চাপে বিজেপি, রাজ্যে রাশ সেই মমতার হাতেই

অপরাজিতা সেন

করোনাআবহে প্রথম দিকটায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকায় মুগ্ধ ছিলেন বিরোধীরাও।

কিন্তু তার পরের পর্যায়ে মাথাচাড়া দেয় বিজেপি ও বিরোধী দলগুলি। দুতিনটি কারণে মানুষের একাংশের মধ্যে কিছু বিভ্রান্তি তৈরির পরিস্থিতিও হয়। যেমন- মৃত্যুর সংখ্যা। কয়েকটি জায়গায় রেশনসমস্যা ইত্যাদি।

এর মূলত দুটি কারণ।
প্রথমত, এতবড় বিপদের জন্য কেউ প্রস্তুত ছিল না। থাকার কথাও নয়। ফলে সিস্টেমটা মসৃণ করতে সময় লেগেছে।
দ্বিতীয়ত, কিছু আমলা ও ডাক্তার সঠিক পরামর্শ দিয়ে সছিক ভূমিকা পালন করেননি।
তার সঙ্গে কেন্দ্রের বঞ্চনা তো ছিলই।

এই সময়ে, যখন কেন্দ্র, রাজ্যপাল, বিজেপি, বাম, কংগ্রেস একসঙ্গে সুর চড়াচ্ছে, বা কেন্দ্রীয় টিম চিঠির পর চিঠি ধরাচ্ছে; তখন দৃশ্যতই মনে হয়েছে নবান্ন চাপে।

কিন্তু কয়েকদিনেই পরিস্থিতি পাল্টে গিয়েছে।
আপাতত চাপে বিজেপিই।
ঠিক যে কারণে আবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লাগাম ধরে নিয়েছেন, সেগুলি হল:

1) অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। নিজে খুঁটিনাটি দেখছেন। কুৎসার কাউন্টারে কোমর বেঁধে নেমেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দল একসুরে তথ্য দিয়ে কথা বলছে।

2) মুখ্যমন্ত্রী রোজ সাংবাদিক বৈঠক করছেন না। এতে বিতর্কে জড়ানো কমছে। জরুরি ছাড়া তিনি সামনে নেই। মুখ্যসচিব রাজীব সিন্হার পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে এনেছেন। আলাপন সাংবাদিক বৈঠকে বসলে সেখানে মিডিয়ার কারিকুরি কমে যায়।

3) করোনাযুদ্ধে প্রচুর হাসপাতাল, শয্যা, চিকিৎসা, পরীক্ষা বাড়িয়ে ফেলেছে রাজ্য।

4) লকডাউন, সতর্কতার প্রচার হচ্ছে একেবারে এলাকাভিত্তিতে। তাই অন্য অনেক রাজ্যের তুলনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু কম।

5) রেশন সিস্টেম দ্রুত মসৃণ হচ্ছে। বাজারেও সরবরাহ মোটামুটি ঠিক। দামে নিয়ন্ত্রণ যতটা সম্ভব রাখা যাচ্ছে।

6) জরুরি পরিষেবা ও দৈনন্দিন জীবনের পরিকাঠামোগুলি পুরোপুরি স্বাভাবিক আছে। যেমন- বিদ্যুৎ, জল, সাফাই।

7) অসংগঠিত ক্ষেত্র ও বিপন্ন মানুষেরা পরিষেবা পাচ্ছে। লক্ষ্য করুন, অন্য রাজ্যে পরিযায়ীরা কাজ, খাবার না পেয়ে বাড়ি ফিরতে মরিয়া। এরাজ্য থেকে ফেরার চাপ কার্যত নেই।

8) সরকারের পাশাপাশি তৃণমূল এলাকাভিত্তিকভাবে সক্রিয়। যেকোন বিপদে মানুষের পাশে থাকছে।

একটা বড় সমস্যার সময়ে সিস্টেমকে 100% ত্রুটিমুক্ত রাখা কঠিন। কিন্তু দ্রুত সব ড্যামেজ কন্ট্রোল করে ফেলেছেন মমতা।

এদিকে এবার কেন্দ্রের ফাঁকগুলো ধরা পড়ে যাচ্ছে।
পরিযায়ীদের কথা না ভেবে, সময় না দিয়ে লকডাউন ঘোষণা থেকে শুরু করে এই ফাঁপা আর্থিক প্যাকেজ।

প্রথম লকডাউন শুরুর সময় রাজ্যগুলির সঙ্গে কথা বলেননি প্রধানমন্ত্রী। এখন কথা বলতে হচ্ছে। রাজ্যের উপর অনেক সিদ্ধান্তের ভার ছাড়তে হচ্ছে।

বাংলার মানুষ এখন সবটা বিচার করছেন। দেখছেন গুজরাট, মহারাষ্ট্রর কী হাল।

ফলে এখন গুরুত্ব হারিয়েছে রাজ্যপালের পত্রাবলী। বিরোধীদের অপপ্রচার। কোথাও কোনো ফাঁক থাকলেই সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। আর এই কাজ এবং অদম্য মানসিকতা দিয়েই রাজ্যে আবার লাগাম ধরে নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Previous articleআমেরিকায় কমছে করোনা মৃত্যুর হার, এবার আক্রান্ত লাফিয়ে বাড়ছে রাশিয়ায়
Next articleরাজ্যপালকে পাল্টা, ভাটপাড়া সমবায় ব্যাঙ্ক কেলেঙ্কারির তদন্ত দাবি