রবিনসন স্ট্রিটের পুনরাবৃত্তি হাওড়ায়, ৩দিন বাবার মৃতদেহ আগলে বসে থাকল মেয়ে!

রবিনসন স্ট্রিটের পুনরাবৃত্তি এবার হাওড়ায় । বাবা মারা গিয়েছেন তিনদিন আগে। অথচ ঘরের মধ্যে বাবার মৃতদেহের দিকে তাকিয়ে ৩ দিন ধরে ঠায় বসে মেয়ে!
শুধুমাত্র তাই নয়, কখনও জলমুড়ি  , আবার কখনও দীর্ঘদিন পরে থাকা সিঙ্গারা মুড়ি খেয়ে ওই তিনদিন কাটিয়েছে মেয়েটি।  প্রতিবেশীরা ঘুণাক্ষরেও মালুম করতে পারেন নি ঘটনার । তারা জানিয়েছেন, কয়েকবছর আগে মৃত্যু হয় তরুণীর মায়ের । তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন ।
এরপর থেকে পেশায় চক্ষু চিকিৎসক বাবা আর মেয়ে থাকতেন বাড়িতে । কিন্তু মায়ের মৃত্যুর পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন মেয়ে ।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মৃত অমল কুমার মান্না হাওড়ার জগাছার শিয়ালডাঙায় একটি দ্বিতল বাড়ির ওপরতলায় ভাড়া থাকতেন । বিশিষ্ট চক্ষু চিকিৎসক হিসাবে এলাকায় যথেষ্ট সুনাম ছিল তাঁর । মেয়েও পড়াশোনায় মেধাবী। কিন্তু মায়ের মৃত্যুর পর শোকে মেয়েটিও মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে । ওই চিকিৎিসক নিজেই মেয়ের দেখাশুনা করতেন । এমনকি বাড়ির সব কাজ তিনি নিজেই করতেন । বৃদ্ধ বাবার মৃতদেহ প্রায় তিনদিন ধরে ঘরে আগলে বসে থাকলেও, দেহে পচন ধরে দুর্গন্ধ বেরোতে শুরু করে । সেই দুর্গন্ধ সহ্য করতে পারেননি মেয়েটি। বাধ্য হয়ে এলাকার চা বিক্রেতাকে গিয়ে ঘটনার কথা জানান ।তিনি মেয়েটিকে নিয়ে হাজির হন জগাছা থানায় । পুলিশ মেয়েটিকে নিয়ে বাড়িতে এসে দেখে , বৃদ্ধ চিকিৎসকের দেহ পরে রয়েছে মেঝেতে । পচন ধরা মৃতদেহের পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে কিছু খাবার । দুর্গন্ধে টেঁকা যাচ্ছে না ।
অমল কুমার মান্না (৭০) নামের ওই চক্ষু চিকিৎসক প্রত্যেকদিন মেয়েকে সঙ্গে নিয়েই কলকাতার চেম্বারে যেতেন বলে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন। গত এক সপ্তাহ ধরে তাদের দু’জনকেই বাড়ি থেকে কেউ বেরতে দেখেননি । ঘন্টা তিনেক পরে যখন বাড়ি থেকে দেহ বের করা হয়, ততক্ষণ রাস্তার ধারে দুটি ব্যাগ ভর্তি বই নিয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে ছিলেন চিকিৎসক কন্যা অনিতা মান্না । পুলিশ ও প্রতিবেশীরা বার বার তাকে খাওয়ার দিলেও সে কিছুই মুখে তোলেনি । বার বার সে আবেদন জানায়, তাকে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হোক, তার বাবা অসুস্থ ।
তবে ওই প্রৌঢ়ের মৃত্যু করোনাভাইরাসের জন্য কিনা তা নিয়ে ধন্দে পুলিশ । যদিও পুলিশ কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি হয়নি। মেয়েটিকে উদ্ধার করে ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়ে দেওয়া হয় । এরপর তার করোনা পরীক্ষা করা হবে। ফলাফল নেগেটিভ হলে মেয়েটিকে হোমে পাঠানো হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে ।

Previous articleকরোনা প্রতিরোধে এবার ‘ইমিউনিটি সন্দেশ’! পাওয়া যাচ্ছে কলকাতাতেই
Next articleবাতিল ভারত-শ্রীলঙ্কা সিরিজ, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কবে ফিরবে বিরাটরা?