মমতা না পার্থ-সৌগত? আনন্দবাজার ইস্যুতে কর্মী-নেতারা বিভ্রান্ত, কার কথা মানবেন!

তথ্য অনুসারে, প্রায় শতাব্দীপ্রাচীন আনন্দবাজার পত্রিকা বাংলা ভাষায় প্রকাশিত বহুল প্রচারিত দৈনিক৷ প্রথমেই একটা বিষয় স্পষ্ট করা দরকার, ওই পত্রিকার পলিসি সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনার জন্য এই প্রতিবেদন নয়৷ সে সব মূল্যায়ন করার কোনও তাগিদও নেই৷ পুরোপুরি এক রাজনৈতিক প্রশ্ন নিয়েই প্রতিবেদনে ওই পত্রিকার নাম উল্লেখ করা হয়েছে৷ ফলে এ বিষয়ে বিভ্রান্তি বা ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ নেই৷

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অতীতে পর্যায়ক্রমে বহুবার আনন্দবাজার পত্রিকাকে লক্ষ্য করে তোপ দেগেছেন৷ সরকারে আসার পর ওই পত্রিকার সঙ্গে তাঁর মেঘ-রোদের সম্পর্কও লক্ষ্য করা গিয়েছে৷ যেমন খুব সম্প্রতি আনন্দবাজার সম্পর্কে খুব স্পষ্টভাবে তিনি বলেছেন, “শুধু কোভিড নয়, আমাকে কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি আর এবিপির বিরুদ্ধেও লড়তে হয়। নির্দিষ্ট অ্যাজেন্ডা থেকে ধারাবাহিকভাবে বাংলা বিরোধিতা চালিয়ে যাচ্ছে আনন্দবাজার।” শুধুই আনন্দবাজার নয়, এবিপি গ্রুপের সব ক’টি মাধ্যম সম্পর্কেই একই ধরনের মনোভাব একাধিকবার প্রকাশ করেছেন তিনি৷ বস্তুত কর্মীসভা, দলীয় সমাবেশ অথবা সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে বারবার শোনা গিয়েছে৷ এরফলে দলের কর্মী বা নেতাদের মধ্যেও ওই পত্রিকা সম্পর্কে একটা বিরূপ ধারনা তৈরি হয়েছে, কারণ খোদ সুপ্রিমো ওই মিডিয়া হাউসের বিরোধী৷

কিন্তু সমস্যা অন্যত্র৷ এবিপি গ্রুপ সম্পর্কে তৃণমূলনেত্রী যতই স্পষ্ট বার্তা দিন, দলের দুই শীর্ষনেতা, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং সাংসদ সৌগত রায়ের ভূমিকায় কর্মী-সমর্থক এবং নেতারাও বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন৷ নেত্রী এবিপি গ্রুপকে দু’চক্ষে সহ্য করতে পারছেন না, অথচ পার্থবাবু অবলীলায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ফলপ্রকাশে এবিপি গ্রুপের ওয়েবসাইট ব্যবহার করেছেন৷ এই প্রথমবার বেসরকারি ওয়েবসাইটে রাজ্য সরকার ফল প্রকাশের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে৷ এবং সেই কাজে পার্থবাবু ব্যবহার করেছে মুখ্যমন্ত্রীর চরম অপছন্দের এবিপি গ্রুপকে৷ এইখানেই বিভ্রান্ত কর্মী- সমর্থক এবং নেতারা৷ তারা ভাবছেন, ‘তাহলে আমরা কী করবো ?’

এখানেই শেষ নয়৷ দলের সাংসদ সৌগত রায় ওই এবিপি গ্রুপের আনন্দবাজারের অনলাইন এডিশনে নিয়মিত উত্তর-সম্পাদকীয় লিখে চলেছেন৷ ১৬ জুলাই তারিখেও আনন্দবাজারের অনলাইন এডিশনে সৌগতবাবুর লেখা প্রকাশিত হয়েছে৷ যে গ্রুপ সম্পর্কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “এবিপির বিরুদ্ধেও লড়তে হয়” , সেই গ্রুপের অনলাইন এডিশনে দলের সাংসদ সৌগত রায় লিখছেন কোন অঙ্কে ?

তাহলে তো বলতে হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই ভাবুন, আনন্দবাজার গ্রুপ তৃণমূল সরকারকে অপদস্থ করতে চাইছে, সরাসরি শত্রুতা করছে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে, পার্থবাবু বা সৌগতবাবু কিন্তু আদৌ তেমন ভাবছেন না৷ তাঁরা এখনও আনন্দবাজারকে যথেষ্টই “বন্ধুস্থানীয়”-ই ভাবছেন৷

ফলে সম্পূর্ণ বিভ্রান্ত কর্মী-সমর্থকরা৷ বুঝতেই পারছেন না, আনন্দবাজার- ইস্যুতে তাঁরা কার পথ অনুসরণ করবেন, মমতার? না’কি পার্থ-সৌগত’র ?

অবশ্য এমনও হতে পারে আনন্দবাজার প্রসঙ্গে মমতার মনোভাব বা সিদ্ধান্ত আদৌ মানতে রাজি নন পার্থবাবু বা সৌগতবাবু৷ এই ইস্যুতে মমতার সঙ্গে তাদের মতবিরোধ আছে৷

তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতা,কর্মী বা সমর্থকরা সত্যিই আজ বিভ্রান্ত ৷

Previous articleরূপরেখা প্রস্তুত, মহামারির আবহে একগুচ্ছ নিয়মের বেড়াজালে হতে পারে দুর্গাপুজো
Next articleহাইওয়েতে প্রাক্তন তৃণমূল কর্মীর ক্ষতবিক্ষত দেহ