‘এটিকে-মোহনবাগান’ সংযুক্তিকরণ ভারতীয় ফুটবলকে নতুন দিশা দেখাবে, স্পষ্ট মত মানসের

চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়

এটিকে-মোহনবাগান-এর সংযুক্তিকরণে ভারতীয় ফুটবলে ইতিহাস তৈরি হলো। আর দুই দলের এই গাঁটছড়া বাধা নিয়ে ‘এখন বিশ্ব বাংলা সংবাদ’ কে খোলাখুলি তাঁর মতামত জানালেন প্রাক্তন ফুটবলার মানস ভট্টাচার্য ।
মোহনবাগান অন্ত প্রাণ এই প্রাক্তন ফুটবলার
বলেছেন, ভারতীয় ফুটবলে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট হচ্ছে আইএসএল। এই টুর্নামেন্ট এক নম্বর স্বীকৃতি পেলেও, আমরা যারা ফুটবল ভালোবাসি ফুটবল খেলতাম, যাদের রক্তে মিশে আছে ফুটবল, তারা কিন্তু এই টুর্নামেন্টটিকে এক নম্বর টুর্নামেন্ট মনে করি না। তার প্রধান কারণ হচ্ছে এই টুর্নামেন্টে মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গল এর পার্টিসিপেশন নেই। ভারতবর্ষের কোনও ফুটবল টুর্নামেন্টে এই দুটো দল খেলবে না, তাহলে কিন্তু সেই টুর্নামেন্টের জৌলুস কখনও বাড়বে না। আমরা যদি রেকর্ডের দিকে তাকাই সেখানে দেখবো, পরিসংখ্যান বলে দেবে আই লিগ কতজন ফুটবলপ্রেমী মাঠে দেখতে গেছে। আই লিগে মাঠে কত ফুটবলপ্রেমী তাদের প্রিয় দলের ফুটবল দেখার জন্য হাজির হয়েছিল। আর আইএসএল-এ এটিকের খেলা দেখতে মাঠে কত ফুটবলপ্রেমী হাজির হয়েছিলেন । এই যে তথ্যটা এর থেকেই প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে যে আই লিগ আইএসএল এর চেয়ে কতটা জনপ্রিয় ছিল। যদিও স্বীকৃতির দিক দিয়ে আইএসএল আইলিগকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। যেহেতু এএফসি তাকে এক নম্বর তকমা দিয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গল দুটো দলে কিন্তু কয়েক বছর ধরে তাদের অর্থনৈতিক দিক থেকে চাপের মধ্যে রয়েছে। মোহনবাগান ম্যাকডওয়েলস-এর সঙ্গে চুক্তি করেছে, ইস্টবেঙ্গল কিংফিশারের সঙ্গে চুক্তি করেছে। কিন্তু তাতে তাদের সমস্যা মেটেনি। কিংফিশার চলে যাওয়ার পর কোয়েস এসেছে। সেখানেও সমস্যা মেটেনি। তাই তাদেরও একটা ডামাডোল চলছে। মোহনবাগানকে কিন্তু এই জায়গাটায় ভাবতে হয়েছে, যে আমরা কী করব।
এখন একটা প্রশ্ন সামনে আসছে যে কেন এটিকে মোহনবাগানের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে গেল?
এটিকে এবং মোহনবাগান দুজনেরই লাভ হল কোথায়?
এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য, এই যে এইটটি-টোয়েন্টিতে দুটো দল বিড করল বটে কিন্তু মোহনবাগানের লাভ হল কোথায়? মোহনবাগানের অর্থনৈতিক চাপটা আর রইল না। অর্থনৈতিক চাপটা এক্ষেত্রে অনেকটাই বহন করবে এটিকে। আর মোহনবাগানের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে এটিকের কী লাভ হল? তারা সারা ভারতবর্ষ জুড়ে লক্ষ লক্ষ সমর্থককে পেয়ে গেল। সারা পৃথিবী জুড়ে যত মোহনবাগান সমর্থক আছে তাদের সমর্থন পাবে। সমর্থকদের ধরে রাখতে এটিকে কে কিছু করতে হবে। তাদের কিছুটা ব্যাকফুটে যেতে হবে। সেই ব্যাকফুট কোনটা?
জার্সি ও লোগো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা দুটো জিনিসে হাত লাগালো না। একটা হল পালতোলা নৌকা, যেটা মোহনবাগানের প্রতীক। আর একটা আছে সবুজ-মেরুণ জার্সি, যেটা তাদের রক্তের মধ্যে রয়েছে। এই দুটোকে তারা কিন্তু অবহেলা করলো না। এই দুটোতে তারা হাত দিলো না ।
