মোহনবাগান নিয়ে ট্রোল নয়, বাস্তব ভাবুন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা

শান্তনু সরস্বতী( ইস্টবেঙ্গল সমর্থক)

এটিকে-এমবির সংযুক্তিকরণ নিয়ে বেশ কয়েক দিন যাবত ট্রোল হচ্ছে সোস্যাল মিডিয়ায় দেখছি। পাল্টা ট্রোল করছেন মোহনবাগান সদস্য সমর্থকরাও। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এই বিষয়টা নিয়ে যত কম বলা যায়, ততই ভাল। বিনিপয়সায় মোহনবাগানের বিজ্ঞাপন করা উচিত হবে না লাল হলুদ সদস্য সমর্থকদের।

শতাব্দী প্রাচীন একটি ক্লাব এখন অর্থসংকটে। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবও অর্থ সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার ৭৩ বছর পার হয়ে গেলেও, ভারত কিন্তু এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপে অংশ নেয়নি। অনুর্ধ সতেরোর বিশ্বকাপ খেলেছে রবীন্দ্রনাথ সুকান্ত ভট্টাচার্যের দেশ– হোস্ট কান্ট্রি হিসেবে। কোয়ালিফিই করে নয়। সেমিফাইনালেও ওঠা হয়নি। তাই এদেশের বেওসায়িদের কাছে আজও ফুটবলে বিনিয়োগ লাভজনক নয়।

এতদিন স্পনসর ছাড়া মোহনবাগান খেলেছে, শুধুমাত্র টুটুবাবু আর সৃঞ্জয় বসুর মোহনবাগানের প্রতি অকৃপন ভালবাসা থেকে। নিজের গাঁটের কড়ি খরচ করে ক্লাব চালিয়েছেন টুটুবাবু– ফুটবল থেকে কোনও রিটার্ন না আসার পরেও। কিন্তু কতদিন? দেশের সেরা লিগ খেলতে হলে যে অর্থের প্রয়োজন তা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। তাই এটিকের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা। এতে ট্রোল করার কী হল, আজও আমার মাথায় ঢোকেনি। মোটা মাথা বলেই বোধহয় মোহনবাগান ক্লাব নিয়ে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব সমর্থকদের ট্রোল– আমার ভাল লাগেনি। হ্যাঁ একজন আপাদমস্তক লাল হলুদ সমর্থক হওয়ার পরেও, এটিকে এমবি নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় ট্রোলগুলো খুব বোকা বোকা লেগেছে।

নামের আগে এটিকে বা বিনিয়োগকারীর নাম বসানোর চল নতুন নয়। এর আগেও হয়েছে। ম্যাকডাওয়েল মোহনবাগান, কিংফিশার ইস্টবেঙ্গল, কোয়েস ইস্টবেঙ্গল–এমন উদাহরণ ভুরি ভুরি আছে। তাতে না ইস্টবেঙ্গলের জাত গিয়েছে, না মোহনবাগানের ঐতিহ্য বিকিয়ে গেছে। কোয়েস ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সূচনা হওয়ার পর, ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে সেই পরিচিত লাল হলুদের জোশ কমে গিয়েছিল। সদস্য সমর্থকদের দিয়ে জার্সি বানানোর অছিলায়। এটিকে মোহনবাগানের জার্সিতেও বদল হবে শুনলাম– সবুজ মেরুন জার্সি থাকবে হোম ম্যাচে, আর লাল সাদা জার্সি থাকবে অ্যাওয়ে ম্যাচে। এই সেদিন ইউটিউবে বার্সেলোনার একটি ম্যাচ দেখছিলাম আমি লকডাউনে সময় কাটানোর তাগিদে। দেখলাম লাল হলুদ জার্সি পরে মাঠে নেমেছে মেসি ইনিয়েস্তারা। তাতে বার্সার ঐতিহ্য এতটুকু বিসর্জন দিতে হয়নি। তাহলে এটিকে এমবির জার্সি নিয়ে ইস্টবেঙ্গল সদস্য সমর্থকদের এত মাথা ব্যথা কী সের ! ভুলে যাবেন না, এটিকে এমবির কোচ আইএসএলের অন্যতম সফল কোচ অ্যান্তনিও লোপেজ হাবাস। আর দল গঠন যা শুনেছি, তাতে বুঝতে অসুবিধা হয়নি — মোটামুটি গতবছরের চ্যাম্পিয়ন দল ধরে রেখেছে হাবাসের টিম। বিদেশি চয়নও যথেষ্ট ভাল। তবে রয় কৃষ্ণ গতবছর যে ফর্মে ছিল, এই বছরেও সেই বিধ্বংসী ফর্মে আছে কি না আমার জানা নেই।

