এখনই পঙ্গপালের ঝাঁক আটকাতে না পারলে ভারতের শস্যভাণ্ডারে টান পড়বে

প্রায় ৬টা রাজ্যের শস্যভাণ্ডারকে বিপর্যস্ত করার পর, শেষ খবর অনুযায়ী, কয়েক কোটি পঙ্গপাল এখন দিল্লি থেকে ২০০ কিমি দূরের আকাশে ভাসছে৷ পরবর্তী ‘স্টেশন’ দিল্লি৷

ভারতে ক্রমশই আতঙ্ক ছড়াচ্ছে পঙ্গপালের ঝাঁক। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এখনই এদের আটকাতে না পারলে ভারতে শস্যভাণ্ডারে টান পড়তে পারে। মাইলের পর মাইল শস্য মুহূর্তে ধ্বংস করছে এই পঙ্গপাল। গত তিন দশকে পঙ্গপালকে ঘিরে এমন আতঙ্ক ছড়ায়নি দেশে।

কোথা থেকে আসছে এই পঙ্গপালের ঝাঁক?

এতদিন সন্ত্রাসবাদের আঁতুরঘর নামেই বিশ্বজোড়া ‘খ্যাতি’ ছিলো প্রতিবেশী পাকিস্তানের৷
এখন তা হয়ে উঠেছে ভয়ঙ্কর জাতের পঙ্গপালের উর্বর প্রজনন ক্ষেত্র। অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে পাক- এলাকায় তাঁরা বংশবৃদ্ধি করছে আর তারপর সীমান্ত পেরিয়ে দল বেঁধে অনুপ্রবেশ করছে ভারতে।
এই পতঙ্গগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের শক্তি আরও বাড়িয়ে তুলছে।
ইতিমধ্যে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে রাজস্থান, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাতে। পরিস্থিতি এমনই, বিপন্ন হতে পারে দেশের খাদ্যসুরক্ষা! কয়েক হাজার কোটি টাকার ফসল ইতিমধ্যেই ধ্বংস হয়েছে৷ এখনও বিপদ কাটেনি৷ পাকিস্তানে লাগাতার বংশবৃদ্ধি হচ্ছে ফসল ধ্বংসকারী পঙ্গপালের৷ আর ঢুকে পড়ছে ভারত-ভূমে৷ পতঙ্গ বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস, নতুনভাবে ধেয়ে আসছে প্রায় ৩ কিমি দীর্ঘ পঙ্গপালের ঝাঁক৷ পশ্চিম, উত্তর ও মধ্য ভারত হয়ে এই মুহুর্তে মহারাষ্ট্র পৌঁছে গিয়েছে পঙ্গপাল-ঝাঁক, এমনই দাবি করেছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা৷ কৃষি মন্ত্রক দেশের ৩০৩টি এলাকায় প্রায় ৪৭ হাজার হেক্টর জমিতে এই পতঙ্গকে শায়েস্তা করতে উদ্যোগ নিয়েছে। রাজস্থানের ২০টি জেলা, মধ্যপ্রদেশের ৯টি জেলা, গুজরাতের দুটি আর উত্তরপ্রদেশ এবং পাঞ্জাবের একটি করে জেলায় পতঙ্গ-প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে কৃষি মন্ত্রক। কিন্তু এখনও থামানো যায়নি এই পালের “সন্ত্রাস”৷ কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত ৩ দশকে ভারতে এমন বিপজ্জনক হামলা হয়নি৷
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ঠেলায় যখন অস্থির গোটা দেশ, ঠিক সেই সময় পঙ্গপালের হানা। কৃষিমন্ত্রকের বক্তব্য, মূলত পাকিস্তান থেকেই এই ফসল ধ্বংসকারী পঙ্গপাল ঢুকছে এদেশে।
প্রতিদিন ৫০-১০০ কিমি পথ অবলীলায় পেরোতে পারে পঙ্গপালের ঝাঁক।
পাক সীমান্ত এলাকা দিয়ে ২-৩ দিন অন্তর ঝাঁকে ঝাঁকে পঙ্গপাল প্রবেশ করছে। পাকিস্তান পঙ্গপালের নতুন এক প্রজননভূমিতে পরিণত হয়েছে। সেখান থেকেই মূলত রাজস্থান সহ ভারতের একাধিক রাজ্যে পঙ্গপালের হামলা চলছে। পঙ্গপালের চারটি বড় ঝাঁক জয়পুরে ঢুকেছে৷ কৃষিমন্ত্রক জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে, প্রায় ৬ কিমি দৈর্ঘ্য এবং ১ কিমি প্রস্থ এলাকা ধরে ঘুরে বেড়ানো পঙ্গপালের ঝাঁককে ধ্বংস করা হয়েছে। কোথাও আবার পঙ্গপাল তাড়াতে ফসলের ক্ষেতে তারস্বরে বাজানো হচ্ছে ডিজে৷ গত কয়েক দিন ধরেই উত্তর ভারতে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে পঙ্গপালের ঝাঁক।

