ভ্যাকসিন-ট্রায়ালে ডাক পাওয়ার দাবি করা বিজেপি শিক্ষকনেতার কুকীর্তি ফাঁস

অতিমারির ভ্যাকসিনের মানব-ট্রায়ালে ডাক পাওয়ার দাবি করা দুর্গাপুরের শিক্ষক চিরঞ্জিৎ ধীবরের চাঞ্চল্যকর এক কীর্তির কথা সামনে এসেছে৷ পূর্ব বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরের বাসিন্দা চিরঞ্জিৎ ধীবর একজন স্কুল শিক্ষক এবং RSS-এর সক্রিয় কর্মী৷

দু’দিন আগে দুর্গাপুরের বাসিন্দা চিরঞ্জিৎ ধীবর দাবি করেছিলেন, ভ্যাকসিনের মানব ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য ICMR থেকে ডাক পেয়েছেন তিনি৷ ICMR-এর ফোন পাওয়ার পর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায়
চিরঞ্জিৎ ধীবর বলেছিলেন, “এটা জাতির জন্য আমার সেবা৷” চিরঞ্জিতের বাবা তপন ধীবর বলেছেন, “আমার ছেলে জাতির জন্য ঝুঁকি নিচ্ছে৷ আমি আমার ছেলের জন্য গর্বিত”৷

এদিকে ওই চিরঞ্জিতের অতীতের কুকীর্তি ফাঁস করেছেন দুর্গাপুরের একাধিক শিক্ষক৷ তথ্য দিয়েই তাঁরা বলেছেন,
একাধিক মহিলার সঙ্গে পরকীয়ার ইতিহাস আছে বিজেপির এই শিক্ষক নেতার৷ কুকীর্তি ধরে ফেলতে নিজের স্ত্রীকে
খুনের চেষ্টা পর্যন্ত করেন চিরঞ্জিত৷ প্রতিবারই ধরা পড়ার পর ক্ষমা চেয়ে নেয়, এটাই চিরঞ্জিৎ ধীবরের স্বভাব৷

এই অভিযোগের প্রমান হিসাবে ২০১৯ সালের ২০ আগস্ট Zee ২৪ ঘন্টায় সম্প্রচারিত এক প্রতিবেদনের উল্লেখ করেছেন৷ ওই প্রতিবেদনে বলা হয়,

“একাধিক মহিলার সঙ্গে পরকীয়া বিজেপির শিক্ষক নেতার, কুকীর্তি ধরে ফেলতেই খুনের চেষ্টা স্ত্রীকে৷

স্ত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে গেলেন RSS-এর শিক্ষক সেলের এক নেতা। ঘটনাটি ঘটেছে দুর্গাপুরের বেনাচিতিতে। ধৃতের নাম চিরঞ্জিৎ ধীবর। এই ঘটনায় বিজেপির পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের স্পষ্ট বক্তব্য, “চিরঞ্জিৎ বিজেপি কর্মী। কিন্তু সে যদি কোনও অন্যায় করে থাকে, তাহলে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”

অভিযোগ, বিজেপি প্রাথমিক শিক্ষক সেলের নেতা চিরঞ্জিত ধীবর পরকীয়ায় আসক্ত। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন মহিলার সঙ্গে তাঁর সেই কথোপকথন ও আপত্তিকর ছবি ধরা পড়ে যায় স্ত্রী সন্ধ্যা সাহার কাছে। স্ত্রীর অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই একাধিক বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়ান চিরঞ্জিৎ ধীবর। ধরা পড়ার পর প্রতিবারই ক্ষমা চেয়ে নেন। পরকীয়ার ছবি, কথোপকথনের প্রমাণ লোপাট করে দেন। কিন্তু, তারপর আবারও অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তাঁর স্বামী। এবারও এরকমই এক মহিলার সঙ্গে স্বামীর কথোপকথন, ছবি চালাচালি ধরা ফেলেন স্ত্রী সন্ধ্যা।
স্বামীর কুকীর্তি ধরার পর, ফোনটি কেড়ে নেন তিনি। তারপর সেই ছবি, কথোপকথন সব সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেন সন্ধ্যা। অভিযোগ, এরপরই তাঁকে প্রথমে খুনের চেষ্টা করেন শ্বশুর তপন ধীবর। ছেলের মোবাইল ফোনটি উদ্ধারের জন্য পুত্রবধূ সন্ধ্যাকে শ্বাসরোধ করে খুনের চেষ্টা করেন তপন। সেইসময় চিৎকার শুনে ছুটে এসে সন্ধ্যাদেবীকে উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। এই ঘটনায় দুর্গাপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন সন্ধ্যাদেবী। এরপরই গতকাল রাতে বেনাচিতির নতুনপল্লির বাড়িতে চড়াও হন চিরঞ্জিৎ ধীবর।

অভিযোগ, ফোন কেড়ে নেওয়ার পর থেকে স্ত্রীর সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ রাখেননি চিরঞ্জিৎ। কাঁকসার ব্রাহ্মণগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক চিরঞ্জিৎ বাবা, মা, ভাইয়ের সঙ্গে শিবাজি রোডের বাড়িতে ছিলেন। অন্যদিকে, স্ত্রী সন্ধ্যা ছিলেন বেনাচিতির নতুনপল্লির বাড়িতে। গতকাল রাতে কড়া নাড়ার আওয়াজ পেয়ে, দরজা খুলতে যান সন্ধ্যাদেবী। অভিযোগ, দরজা খোলা মাত্রই তাঁর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন অভিযুক্ত চিরঞ্জিৎ। সন্ধ্যাদেবীর চিৎকারে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। তাঁরাই তাঁকে উদ্ধার করেন।
খবর দেওয়া হয় পুলিসে। ফরিদপুর ফাঁড়ির পুলিস ঘটনাস্থলে এসে অভিযুক্ত চিরঞ্জিৎ ধীবরকে আটক করে নিয়ে যায়। পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এই ঘটনায় স্বামীর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেছেন গৃহবধূ সন্ধ্যা। ধৃতকে দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয়।”

এই অভিযোগ এনেই চিরঞ্জিৎ ধীবর সম্পর্কে ওই শিক্ষকদের বক্তব্য, আজও চরিত্রের বিন্দুমাত্র সংশোধন হয়নি বিজেপির এই শিক্ষক নেতার৷ এখন এইসব চমক দিয়ে দৃষ্টি ঘোরাতে চাইছেন ধীবর পরিবার৷ এদিকে ওই শিক্ষক নেতা চিরঞ্জিৎ ধীবরের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, এসব মিথ্যা অভিযোগ৷ চিরঞ্জিৎ-এর ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতেই একটি মহল এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে৷

Previous articleকরোনায় একদিনে হাজারের বেশি সংক্রমণ, মৃত্যুতেও ফের রেকর্ড বাংলায়
Next articleসমস্যা ছিল: দার্জিলিং জেলার বৈঠকের পরে স্বীকারোক্তি অরূপের