিত দুটি কর্মী সংগঠন আছে। মূল সংগঠনের সম্পাদক হয়ে আমার দায়িত্ব এর বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার। তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্বারস্থ হয়েছি সাংবাদিক-অসাংবাদিক কর্মীদের স্বার্থে। আজকাল পত্রিকার এডিটর অশোক দাশগুপ্ত, এবং আজকালে ১ % এর অধিক শেয়ার নেওয়া পদাধিকার বলে চেয়ারম্যান শিল্পপতি সত্যম রায় চৌধুরী বর্তমানে এক ধোঁয়াশা তৈরি করে এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। এবং শিল্প বিরোধী আইন কে উপেক্ষা করে চরম বেআইনি কাজ করে চলেছেন এই প্রতিষ্ঠান কে সামনে রেখে।

কর্মী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বহু চিঠি, সাক্ষাৎকার করেও কর্মীদের কোনো দাবি মেটাতে উদ্যোগী হয়নি। সাংবাদিকদের জন্য বেতনবোর্ডের সুপারিশ মানা হয়না। অশোক দাশগুপ্ত, সত্যম রায় চৌধুরীর মুখে একটাই কথা আজকাল অলাভজনক সংস্থা। অথচ সত্যম রায় চৌধুরী আজকাল লক্ষাধিক টাকায় বেতন দিয়ে প্রায় প্রতি মাসে উচ্চ পদে কর্মী নিয়োগ করছেন। আজকাল প্রতিষ্ঠানকে ভাঙিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে দেশ বিদেশে নানা বিনোদন অনুষ্ঠান করে চলেছেন। যখন কর্মীদের বেতন বোর্ডের সুপারিশ মনে বেতন দেওয়া হয়না তখন এই অনুষ্ঠানের স্বার্থকতা কোথায়?

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সরকারি বিজ্ঞাপন রাজ্যের ছোটো বড়ো প্রতিটি সাংবাদ মাধ্যম কে দিচ্ছেন। যাতে এই প্রতিষ্ঠান গুলো কর্মীদের পরিবার গুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। আজকাল ও যথেষ্ট বিজ্ঞাপন পায়। আজকাল ভাঙিয়ে সরকারের কাছ থেকে প্রচুর সুযোগ ও নিতে ভোলে না ম্যানেজমেন্ট। মমতা ব্যানার্জি সহ কেন্দ্রের নির্দেশ ও সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ থাকা সত্বেও বেতন কাটার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কে এই অমানবিক নির্দেশের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করার দাবি জানাই। বন্ধুরা প্রচুর শেয়ার করে এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করুন। অনুরোধ 🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏

দেবাশিস দত্তর দ্বিতীয় পোস্ট:

লকডাউনের সুযোগে আজকাল কর্তৃপক্ষ বেতন কাটা শুরু করলেন। মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, আইনকে তোয়াক্কা না করেই। প্রতিবাদে আজকালের দুটি কর্মী সংগঠনের কর্মীরা লড়াইয়ে নেমেছেন পোস্টার, ব্যানার লাগিয়ে। প্রতিবাদের আজ দ্বিতীয় দিন। দুপুরে হঠাৎ কর্তৃপক্ষের তরফে ফোন, বিকেল ৪ টায় কর্মী সংগঠনের সঙ্গে কথা বলবেন। ৩ টায় গাড়ি এসে হাজির বাড়িতে। যথাসময়ে পৌঁছে গেলাম অফিসে। ঢুকেই গন্ধ পেলাম প্রতিবাদের । ফোনে যে ভাবে বলেছিলাম সেই ভাবেই নির্দেশ পালন করেছে দুটি সংগঠনের কর্মীরা। সংগঠনের সম্পাদক হয়ে মনটা গর্বে ভরে গেল। আরেকটি সংগঠনের সম্পাদক আনিসুর রহমান ( মুকুল ), অনুজিৎ, লোপামুদ্রা, শুভাশিস, মিহির , খোকন, ভোলা দা , গৌরী, সহ বহু কর্মীর লড়াইয়ে উৎসাহ দেখে সত্যি আমি মুগ্ধ। করোনার থেকে নিজেদের এবং অশুভ শক্তির থেকে আজকাল কে বাঁচাতে এরাই আগামীর হাতিয়ার।

