নায়িকার চরিত্র পাইনি, প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার প্রেম চলছিল, নেপোটিজম নিয়ে বিস্ফোরক শ্রীলেখা

৩৪ বছর বয়সে বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের চলে যাওয়া ঠিক মেনে নিতে পারছেন না নেটিজেনরা। তাঁর অবসাদের কারণ থেকেই তাঁর এই সিদ্ধান্তের কথা বলছেন বলিউড থেকে টলিউডের বহু অভিনেতা-অভিনেত্রী। তবে নেপোটিজম কি শুধুমাত্র বলিউডেই? রয়েছে টলিউডেও। এমন কিছু অভিজ্ঞতা নিয়ে মুখ খুললেন টলিউড অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। তিনি নিজের ইউটিউব চ্যানেলে এসে একটি লাইভ ভিডিও করেন। তাতে তিনি নিজের ডিপ্রেশন, প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার প্রেম কাহিনীর কারণেই তিনি নায়িকার চরিত্র পাননি এবং নেপোটিজম নিয়েও কথা বলেন।

শ্রীলেখার কথায়, “ডিপ্রেশন আছে থাকবে। এটাকে নিয়ে আমি বহু বছর ধরে লড়াই করছি। করব। আমি আত্মহত্যাপ্রবণ নই। একটা সময় ছিলাম।”

এরপর শ্রীলেখা তার কেরিয়ারের একদম শুরুর কথা বলেন। ওড়িয়া ছবি এবং টিভি সিরিয়াল দিয়ে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন শ্রীলেখা।
তিনি জানান, “ইন্ডাস্ট্রিতে আমার কেউ নেই। আগেও ছিল না এখনও নেই।” এই কারণেই তিনি সুশান্তের সঙ্গে নিজেকে খুব রিলেট করতে পারছেন বলে জানান।

শ্রীলেখা জানান ইন্ডাস্ট্রিতে সবসময় একটা পাওয়ার গেম চলে। তিনি বলেন, “যে প্রযোজক-পরিচালক বা স্বনামধন্য নায়কের কাছে ক্ষমতা আছে তিনি তাঁর ব্যবহার করেন। সুন্দরী মহিলারা যদি নিজেদের অস্তিত্বের জন্য লড়তে থাকে সেটা যেন ইন্ডাস্ট্রি মেনে নিতে পারে না। তাই প্রথম দিন থেকেই আমি মিস ফিট ছিলাম।”

এরপর প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর জুটি সম্বন্ধে বা তাঁদের প্রেমকাহিনী নিয়ে মুখ খোলেন শ্রীলেখা। তিনি জানান, “প্রথমদিকে আমি নায়িকার কোনও চরিত্র পাইনি। তখন ইন্ডাস্ট্রিতে এক নম্বরে ছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তখন বোনের চরিত্র করেছি। সেকেন্ড লিড করেছি। যদিও আমি জানতাম আমি নায়িকা হওয়ার যোগ্য। কিন্তু সেই সময় ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের সঙ্গে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের প্রেম।”

এরপর তিনি টলিউড অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে বলছেন, “আমাদের সমাজটাই পুরুষতান্ত্রিক। তাই টলিউড তার বাইরে হবে এটা আমরা আশা করতে পারি। বুম্বাদার কথাতেই সমস্ত কিছু চলত। বুম্বাদার একটা আলাদা চেয়ার থাকত। আমি দেখতাম বুম্বাদা চেয়ারের উপর পায়ের উপর পা তুলে বসে আছেন। কিন্তু পরিচালকরা মাটিতে বসে তাঁর সঙ্গে কথা বলছেন। ঋতু অর্থাৎ ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত দেরি করে শ্যুটিং ফ্লোরে আসত। সবাই ওর জন্য অপেক্ষা করত। কিন্তু তাও ওকেই নেওয়া হতো পরের ছবিতেও। কিন্তু আমাদের সব সময় প্রমাণ করতে হত যে আমরা সময়ানুবর্তিতা মেনে চলি। কিন্তু প্রসেনজিৎ ঋতুপর্ণা জুটি। এই জুটি তো ভাঙবার নয়। ছবি না চলুক ও তবুও এরাই এখন ছবি করবে।”

শ্রীলেখা মিত্র জানান, তাঁকে ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকতে টেলিভিশন বা সাইট ক্যারেক্টার করতে হয়েছে। তবে তখন বড় পর্দার তুলনায় টেলিভিশনেই কাজ পাচ্ছিলেন তিনি। সেই কারণে স্থায়ীভাবে টেলিভিশনেই কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

তিনি জানিয়েছেন, “ইন্ডাস্ট্রিতে আমি কোনও জুটি তৈরি করতে পারিনি। সব নায়ক ততদিনে জুটি বেঁধে ফেলেছেন। প্রথমে প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা তারপর প্রসেনজিৎ-অর্পিতা, জিৎ-স্বস্তিকা, তারপর স্বস্তিকা-পরমব্রত।

তিনি এই জুটিদের সম্পর্কে জানিয়েছেন, “যে নায়িকার সঙ্গে নায়কের প্রেম ছিল তাঁরা জুটি হিসেবে কাজ পেতেন। এটা যেন প্যাকেজ ডিল ছিল। আমার কোনও নায়ক পরিচালক বা প্রযোজকের সঙ্গে প্রেম হয়নি। তাই কাজটা আমায় দেবে কে? তার উপরে আমি সোজা কথা সোজা ভাবে বলতে ভালোবাসি। মহিলা হওয়ার আলাদা কোনো সুবিধা নিতে পছন্দ করি না।”

শ্রীলেখা বলেন “সাগর বন্যা ছবির শুটিংয়ে আমরা দিঘা যাচ্ছিলাম। ওই ছবিতেই ছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ইন্দ্রানী হালদার। আমার গাড়িতে আমি ও আমার মা ছিলাম। তখন একটি অ্যাক্সিডেন্ট হয়। আমি দিঘা হাসপাতালে ভর্তি হই। পরিচালক দেখতে এসেছিলেন। কিন্তু প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় দেখতে আসার সময় পাননি। কারণ আমি তো কেউ নই তখন।”

শ্রীলেখা জানান, এই ছবিটি অশোক ধানুকার প্রযোজনায় ছিল। সঙ্গে ছিল বাংলাদেশের কোলাবরেশন। কিন্তু দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ার জন্য অভিনেত্রী সে ছবিতে অভিনয় করতে পারেননি। প্রযোজক অশোক ধানুকা সেই সময়ে তাঁকে তাঁর প্রাপ্য টাকার বদলে একটি হরলিক্সের শিশি নিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। অশোক ধানুকা কথা দিয়েছিলেন, একার প্রযোজনায় ছবি করলে শ্রীলেখা’কেই নায়িকার চরিত্রে নেবেন। জানান শ্রীলেখা।

অভিনেত্রী বলেন, এরপরে প্রযোজক অশোক ধানুকার অন্নদাতা ছবির নায়িকার চরিত্রে তিনি সই করেন। খুব আনন্দ পেয়েছিলেন প্রথম বাংলা ছবিতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করার সুযোগ পেয়ে। কিন্তু অশোক ধানুকা ফোন করে জানান, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় তাঁর সঙ্গে ছবি করতে চান না। কারণ তিনি মনে করেন শ্রীলেখা নায়িকা হলে কেউ টাকা দিয়ে সিনেমা হলে যাবেন না।

শ্রীলেখা জানান, এর পরে একদিন স্টুডিওতে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে দেখে এড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি। বদলে ফিরদৌসের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এবং তার কিছুদিন পরেই অশোক ধানুকা এবং খোদ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ফোন করে জানান, অন্নদাতা ছবিতে শ্রীলেখাই কাজ করছেন।

শ্রীলেখা জানিয়েছেন, অন্নদাতা ছবিটি হিট করেছিল। কিন্তু তারপরে আর কোন ছবিতে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করা হয়নি। অন্নদাতা ছবিতে একটি গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্স ছিল অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়। আর তখন থেকে প্রেম শুরু হয় অর্পিতা ও বুম্বাদার।

এরপর শ্রীলেখা মিত্র অর্জুন চক্রবর্তীর পরিচালনায় টলিলাইটস ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। তাঁর কথায়, “সেই সময় ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত অর্জুন চক্রবর্তীকে ফোন করে বলেছিলেন, শ্রীলেখা’কে বাদ দাও। আমাকে দাও। আমি কম পারিশ্রমিক এ অভিনয় করব। শুনে খুব কষ্ট লেগেছিল। অর্জুনদা কে ধন্যবাদ যে তিনি আমাকে ছবিটা করতে দিয়েছিলেন। ঋতুকে পরে বলেছিলাম তোমার হা মুখটা ছোট করো। অন্যদেরও কাজ করতে দাও।”

এরপর অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের ওপর ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, “আমরা অনেকেই সমালোচনা করি। কিন্তু ঋতুকে আমি কখনও দেখিনি কোনও খারাপ কথা বলতে। ও খুব চালাক। ও সবার সঙ্গে, যেকোনো বয়সের মানুষের সঙ্গে খুব মিষ্টি করে কথা বলে মোহিত করে দিতে পারে।”

এমনকী শ্রীলেখা জানাচ্ছেন বড় প্রযোজনা সংস্থা না হলে সেই ছবি ইচ্ছাকৃত ভাবেই চলতে দেওয়া হয় না। তিনি বলেন, “নেপোটিজম ছিল রয়েছে এবং থাকবে।”

শুধু এতটুকুতেই থেমে যাননি অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। এরপর তিনি কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় সম্পর্কেও বলেন। তাঁর কথায়, “ওনার ছবিতে তো শুধু চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় কাজ করবেন। সেটা নিজেই কৌশিকদা আমায় বলেছিলেন। জয়া আহসান বোধহয় খুব ভালো অভিনেত্রী। তাই জয়া আহসান তার ছবিতে কাজ পান আমি পাইনা।”

এরপর অভিনেত্রী সৃজিত মুখোপাধ্যায় স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের প্রেম কাহিনী সম্বন্ধেও বলেন।
সৃজিত মুখোপাধ্যায়’কে অভিনেত্রী বলেন, “আমি জানি সৃজিত লাইভ ভিডিওটা দেখছে। সৃজিত একসময় আমার খুব ভালো বন্ধু ছিল। কিন্তু যখন ছবি করল তখন আর আমাকে ডাকেনি। হয়তো আমার মত কোনও চরিত্র ছিল না। স্বস্তিকার মতনই চরিত্রগুলো ছিল। তখন স্বস্তিকার সঙ্গে আসলে সৃজিতের একটা প্রেম চলছিল।”

শ্রীলেখা জানান “আমার মুনমুন সেন, অপর্ণা সেনের মত কোনও মা নেই। আমার রঞ্জিত মল্লিক, সন্তু মুখোপাধ্যায়ের মত কোনও বাবাও নেই। “

অভিনেত্রী শুধু সিনেমার কথাই বললেননি বলেছেন সিরিয়ালেও এমনটা হয়েছে তাঁর সঙ্গে। তাঁর কথায়,“অঞ্জনা বসু এবং গার্গী রায়চৌধুরীর সঙ্গে প্রযোজকের প্রেম হয়েছিল বলে আমার সিরিয়ালের অংশ অনেক কমে গিয়েছিল। আমি জানি আজকের লাইভ এর পরে আমাকে আবার এক ঘরে করে দেওয়া হবে।”

সবশেষে অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র বলেন “শ্রীলেখা মিত্র’কেও কি সুইসাইড করে প্রমাণ করতে হতো যে তিনি কষ্টে আছেন?”

তবে এই টলিউড অভিনেত্রীর কথায় পরিষ্কার নেপোটিজম শুধুমাত্র বলিউডে নয় টলিউডেও রয়েছে।

Previous articleBreaking: রথযাত্রা বন্ধের প্রতিবাদে 2 দিনের বনধ ওড়িশায়, রাজ্য সরকারকে তুলোধোনা পুরীর সেবায়েতদের
Next article১০ রাজ্যের ২৪ টি রাজ্যসভা আসনে ভোটগ্রহণ শুরু