◾পঙ্গপালদের দেখতে সাধারণ ফড়িংয়ের মতো। সাধারণত একা একাই ঘুরে বেড়ায় এরা। কিন্তু শুকনো মরশুমে দল বেঁধে একসঙ্গে খাবারের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে তারা। মাঠের পর মাঠ ফসল এরা নিমেষে সাফ করে দিতে পারে৷

◾পঙ্গপাল শুধুই গাছপালা খায়। বর্ষার আগে শুখা মরশুমে দল বেঁধে সবুজ ক্ষেতে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

◾পরস্পরের কাছাকাছি এলে তাদের শরীর থেকে এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়। তারা আরও নিবিড় হয়ে ওঠে। পরে বর্ষায় তারা প্রচুর পরিমাণে সন্তান উৎপাদন করে।

◾খুব দ্রুত এরা এক এলাকা থেকে অন্যত্র যেতে পারে।

◾এক এক ঝাঁকে লক্ষ লক্ষ পঙ্গপাল থাকতে পারে।

◾এক দিনেই পঙ্গপাল বহু মাইল পাড়ি দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

◾দীর্ঘ সময় পঙ্গপাল বাতাসে ভেসে থাকতে পারে।

◾কয়েক হেক্টরের একটি শস্যক্ষেত্রকে ২-৩ ঘণ্টায় খালি করে দিতে পারে।

◾পূর্ব আফ্রিকা, সুদান, সৌদি আরব ও ইরান থেকে পাকিস্তান এবং সেখান থেকে ভারতে ঢুকছে৷

◾রাজস্থানের ৩৩টি জেলার ১৬টি এখন পঙ্গপাল কবলিত। রাজ্যের রবিশস্য উৎপাদন বিপন্ন।

◾এই সপ্তাহেই মধ্যপ্রদেশে প্রবেশ করেছে পঙ্গপালের ঝাঁক। মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহর বিধানসভা কেন্দ্র বুধনিতে ঢুকে পড়েছে পঙ্গপাল।

◾পরে রাজ্যের অন্যত্রও ছড়িয়ে পড়ছে৷

◾মধ্যপ্রদেশের কৃষি দফতর কৃষকদের বলছে পঙ্গপাল হানা দিলে তাদের প্রবল শব্দ করে তাড়িয়ে দিতে। সেজন্য ড্রাম, থালাবাটি বাজানো এবং চিৎকার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

◾বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, দ্রুত এই পঙ্গপালদের থামানো না গেলে তারা ৮,০০০ কোটি টাকার মুগ শস্য নষ্ট করে দেবে।

◾শস্য বিনষ্টকারী সমস্ত ক্ষতিকর পতঙ্গের মধ্যে পঙ্গপালকে শীর্ষে রেখেছে রাষ্ট্রসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ‘এফএও’।

◾বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণেই পঙ্গপালের আগমনের কারণ হতে পারে।

Previous articleবাংলাদেশের গায়ক নোবেলের বাবা করোনা আক্রান্ত
Next articleকরোনা-আমফান বিপর্যয় মোকাবিলায় অভিষেকের সাংগঠনিক বৈঠক