কি হল আজ ? আজকাল কতৃপক্ষ কথা বলবে বলা হলেও মিটিং করবেন কর্তৃপক্ষের তৈরি একটি কমিটি। না আমরা এঁদের সঙ্গে মিটিং এ বসতে অস্বীকার করি, প্রতিবার কতৃপক্ষ বলতে আমাদের সঙ্গে কথা বলেন, এডিটর অশোক দাশগুপ্ত। তিনি উপস্থিত নেই। তবে এরা কারা ? যাঁরা বলেন, ” আমরা ইউনিয়ন বুঝিনা। কিছু ছেলে অফিসে প্রতিবাদ করেছে তাই তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাই ” । বুঝুন ঔদ্ধত্য। সংবিধান শ্রমিক সংগঠনের অধিকার দিলেও কর্তৃপক্ষের তৈরি করা বেআইনি কমিটি সরকার স্বীকৃত ইউনিয়নই মানতে চায় না। এদের সঙ্গে আবার কিসের আলোচনা। আমি সরাসরি বলে দিলাম আমরা আপনাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাইনা। লড়াই আমাদের জারি থাকবে।
আজকালের চেয়ারম্যান সত্যম রায় চৌধুরীর কাছে একটা অনুরোধ, আপনাদের নির্দেশে আজকাল কর্মীদের বেতন কাটা শুরু হয়েছে। আপনিও আপনার যত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে সেখানে সব পড়ুয়াদের মাসিক বা সেমিস্টারের বেতন মুকুব করে দিন। কারন তাদের অভিভাবকরাও হয়তো হতভাগ্য আজকাল কর্মীদের মতোই অবস্থা। তাঁদের কর্মস্থলেও আপনাদের মতো কোনো কতৃপক্ষ হয়তো বেতন কাটার নোটিশ দিয়েছেন। এডিটর অশোক দাশগুপ্ত ও চেয়ারম্যান সত্যম রায় চৌধুরী কে সংগঠনের পক্ষ থেকে একটাই কথা। সংবাদপত্র একটা শিল্প প্রতিষ্ঠান। সেখানে সাংবাদিক- অসাংবাদিক সবাই শ্রমিক। শ্রমিকদের ভাতে মারবেন। অথচ তাদের অধিকার,সংগঠন কে মানবেন না। এটা হয়না। হতে দেবো না আমরা। আসুক হুমকি, চলবে লড়াই ।

দেবাশিসবাবুর দুটো পোস্ট দেওয়া হল।
ম্যানেজমেন্ট কিছু বললে তাদের যুক্তিও নিশ্চয় প্রকাশ করব।

আমরা চাই, মিডিয়ায় স্থিতিশীলতা থাকুক। পরিচিত হাউসের অন্দরমহলে এহেন অবস্থা চললে মিডিয়ার পক্ষে ক্ষতিকর।

সত্যম রায়চৌধুরী এবং অশোক দাশগুপ্ত, আপনারা এই জটিলতার অবসানে কার্যকর উদ্যোগ নিন। নিজেদের পরিচয়বৃত্তের চাপ দিয়ে কর্মীদের বক্তব্যকে থামানো ঠিক হবে না। এতে ভবিষ্যতের জন্য পরিবেশ বিঘ্নিত থাকবে। কাগজের অ আ ক খ না জানা আমদানিকৃত ব্যক্তিরা আন্তরিকভাবে বিষয়টি জানার আগেই ফতোয়াবাজির ঔদ্ধত্য দেখালে তাকে ম্যানেজমেন্টের দক্ষতা বলে না। অযোগ্যতা বলে। সাজানো বাগানটা ধ্বংস করা ঠিক কাজ হবে না।

Previous articleকলকাতার বাঙালির হাতে তৈরি হচ্ছে সস্তার করোনার কিট!
Next articleকালবৈশাখীর দাপটে সপ্তাহব্যাপী রাজ্যজুড়ে ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস হাওয়া অফিসের