লকডাউন করেও করোনা প্রতিরোধ অসম্ভব! দেবাশিস বিশ্বাসের কলম

দেবাশিস বিশ্বাস

1. এই মহামারির প্রতিরোধ আর কোনওভাবেই সম্ভব নয়, লকডাউন হোক, না হোক, ঘরে থাকুন বা যাই করুন, এই রোগ প্রতিরোধ সম্ভব নয়। শুধু immunity power আপনাকে কিছু রক্ষা করতে পারে, বাকীটা স্রেফ কপাল। তাই এই রোগ আজ না হোক কাল হবেই ধরে নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করুন।

2. মন থেকে সবরকম Panic দূর করার চেষ্টা করুন, কিভাবে করবেন, এটা আপনার নিজের নিজের ব্যাপার। এই রোগ নিয়ে panic না করার 108 টা যুক্তি আছে, কিন্তু কোনোটাই আপনার কাজে আসবে না, যদি না আপনি নিজে মন থেকে মানেন। এবং এটাও মানেন যে এই panic আপনার নিজের পক্ষেই খারাপ। বাইরের জগৎ থেকে panic সরবরাহ থাকবে বা বাড়বে, মিডিয়া আদা জল খেয়ে আপনাকে ভীত রাখবে তাদের স্বার্থে। পারলে খবর দেখা একদম বন্ধ করুন, আমি নিজে অন্ততঃ 3 বছর TV দেখিনা, আমার বাড়িতেও TV চলেনা।

3. নিজে থেকে লাইন দিয়ে পয়সা খরচ করে Covid Test করাবেন না, কারন যে Test টি হচ্ছে Rapid Test নামে, সারা বিশ্বেই তার গ্রহণযোগ্যতা শুন্যের কাছাকাছি। অনেকেই মনে করেন Test করিয়ে নি, তাতে নেগেটিভ হলেই শান্তি। Bogus কথা, ওই নেগেটিভ রিপোর্ট কিছুই প্রমান করে না, এটা খুবই সম্ভব যে আজ নেগেটিভ হল, কিন্তু 2-3 পর ই আপনি আক্রান্ত হলেন। তাহলে রোজ ই টেস্টিং করাতে হয়। ডাক্তার বললে তবেই test করান, নচেৎ নয়।

4. সমাজে Covid নিয়ে তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। তাই টেস্ট ডাক্তার করতে বললেও গোপন রাখুন, টেস্ট করিয়েও গোপন রাখুন। আপনার অতি বিশ্বস্ত লোক, যিনি এই রোগ নিয়ে আতঙ্কিত, তাঁদের একদম বলবেন না, তাহলে ঐ বিশ্বস্ত ব্যক্তিই বিপর্যয় এর কারণ হতে পারে। আপনার রোগ ধরা পড়লে আপনাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডাক্তার ঘরেই থাকতে বলবেন। কিন্তু রোগের কথা প্রচার হয়ে গেলে সামাজিক বয়কট হতে পারেন, তাই খুব খুব সাবধান। রোগী ঘর থেকে না বেরোলেই হল।

5. পাড়া পড়শীর বড় অংশ এখন বড় গোয়েন্দা হয়ে গেছেন, কে কখন বেরোচ্ছেন নজরদারি চালাচ্ছেন। এঁদের সাথে এক্কেবারেই তাল মেলাবেন না, আপনার রোগ হলে এরাই সবচাইতে বড় উদ্যোগ নেবেন আপনাকে বয়কট করার। তাই দূরত্ব বজায় রাখুন এঁদের সাথে। মাঝে মাঝেই বাইরে বেরোন টুক- টাক কাজে, এই গোয়েন্দা রা এ নিয়ে প্রশ্ন করলে কোনো ব্যাখ্যা দেবার দরকার নেই। কিন্তু যদি ঘরবন্দি থেকে অকস্মাৎ অসুস্থ হয়ে বাইরে বেরোন তো এদের antenna তে ধরা পড়ে যাবেন।

6. ভিড়ে বেরোলে mask অবশ্যই পরুন, কিন্তু ফাঁকা জায়গায়, বা নিজ পরিবারের সাথে বাইরে থাকলে mask কখনো নয়। Mask পরা র ক্ষতি অনেক, এতে জীবাণুও আটকায় আবার প্রাণদায়ী অক্সিজেনও আটকে যায়। তাই রক্তে অক্সিজেন কমে যেতেই পারে, তাছাড়া আপনার নিঃশ্বাস বাইরে বেরোতে বাধা পেয়ে অনেক টা আবার শরীরে ঢুকে যায়, তাতে কার্বন ডাই অক্সাইড বেড়ে বিপর্যয় আনতে পারে। খুব selective জায়গায় মাস্ক পরুন।