ইস্টবেঙ্গল আইএসএল খেলবে। এটুকু বিশ্বাস আমার প্রথম দিন থেকেই ছিল। বিশ্বাস ছিল, কেনওনা ক্লাবটা এখনও চালান দেবব্রত সরকার। একজন প্রকৃত লিডার হতে গেলে যা যা গুণ লাগে, দেবব্রত সরকার উরফ নীতুদার সেই সব গুণই আছে। একেবারে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন নীতুদা। নীতুদার হাতে পুরো কন্ট্রোল থাকলে আইএসএলে প্রবেশের পথ অনেকটাই মসৃণ হত। বাধ সাধল আইজ্যাক সাহেবের হঠাৎ নেতা হওয়ার ইচ্ছে। জীবনে কোনও দিন ফুটবলে পা না দিয়েও তিনি স্বপ্ন দেখা শুরু করলেন নেতা হওয়ার। মোহনবাগানের দেবাশিস দত্ত এবং মিনার্ভা পঞ্জাবের কর্ণধার রঞ্জিত বাজাজের বুদ্ধি আর এবিসিডি ফ্যানক্লাবের তৈরি করা ফ্যান্টাসিতে গা ভাসালেন আইজ্যাক! বেওসায়ির এমন বুদ্ধি, কখনও নজরে আসেনি আমার। ছাগলের তৃতীয় সন্তানের মতো তিড়িংবিড়িং করে লাফাতে লাগলেন! ফল: শতবর্ষে ইস্টবেঙ্গলের অখাদ্য দল। আর বিদেশি চয়ন– একশো বছরের ইতিহাসে যা হয়নি, তাই হল। শেষকালে ক্লাবের কন্ট্রোল পুরো নিজের হাতে নিয়ে মান বাঁচালেন, সেই নীতুদা।

থাক সে কথা। এটিকে মোহনবাগান আইএসএলের জন্য তৈরি। আমরা তৈরি হওয়ার পথে। ভারতীয় ফুটবলার চয়ন যথেষ্ট ভাল এইবছর। এখন দেখা যাক, বিদেশি ফুটবলার কে কে আসেন লাল হলুদ জার্সি পরার তাগিদে।

একটা কথা, যেসব ইস্টবেঙ্গল ক্লাব সমর্থক মোহনবাগান ক্লাবের লোগো নিয়ে চিন্তিত ছিলেন এতকাল, তারা নিশ্চয়ই জানেন, পালতোলা নৌকা অপরিবর্তিত থাকছে, যদিও মোহনবাগান ক্লাবের প্রথম লোগো ছিল, বাঘ। ভেতো বাঙালির মতো পরশ্রীকাতর না হয়ে, প্রকৃত বাঙালের মতো আচরণ করুন। আমরা আমাদের নিয়েই শুধু ভাববো– এটা মাথায় গেঁথে নিন। ফুটবল মাঠ এমনিতেই কলুসিত করেছে কতিপয় ফ্যানক্লাবটি। ক্লাবের নামে বেওসা করে চলেছে এই বাজারেও। ট্রোল করার হলে তাদের নিয়ে করুন। মোহনবাগান নিয়ে আমাদের না ভাবলেও চলবে।

Previous articleভারভারা রাওকে দয়া করে জেলের ভিতর মেরে ফেলবেন না’, কাতর আর্জি স্ত্রীর
Next articleসুখবর: ১৪ জুলাই থেকে পর্যটকদের জন্য খুলে যাচ্ছে কাশ্মীর