ত্রাণের সঙ্গে এবার অনলাইন পড়াশুনার জন্য স্মার্ট ফোন দিচ্ছেন মঞ্জুদেবী! কী তাঁর পরিচয়?

উত্তর কলকাতায় বেড়ে ওঠা। বর্তমানের ঠিকানা সুদূর আমেরিকা। মঞ্জু বাসু প্রায় ৩৮ বছর দেশের বাইরে, কিন্তু দেশের প্রতি ভালবাসা তাঁর গভীর। বৃদ্ধ মা থাকেন এদেশে। তাই প্রতি বছর মা-কে দেখতে আসা। গত ৬ জানুয়ারি মা-কে দেখতে আসেন মঞ্জুদেবী। তারপর থেকে এখনও শহরবন্দি।

মঞ্জুদেবী ছোটবেলা থেকেই বাবাকে দেখতেন কোনওরকম প্রাকৃতিক দুর্যোগে হলে সাহায্যে ঝাঁপিয়ে পড়তে। কিন্তু আজকের মত পরিস্থিতি আগে কখনও দেখননি মঞ্জু।

এ কি? এ তো একরকমের যুদ্ধ, শত্রুর নাম করোনা, সৈনিক ডাক্তার আর নার্স। কী করে বসে থাকবেন তিনি? কিছু একটা করা দরকার। লকডাউনে আটকে গেলেন তিনি। আর মার্কিন মুলুকের ঘরে ফেরা হল না। তাই শুরু হল অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ভাবনা। পেয়ে গেলেন প্রতিবেশী তমিশ্রা দাসকে।

তমিশ্রা “প্রয়োজন” বলে একটি ছোট্ট মহিলা গোষ্ঠী-এর সঙ্গে জড়িত ছিল। এবার মঞ্জুদেবী যোগ দিতে তাঁদের ভিতটা আরও শক্ত হল।

মঞ্জু পেশায় প্রাক্তন ব্যাংকার। বাবা মারা যাবার পর ২০০২ সাল থেকে বাবার ইচ্ছায় নিয়োজিত হয়ে মরণাপন্ন রোগীদের মনে বাঁচার আশা জোগানোর কাজটাই পেশার সঙ্গে নেশা করে নিয়েছেন। পাশাপাশি নারী নির্যাতনের খবর পেল ছুটে যান মঞ্জুদেবী। উদ্ধার করে রাখেন অজানা শেল্টার হোমে অবশ্য এই কাজে একা নন তিনি। বাবার ভিটে দান করেন রামকৃষ্ণ মিশনকে। যেখানে এখন নিয়মিত চলে মহিলা স্বনির্ভরতার প্রশিক্ষণ।

গণমাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সাহায্যের আর্জি দেখে নিজেই বেরিয়ে পড়ছেন ত্রাণ নিয়ে। সঙ্গী প্রতিবেশী বান্ধবী তমিশ্রা দাস আর কিছু মহিলা স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে।

কলকাতা থেকে সুদুর গ্রামগঞ্জের অলিগলিতে সবার মতন ডাল,চাল-সহ ড্রাই ফুড, সাবান, মাস্ক বিলি করে চলেছেন।
ইতিমধ্যে ৬টা গ্রামে তাঁরা গিয়েছেন অন্নের ঝুলি নিয়ে! দাঁড়িয়েছেন আদিবাসীদের পাশে, অসহায়দের পাশে।

তমিশ্রাদেবী স্বামীহারা। নিজের কষ্ট ভুলতে চান অন্যের মুখে হাসি দেখে। নিঃসঙ্গতাই তার জীবন। দুই বন্ধু খবরে দেখছেন অনলাইনে পড়াশোনা। স্কুল বন্ধ। সরকারি স্কুলেও নাকি অনলাইন। কিন্তু সরকারি স্কুলে যারা পড়ে তাদের অধিকাংশের স্মার্ট ফোন নেই।

দুই বন্ধুর মধ্যে যুক্তি হলো, “যতদিন না স্কুল খোলে আমার আর তোর ফোনটা যদি কোনও মেধাবী ছাত্রর কাজে লাগে, লাগুক না। পড়া যেন না থামে”।

অনলাইন পড়াশোনার জন্য ভালো নেট ও মোবাইল প্রয়োজন। যারা কোনওমতে পেটের ভাত জুটিয়ে পড়াশোনা করাচ্ছে বাচ্চাদের। কোথা থেকে পাবে। তবে তো স্কুল না খোলা অবধি তার কষ্টের পড়াশোনায় ইতি…।

কে ভাবে? কেউ অন্তত ভাবে। দুই বন্ধু মিলে তাই জোগাড়ের কাজে নেমেছে চালু পুরনো স্মার্ট ফোন। আর শুধু একটা মোবাইলের জন্য যে দুঃস্থ মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া শেষ হতে বসেছিল, তারা এবার অনলাইন তাদের মুখে এখন। তমিশ্রাদেবী এবং মঞ্জুদেবী চালু করেছেন একটি হেল্প লাইন নাম্বার। কারও ঘরে পুরনো ফোন যদি থেকে থাকে এই সময় খেলার যন্ত্র না করে তুলে দিন কোন মেধাবী ছাত্রের হাতে। আপাতত লকডাউনে কাজ চালানোর মত অনলাইন পড়াশোনার করার জন্য যথেষ্ট পুরনো মোবাইল।

হোয়াটসঅ্যাপ ফেসবুক থেকে অনেক বেশি প্রয়োজনীয় এখন ওদের পড়াশুনা। দুই বন্ধু আপাতত নিজের দুটো ফোনই দিয়ে দেবেন কুমোরটুলি এলাকার রাম-রহিমদের হাতে। শনিবার তার ত্রাণ ঝুলিতে ডাল-চাল-মাস্ক সঙ্গেও আপাতত দুটি দূরাভাষ। ইচ্ছা থাকলেও উপায় নেই। ত্রান জোগাড় করতে লাগছে প্রচুর পরিমাণ অর্থ ।
জোগান দেওয়ার নেই কেউ তাই পুরনো ফোনের আর্জি রাখতে হচ্ছে পরিচিতদের মধ্যেই।

Previous articleকরোনা-আক্রান্ত আরজিকরের এক নার্স, কোয়ারেন্টাইনে ৩ চিকিৎসক ও ৭ নার্স
Next articleতাঁর আবেদনেই বাংলার জন্য আটটি ট্রেন বরাদ্দ করেছেন অমিত শাহ: অধীর চৌধুরী