7. দিনে একবার অন্ততঃ বাইরে ফাঁকা জায়গায় যান, বা ছাতে, ব্যালকনি তে ও ঘন্টাখানেক যান। মনে রাখবেন বাইরের অক্সিজেন এর থেকে ঘরে অক্সিজেন অনেক অনেক কম থাকে। আর লকডাউনের জন্য বহু মানুষ দীর্ঘ সময় ঘরে থাকার কারনে ঘরে কার্বন ডাই অক্সাইড অনেক বেড়ে যায়। আর কার্বন ডাই অক্সাইড অনেক ভারী গ্যাস, যা বাড়ির মেঝের উপর জমা হতে থাকে। আমরা শুয়ে থাকার জন্য মাটির কাছাকাছি থাকি, তখন ওই গ্যাস বড় ক্ষতি করতে পারে। তাই শুয়ে থাকা কমান। আর বাইরে অবশ্যই বেরোন।

8. এই রোগে 95% ক্ষেত্রেই কোনও চিকিৎসা করতে হয়না, ঘরে থাকতে হয়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হবার দরকার পড়ে। তখন কিন্তু প্রচুর খরচ হতে পারে। সেটা সামলানো সহজ নয়। সরকারী কর্মীদের health scheme আছে, কিন্তু তা বড় কম টাকার। তাই অন্য একটা insurance করিয়ে নিন। Mediclaim আগে থেকে থাকলে খুবই ভালো, না থাকলে করিয়ে রাখুন। মোটামুটি পরিবারের প্রত্যেকের 4-5 লাখ টাকা মতন। এই মেডিক্লাইম এর অসুবিধা সাধারণত 4 বছর আগে কোনও রোগের খরচ দেয়না। একটা Risk period আছে। কিন্তু এক্সিডেন্ট এর কোনো risk period নেই, আর Covid এর ক্ষেত্রে এটা 15 দিন। অর্থাৎ policy কেনার 15 পর রোগ হলেই খরচ পাওয়া যাবে এই policy দ্রুত করে নিতে পারেন, বছর 2-3 টেনে আর নাও continue করতে পারেন। টাকার ব্যবস্থা এক বড় শান্তি দেয়।

9. Covid এর ক্ষেত্রে অন্য উপসর্গ কোনো বড় সমস্যা নয়। দুটো জিনিস ছাড়া, এক অক্সিজেন ঘাটতি, আর dehydration. অক্সিজেন এর অবস্থা তো oximeter দিয়ে জানতেই পারছেন, এটা নীচে নামলে ডাক্তার দেখান। ধরেই নিতে হবে এ হসপিটাল ও হসপিটাল ঘুরতে হবে। কিন্তু হাতে সময় পাবেন। আর dehydration নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বারবার ORS খাওয়ান অসুস্থ হলে। জ্বর খুব বেশী হলে 4 ঘন্টা অন্তর Paracitamol দিন।

10. স্বাস কষ্ট হলে মুখ দিয়ে জোরে জোরে স্বাস নিন। যতটা পারেন হাওয়া টেনে নিন, তারপর যতটা পারেন ওই হাওয়া ধরে রাখুন, তারপর খুব ধীরে ধীরে স্বাস ছাড়ুন। আবার ওই রকম করুন। এই অবস্থায় Panic হলে অতি দ্রুত স্বাস পড়বে, এতে বিপজ্জনক অবস্থা হবে। তাই panic নয়।

11. এরকম স্বাস নেবার সাথে সাথে Levo Salbutamol জাতীয় Inhaler নিন। এটিও সবাই ঘরে রাখুন, সব ওষুধের দোকানেই পাবেন, অনেক নামে পাওয়া যায়, তবে “Levoline” নামে বেশি দেখা যায়।

12. যারা Trekking এ যান, বা উঁচু স্থানে যান, তাঁরা স্বাস কষ্ট হলে বা দম বন্ধ লাগলে একটা করে ছোট Oxigen canistra সঙ্গে রাখেন। দম বন্ধ লাগলে এটি দ্রুত কাজ করে। এটিও 3-4 টে can ঘরে রাখতে পারেন। ব্যবহার করা খুবই সহজ। দামও বেশি কিছু নয়, 10 লিটার can এর 500-550 টাকা মতন পড়ে। Flipcart/Amazon সব online এই পাওয়া যায়। এটি 15 মিনিট অন্তর 6-8 second নিলে দ্রুত relief হবে। এসব ই প্রাথমিক চিকিৎসা। যাতে hospital খোঁজার মতন সময় অনেকটা পাওয়া যায়। প্রাথমিক হলেও, এগুলোই life saving হতে পারে।

ভালো থাকুন, আর হ্যাঁ ভয়মুক্ত হয়ে আনন্দে থাকুন। এই রোগে আপনার কোনো ক্ষতি হবেনা।

Previous articleপশ্চিম বর্ধমানে ভাইরাস আক্রান্ত ৪৮২, লকডাউন না মানলে পদক্ষেপ
Next articleফি কমিয়ে নজির তৈরি বাগবাজার উইমেন্স কলেজের