মানসিক স্বাস্থ্য গুরুত্বপূর্ণ, সেটাও ভালো রাখতে হবে: জানাল ইমোশনাল ওয়েলনেস

আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেটাকে ভালো রাখার দায়িত্ব সবার কিন্তু অতিমারি পরিস্থিতিতে যখন চারিদিকে নিরাশার খবর তখন, তার প্রভাব পড়ছে মনেও। ফলে বাড়ছে মন খারাপ। দীর্ঘদিন এই মন খারাপ হয়তো ডেকে আনছে মনের অসুখ। তার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে হিংসা, শোষণ, অবসাদ। এইসব নিয়েই ওয়েব প্লাটফর্মে ‘ইমোশনাল ওয়েলনেস’ নামে একটি আলোচনার আয়োজন করে সিআইআই ইন্ডিয়ান উওমেন নেটওয়ার্ক ওয়েস্ট বেঙ্গল। আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী, ডা. সাইদা রুকশেদা, ড. তন্ময়িণী দাস, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ইন্দ্রানী লোধ, ডা. গৌতম সাহা। সমগ্র অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সঞ্চালনা করেন আইডব্লিউএন-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার এই চেয়ারপারসন সুচরিতা বসু।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই সুচরিতা বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য কী সেটা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু এই অতিমারি পরিস্থিতিতে যখন চারিদিকে নিরাশার কথা শোনা যাচ্ছে, তখন কীভাবে সেই মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখব? এই প্রশ্ন নিয়ে তিনি যান বিশেষজ্ঞদের কাছে। ডা. শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী প্রাঞ্জলভাবে বুঝিয়ে দেন মানসিক স্বাস্থ্য কী? এবং কী কী পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যহানি ঘটতে পারে।
ডা. তন্ময়িণী বসু জানান, পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারত অত্যন্ত অবসাদগ্রস্ত একটি দেশ। এখানে প্রতি সাতজনে একজন অবসাদে ভোগেন। তাঁর মতে, সামাজিক দূরত্ব মানুষের মধ্যে এক ধরনের একাকীত্ব এনে দিচ্ছে। যার ফলে মনের কোণে জমছে বাষ্প, গ্রাস করছে অবসাদ। এর থেকে বেরিয়ে আসতে মানুষের সঙ্গে কথা বলা, যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর জোর দেন তিনি। একইসঙ্গে জানান সমস্যা হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে।
ডক্টর সাইদা রুকশেদা বুঝিয়ে দেন যে মানসিক অবসাদ, মন খারাপ আর মনের অসুখ এক নয়। তিনি বলেন, এই যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি, এখানে গার্হস্থ্য হিংসা অত্যন্ত বেড়ে যাচ্ছে। তার কারণ সময় এবং জায়গা না পাওয়া। অর্থাৎ কোনভাবেই অপছন্দের মানুষটিকে এড়িয়ে অন্য জায়গায় যাওয়া যাচ্ছে না। সেই কারণেই যাঁরা বিভিন্নভাবে গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হচ্ছেন, তাঁরা ও সে পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে অন্য জায়গায় আশ্রয় নিতে পারছেন না। আবার যাঁরা কারো সান্নিধ্য পছন্দ করছেন না, তাঁরাও সে জায়গা থেকে সরে যেতে পারছেন না। এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উল্লেখ করেন রুকশেদা। তিনি জানান, মহিলাদের গার্হস্থ্য হিংসা অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্ব দিয়ে বিচার করা হয় না। তাঁকে মানিয়ে নিতে বলা হয়। বারবার প্রশ্ন করে তাঁকে বোঝানো হয়, আসলে তাঁর সঙ্গে তেমন কিছুই হয়নি। আর এই মানসিকতাই তাঁকে আরও বেশি অবসাদের দিকে ঠেলে দেয়।


স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রাণী লোধ অবশ্য এক্ষেত্রে কিছু আশার কথা শুনিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই লকডাউনের সময় অনেকেরই অফিসের চাপ, কাজের চাপ ছিল না। তার ফলে তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটেছে। যার প্রভাব পড়েছে তাঁদের শরীরেও। ফলে স্ত্রী পুরুষ উভয় ক্ষেত্রে অনেকেরই প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
সামাজিক দূরত্ব মনে প্রভাব ফেলবে এ কথা সরকারের তরফ থেকেও স্বীকার করা হয়েছে। এবং সেটা বুঝেই সরকারি হেল্পলাইন চালু হয়েছে। এই হেল্প লাইনের মাধ্যমে নিজের সমস্যার কথা আলোচনা করে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন ডা. গৌতম সাহা।
সুচরিতা বসু বলেন, এই এই আলোচনার মাধ্যমে অনেক বিষয়ের উপর যেমন আলোকপাত হল, তেমন ভবিষ্যতে তাঁর কাছে আইনি সাহায্য নিতে যাঁরা আসবেন তাঁদেরকেও তিনি এই বিষয়গুলির উপর ভিত্তি করে পরামর্শ দিতে পারবেন। সুচরিতার উপস্থাপনা এই আলোচনাকে আরো বেশি মনোগ্রাহী করে তোলে। আলোচনায় উপস্থিত দর্শকদের প্রশ্নের উত্তর দেন সুচরিতা বসু সহ বিশেষজ্ঞরা।

Previous articleসিইএসসির ২১ হাজারের বিল পেয়ে চক্ষু ছানাবড়া অঙ্কুশের
Next articleআপনি চাইলেই কী পেতে পারেন লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুক? হাইকোর্টের নির্দেশ জানেন?