কিন্তু এখন প্রশ্ন, এটিকে তাদের অস্তিত্ব প্রমাণ করবে কী ভাবে? এটিকে ঠিক করল অ্যাওয়ে ম্যাচে তাদের জার্সির কালারটা তারা বদলে দেবে । এই জার্সিতে তারা বাইরের মাঠে খেলবে । আর যখন কলকাতায় মোহনবাগান মাঠে খেলবে, তখন সবুজ-মেরুণ জার্সিতে খেলবে। এই জায়গাটায় তাদের লাভ হলো। আর একটা জিনিস, আমি যতদূর জানি এই  সঞ্জীব গোয়েঙ্কা ,সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এরা কিন্তু মনেপ্রাণে মোহনবাগানের সমর্থক। এরা কিন্তু মোহনবাগানের রইলেন। সৌরভ তো আমাদের সময় নিজে খেলা দেখতে আসতো। পুরো পরিবারটা মনেপ্রাণে মোহনবাগান সমর্থক। দেখুন আপনি যখন একটা দল করবেন, সংগঠন করবেন বা কোনও দলের সমর্থক হবেন। তখন সেই দল, সংগঠনের প্রতি যদি আপনার আনুগত্য না থাকে তবে আপনি সেটা মন প্রাণ দিয়ে করতে পারবেন না। আজকে এরা পেরেছে তার কারণ, এরা একটা সময় মোহনবাগানেই ছিল। তাই আজকে পেরেছে সংযুক্তিকরণ করতে। তারা কিন্তু তাদের বিজনেসটা বাড়িয়ে নেবে । তারা প্রচুর মাইলেজ পাবে। এটিকের যেসব বিজনেসগুলো আছে সেগুলো তারা ডেভেলপ করবে। আরও লাভ হবে যেটি তা হল আমাদের যে একটা একাডেমি আছে, যেটা এটিকে চালাচ্ছে সেটার আরও ডেভলপমেন্ট হবে। বিদেশী ধাঁচে মোহনবাগান মাঠটার একটা হিল্লে হবে। একটা ভালো ক্যান্টিন হবে । অনেক কিছু হবে।
তাই আমি মনে করি, মোহনবাগান-এটিকে গাঁটছড়া বাঁধা এই যে সংযুক্তিকরণ, যার নাম হয়েছে ‘এটিকে মোহনবাগান এফসি’ ফুটবলের স্বার্থে সেটা হওয়ার দরকার ছিল। সেখানে মোহনবাগানের সবুজ-মেরুণ থাকছে, পালতোলা নৌকা থাকছে। তাই আমার মনে হয় এটা খুব ভালো একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফুটবলের স্বার্থে, ফুটবল অনুরাগীদের জন্য আগামী দিনে ‘এটিকে মোহনবাগান’ যখন খেলবে তখন কিন্তু তারা অনেক চমৎকার জনসমর্থন পাবে এবং আবেগে তারা কোনও আঘাত পাবে না। এই জায়গাটাতেই ফুটবলের ভালো লাভ হবে। এবং ইস্টবেঙ্গল যদি এই ধরনের ভালো কিছু করতে পারে তাহলে ভালোই হবে। নিজের প্রিয় দলের পাশাপাশি লাল-হলুদ নিয়ে তিনি বলেন, আমি মনেপ্রাণে চাই আগামী দিনে ইস্টবেঙ্গল যদি এরকম কিছু করে নিতে পারে, সেক্ষেত্রে আগামী আইএসএলে আমরা মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল দু’জনকেই পাবো। এই দুটো দলের যোগদানের ফলে ভারতবর্ষের ফুটবলের নিরিখে আইএসএল এর জনপ্রিয়তা এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছাবে, যাতে ভারতীয় ফুটবল অনেকটাই এগিয়ে যাবে।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ইস্টবেঙ্গল চেষ্টা করবে আইএসএলে তাদের নাম নথিভুক্ত করতে। রীতিমতো নস্টালজিক মানস জানিয়েছেন, মনে রাখবেন ১৯১১ সালে ব্রিটিশদের হারিয়ে আমরা জিতেছি। মোহনবাগান কিন্তু হেলাফেলার নয়। ভারত সেরা, জাতীয় ক্লাব। ইস্টবেঙ্গলকে ছোট না করেই বলছি, কেন মোহনবাগান জাতীয় ক্লাবের সম্মান পেল? কেন ইস্টবেঙ্গল বা মহামেডান কে সেই সম্মান দেওয়া হলো না? কারণ, মোহনবাগান ব্রিটিশদের হারিয়ে প্রথম ইতিহাস তৈরি করেছিল। সেই ঐতিহ্য মোহনবাগানের আছে যা তাদেরকে অন্যদের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে রেখেছে। স্বাধীনতা সংগ্রামে এই ক্লাব একটা দিশা দেখিয়েছিল। খালি পায়ে যদি মোহনবাগান গোরাদের হারাতে পারে, তাহলে স্বাধীনতা আনতে আমরা কেন তাদের হারাতে পারবো না। তাই মোহনবাগান মানে একটা আবেগ। যার সঙ্গে এটিকের সংযুক্তিকরণ ভারতীয় ফুটবলকে সমৃদ্ধ করবে।

Previous articleপ্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হবে প্রায় ২ লক্ষ কিলোমিটার রাস্তা! কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগ
Next articleআইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে যোগী সরকার, বিকাশ দুবের এনকাউন্টারের নিন্দায় ফিরহাদ