এক বিদ্যুৎকর্মীর কলমে

সন্দীপ চক্রবর্তী

যে পোস্টে আর যে ক্যাপাসিটিতেই চাকরি করি না কেন, দিনের শেষে আমি একজন ইমার্জেন্সি এমপ্লয়ী। আমি বিদ্যুৎকর্মী। বিশ্বাস করুন, গত আটচল্লিশ ঘন্টায় আমাদের দপ্তরের কেউ ঘুমায়নি। আমাদের মোবাইল ভ্যানস, রেস্টোরেশন টিম দিন রাত এক করে ফিল্ডে আছে।

প্লিজ বুঝুন, দুই পরগণা ধ্বংসস্তুপ হয়ে গেছে। ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ জেলা। প্রতি কিলোমিটারে গড়ে সাতটা করে গাছ পড়ে আছে। গুনে শেষ করা যাবে না এত পরিমাণে ইলেকট্রিক পোল ভেঙে পড়ে আছে সর্বত্র৷ যেগুলো দাঁড়িয়ে আছে সেগুলোর বিশাল শতাংশ ড্যামেজড। অগুন্তি জায়গায় ট্রান্সফরমারে দাউদাউ করে আগুন লেগেছে। এমতাবস্থায় যদি পাওয়ার চার্জ করা হয়, মুড়িমুড়কির মতো মানুষ মরে পড়ে থাকবে। জমা জলে, ছেঁড়া তারে যে পরিমাণ ইলেকট্রিকাল অ্যাক্সিডেন্টস হবে, তা ধারণার বাইরে। বাড়ি ঘরদোর আর ইন্টারনাল ওয়্যারিংগসের যে ক্ষতি হয়েছে তা বাদই দিলাম। এটা ইলেকট্রিক্যাল নেটওয়ার্ক, সাপের ছোবলের মতো ভয়ানক একটা ব্যাপার।

রাজ্যজুড়ে এই ভাস্ট ইলেক্ট্রিকাল নেটওয়ার্কটা যেভবে লণ্ডভণ্ড হয়েছে তা আগের জায়গায় রেস্টোর করতে যতদিন লাগা উচিত, আমরা সবাই জানি ততদিন আপনারা আমাদের দেবেন না। জল, আলো, চার্জ, ইন্টারনেট না থাকায় অনেকেই অস্থির হয়ে উঠেছেন। স্বাভাবিকও। কিন্তু বুঝুন যারা কাজ করছে নাওয়াখাওয়া ভুলে তারাও মানুষ, তাদেরও পরিবার, সংসার আছে, এবং লিখে রাখুন এই রেস্টোরেশন প্রসেসে তাদেরও অনেকে প্রাণ হারাবে। সামান্য ভুলে পোলের মাথায় কাজ করতে করতে ঝরে পড়বে মৃতদেহ। এটা হয়, এটাই হয়েই থাকে।

ইতিমধ্যেই বিভিন্ন অফিসে চড়াও হওয়া শুরু হয়েছে। টেবিল চেয়ার উল্টে মারধোর করা হচ্ছে কারেন্ট নেই বলে। মার খাচ্ছে কর্মীরা। ঝড়ে আমার নিজের বাড়িতে এখনও চুরমার হয়ে থাকা কাচ পড়ে আছে সর্বত্র। জল নেই। সেসব অ্যাড্রেস করার সময়ও নেই। আমরা সহানুভূতি চাইনা, শুধু একটু বুঝুন, সহযোগিতা করুন।

পার্শিয়াল চার্জিং শুরু হয়েছে। যুদ্ধকালীন সার্কুলার হয়েছে। ড্রিংকিং ওয়াটার সোর্স, ইর‍্যিগেশন সোর্স, হাসপাতাল এবং টেলিকম টাওয়ার-এর ক্ষেত্রে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে।

দু-তিনটে দিন একটু কষ্ট সহ্য করে নিন। অন্তত নিজেদের প্রাণের স্বার্থে। প্লিজ।

Previous articleসিইএসসি নিয়ে সামান্য দুচারটি কথা, কুণাল ঘোষের কলম
Next articleসোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিয়ে কলেজ স্ট্রিটের ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহ