সুন্দরবনের ঐক্যবদ্ধ পাঁচ সংগঠনের অভিযান, কুণাল ঘোষের কলম

কুণাল ঘোষ

নজিরবিহীন।

আমফান ও বর্ষায় বিধ্বস্ত সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার সর্বহারা মানুষের পাশে দাঁড়াতে পাঁচ সংগঠনের ঐক্যবদ্ধ বিরাট কর্মযজ্ঞ।
রবিবার গোসাবার বালি দ্বীপের একাধিক বিধ্বস্ত গ্রামের বাসিন্দারা সাক্ষী রইলেন এই ত্রাণঅভিযানের, যার সমন্বয়ের মধ্যমণি প্রাক্তন সাংসদ ও সাংবাদিক কুণাল ঘোষ। সহযোদ্ধাদের নিয়ে তিনি গিয়েছেন সেই এলাকায়, যেখানে মানুষের অভিমান, শহর ভুলে থাকে জলঙ্গলের বাসিন্দাদের যন্ত্রণা।
নিজের কলমেই এদিনের অভিযানের কথা লিখেছেন কুণাল। তিনি লিখেছেন:-

আমফান আর দুর্যোগে বিধ্বস্ত সুন্দরবনে বিপন্নদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা।

এই বিপর্যয়তেও বই, খাতা নিতে ছোটদের আগ্রহ নজর কাড়ল।

স্থান: গোসাবার প্রত্যন্ত বালিদ্বীপে বিপর্যস্ত বিজয়নগর গ্রাম, ন’নম্বর, দশ নম্বর কলোনী ও চারপাশের এলাকা। মানুষ সর্বহারা।

কাল: রবিবার। কলকাতা থেকে সড়কপথে গদখালি। সেখান থেকে লঞ্চে বেলাদুপুর।

পাত্রপাত্রী: মিলিত অভিযানে আমরা কয়েকটি সংগঠন। তাদের প্রতিনিধিরা। ডায়মণ্ড ফ্রেণ্ডস ( শুভজিৎ, পিয়াল); 14 নম্বর ওয়ার্ড ক্লাব সমন্বয় কমিটি ( মৃত্যুঞ্জয় ও গোপাল, রাজীবসহ সহযোদ্ধারা); রামমোহন সম্মিলনী ( তুতুনদা, অনির্বাণ, দীপঙ্কর, কল্যাণ); টাকি বয়েজ অ্যালুমনি অ্যাসোসিয়েশন কলকাতা ( পার্থ, অনিরুদ্ধ, সৌমেন, অয়নাভ, সৌম্যদীপরা ); খুশির দিয়া( টিম অনিন্দ্য); সঙ্গে বাপি, বাবাইসহ কয়েকজন, কর্তব্যরত পীযূষও। এবং ভ্রাতৃপ্রতিম আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী।

সামগ্রী: ত্রিপল, মশারি, শুকনো খাবারের প্যাকেট ( মুড়ি, বাতাসা, চিড়ে, বিস্কুট, লজেন্স ইত্যাদি); শাড়ি, ব্লাউজ, লুঙ্গি, গেঞ্জি, বিভিন্ন বয়সের ছোটদের পোশাক, স্যানিটারি ন্যাপকিন, সাবান, মোমবাতি, লাইটার, জিওলিনসহ জরুরি বহু সামগ্রী বিপুলভাবে। সঙ্গে ছোটদের জন্যে বর্ণপরিচয় থেকে শুরু করে নানা বই। সবই দেব সাহিত্য কুটীরের।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার: যাঁরা সশরীরে যেতে পারেননি, অথচ যথাসাধ্য সাহায্য করেছেন। বিশিষ্ট সমাজসেবী ও সুন্দরবন বাঘের হাতে নিহতদের পরিবারের কল্যাণসমিতির কর্ণধার সমর নাগ, এক্সাইডের কর্তা অর্ণব সাহা, শ্রীবাগচি, একাধিক চিকিৎসক, বিভিন্ন পেশার দরদীরা এগিয়ে এসেছেন।

সড়কপথে গদখালি।
তার লঞ্চ ” মা অন্নপূর্ণা।” বিদ্যাধরী, গোমর নদী হয়ে বালিদ্বীপ। সঙ্গে স্থানীয় যুবক অনন্ত।
বিধ্বস্ত গরিব সব গ্রাম। কোথাও এখনও জল ঢুকে।
এপাশে গহন বন।
বাঘের নিত্য উৎপাত।
আজ মেঘলা ও বৃষ্টির মধ্যে ত্রাণ অভিযান।
কখনও গ্রামবাসীরা নদীর ধারে। কখনও আমরা ঢুকেছি গ্রামের হাল দেখতে।
ম্যানগ্রোভের ঘন বনে দিনেই ঝিঁঝির ডাক। আর পাশের কাদা পথের পাশেই জলবেষ্টিত ঘর।
লোকে থাকেন। থাকতে হয়।

শাড়ি, জামা, মশারি, ত্রিপল, সাবানসহ সব সামগ্রীর চাহিদা স্বাভাবিক।
আমি অবাক বইখাতার চাহিদা দেখে।
বাচ্চারা ঝাঁপিয়ে এসেছে।
বই, খাতা, পেন, পেনসিল নিয়েছে হইহই করে।
এক অভাবনীয় দৃশ্য।

দুটি আলাদা জায়গায় লঞ্চ ভিড়িয়ে চারটি গ্রামের কয়েকশ মানুষকে সামগ্রী দেওয়া হল। পাঁচটি সংগঠনের প্রতিনিধিদের অক্লান্ত পরিশ্রম আলাদা উল্লেখের দাবি রাখে।

 

 

Previous articleবিজেপি’র সেই সোমনাথের বিরুদ্ধে এবার টাকা নিয়ে ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ
Next articleআগের সব রেকর্ড ভেঙে রাজ্যে একদিনে করোনায় আক্রান্ত ৮৯৫, বাড়লো মৃত্যুও!