চিনের বাড়াবাড়ির কারণ খুঁজেই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে, কুণাল ঘোষের কলম

কুণাল ঘোষ

চিন কেন বাড়াবাড়ি করছে, তার কারণটা খুঁজতেই হবে

লাদাখকে ছুতো করে বাড়াবাড়ি করছে চিন।
এখনও সীমান্তে উত্তেজক পরিবেশ অব্যাহত।

কেন চিন বাড়াবাড়ি করছে, তার কারণগুলোর দিকে তাকাতেই হবে। এবিষয়ে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতামতগুলি বিশ্লেষণ করে উপসংহারে আসা যায়-

1) করোনা ভাইরাস নিয়ে বিশ্বের কাঠগড়ায় চিন। নজর ঘোরানো।

2) চিনের মধ্যেই আবার করোনা মাথাচাড়া দেওয়ায় সরকার বিব্রত। জনগণ ক্ষুব্ধ। তা থেকে বিষয়টা সরানো।

3) করোনার পর চিন থেকে অনেক সংস্থা ব্যবসা গুটোচ্ছে। ভারত তার মধ্যে কিছু লগ্নিকারীকে টানতে চাইছে। বিষয়টি গোপন নেই। এখন ভারতকে অস্থিরতার মধ্যে রেখে সেই লগ্নিকারীদের চিনত্যাগ বিলম্বিত করা। ততদিনে আবার ঘর গুছিয়ে নেওয়া।

যদি এই তৃতীয় কারণটি গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে চিনের উৎপাত আপাতত চলতে থাকবে।
প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে ভারত সরকার সম্পর্ক খারাপ করে রেখেছে। তার সুযোগ নিয়েই উত্যক্ত করবে তারা।

প্রশ্ন, তাহলে আমরা কী করব?
শুধু রাজনৈতিক তরজা?

চৌকিদার কোথায়? 56 ইঞ্চি কোথায় গেল? এইসব বিপ্লব??
আবার বলছি, আমি বিজেপির রাজনৈতিক বিরোধী। কিন্তু এই সময় এই ফাজলামির বিরুদ্ধে।

এটা মোদি কতবার চিন গিয়েছেন বা কেন আলোচনায় মেটেনি, এটা এখন আলোচ্য নয়।
চিন যদি তাদের বাধ্যবাধকতায় ভারতকে উত্যক্ত করার কৌশল নেয়, তাহলে সেক্ষেত্রে কোনো আগাম ওষুধই কাজ করার কথা নয়।

সমালোচনার আগে মনে রাখুন: আমাদের উত্তরবঙ্গে কতবার গেছেন রাজ্যের শাসকদলের নেতানেত্রীরা। কত বৈঠক হয়েছে। কত কাজ হয়েছে। অথচ লোকসভাতে বিজেপির রমরমা। তাহলে সফরকে কটাক্ষ করে কী লাভ? তৃণমূল, কংগ্রেস, বাম- কারুর সফর উত্তরবঙ্গে কাজ করেনি।

এখন মোদির চিন সফর তুলে অকারণ কথা না বলাই ভালো।

আমাদের আজব গণতন্ত্র।
দেশের সমস্যার সময়েও প্রাণখুলে সরকারের বাপান্ত করা যায়। তারপর আমরাই বলি, দেশে গণতন্ত্র শেষ। সহিষ্ণুতা খতম।

রাহুল গান্ধীও কত কী জানতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রীর থেকে।
তিনি জওহরলাল নেহরুর থেকে চিন সঙ্কটের আর যুদ্ধের গল্পটা জেনে ওঠার সুযোগ পাননি; একটু পড়ে নিলেও তো পারেন।

আর নেটিজেনরা? ভারত সেনাঅভিযান না করলে বলা হবে, 56 ইঞ্চির দম নেই। সেনাঅভিযান করলে বলা হবে, আর্থিক সঙ্কট থেকে নজর ঘোরাতে মোদির খেলা !! বাতেলায় যে জি এস টি নেই।

যদি সত্যিই চিন তাদের স্বার্থে ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়িয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে সেটা যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয়।

একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হলে আলোচনায় মিটতে পারে।
কিন্তু পরিকল্পিত বজ্জাতি হলে তা সহজে মিটবে না।

পরিস্থিতির সঠিক মূল্যায়ন করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতেই হবে ভারতকে।

সর্বদল বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ শীর্ষনেতারা থাকবেন বলেছেন, এটা অত্যন্ত ইতিবাচক ইঙ্গিত।

যদি ভারত নিশ্চিত হয়, চিন অসভ্যতা চালাবে, তাহলে যেকোনোরকম বড় পদক্ষেপের জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতেই হবে।

কিন্তু, এটাও দেখতে হবে, অতি আবেগে ভারতে বসবাসকারী চিনা বংশোদ্ভুতদের যেন কোনো ক্ষতি না হয়। শ্রমজীবীদের যন্ত্রণা দিয়ে চিনা খাবার, চিনা রেস্তোরাঁ বন্ধের ডাক দেওয়ার জোলো মূর্খামিও বরদাস্ত করা যাবে না। চিনা দ্রব্য বয়কটের শ্লোগান শুনতে ভালো; কিন্তু দেখতে হবে, তার বিপণনের সঙ্গে এতদিনে এখানকার বহু মানুষের আয় জড়িয়ে আছে কি না। চিনা দ্রব্য বয়কট হোক। তবে হুজুগে নয়। বাস্তব মেনে। যা করতে হবে সেটা ভারতের স্বার্থ অটুট রেখে।

চিন বজ্জাতি করছে।
মাথা উঁচু করে মোকাবিলা করুক দেশ।
সেনার হাতে থাক পূর্ণ স্বাধীনতা।
একমত থাকুক রাজনৈতিক দলগুলি।
এবং এই ইস্যুতে, আত্মঘাতী পণ্ডিতি বন্ধ করে এককাট্টা থাকি আমরা সবাই, অন্তত হাতের ফোনটাতে।

Previous articleভারতে করোনা: ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড আক্রান্ত, তবে সুস্থতার হারও বেড়ে প্রায় ৫৪ শতাংশ
Next articleকরোনা রোগীর মরদেহ “ছিনতাই”! তারপর যা হলো