পদ্ম ফোটা দূর অস্ত, জঙ্গলমহলে দাঁত ফোটাতে পারবে না বিজেপি! দাবি ছত্রধরের

সোমনাথ বিশ্বাস

দীর্ঘ ১১ বছর কারাগারের অন্ধ কুঠুরিতে থাকার পর মাস পাঁচেক আগেও মুক্তির আলো দেখেছেন ছত্রধর মাহাতো।

গত ফেব্রুয়ারিতে রাজ্য সরকারের তৎপরতাতেই কারাবাস মুক্ত হন জঙ্গলমহলের এই বহু চর্চিত বিতর্কিত নেতা। আর জেল থেকে ছাড়া পেয়েই সোজা রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য কমিটিতে অন্যতম সচিব পদে জায়গা করে নিয়েছেন ছত্রধর।

একুশের নির্বাচনে জঙ্গলমহলে জমি পুনরুদ্ধারে ছত্রধর নামক যোদ্ধার উপরেই ভরসা রাখছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাঝে কিছু ভুল মূল্যায়ন হলেও নেত্রীর এমন সিদ্ধান্তে কৃতজ্ঞ ছত্রধর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডতে নিজেকে নিয়োজিত করাই তাঁর এক ও অদ্বিতীয় স্বপ্ন বলে জানিয়েছেন ছত্রধর। তাঁর কথায়, “তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে আমি তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী। ২০০৮ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সরাসরি কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। আবার কাজ করবো। এই মুহূর্তে শুধু রাজ্য নয়, গোটা দেশে তাঁর মতো কোনও বিচক্ষণ রাজনৈতিক নেতা বা নেত্রী নেই। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আবার কাজের সুযোগ পেয়ে আমি ধন্য”।

এখন বিশ্ব বাংলা সংবাদের প্রতিনিধি সোমনাথ বিশ্বাসকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে ছত্রধর আরও বুঝিয়ে দিলেন, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলে ঘাসফুল চাষের জন্য উর্বর জমি তৈরিতে নিজের সবটুকু উজাড় করে দেবেন তিনি। নেত্রীর ভরসার মর্যাদা দিতে জঙ্গলমহলের সিংহভাগ আসন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঝুলিতে তুলে দিতে কোনও চেষ্টাই বাদ রাখবেন না। দলের গুরুত্বপূর্ণ দ্বায়িত্ব পাওয়ার পর ছত্রধর আত্মবিশ্বাসের সুরে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিলেন, পদ্ম ফোটা দূর অস্ত, জঙ্গলমহলে দাঁত ফোটাতে পারবে না বিজেপি!

পুলিশের এনকাউন্টারে নিহত মাওবাদী পলিটবুরো সদস্য কিষেনজির লালগড় আন্দোলনের সঙ্গে একটা সময় তিনি সক্রিয় ভাবে যুক্ত ছিলেন বলে শোনা যায়। বাম আমলে কিষেনজির হাত ধরেই নাকি তিনি জঙ্গলমহলের “পোস্টারবয়” হয়ে উঠেছিলেন বলে শোনা যায়। সেই লালগড় অন্দোলনের “মুখ” ছত্রধরই একুশের বিধানসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলের হারানো জমি পুনরুদ্ধারে তৃণমূল নেত্রীর ঘোড়া হয়ে উঠতে পারেন বলেই মত সংশ্লিষ্ট মহলের।

ঝাড়গ্রাম জেলায় সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদ না দিয়ে একেবারে রাজ্য কমিটির সচিব পদে তাঁকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ছত্রধর নিজেই বলেন বিষয়টি নিয়ে দলের অন্দরে ও কর্মীদের মধ্যে থেকে একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া তিনি অনুভব করছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর ব্যাখ্যা, শুধুমাত্র জেলার দায়িত্ব পেলে জেলা নিয়ে আরও অনেক সময় দেওয়া যেত।
জেলার অনেক মানুষ তাঁকে সর্বক্ষণ চাইছেন। ব্লক স্তরের নেতৃত্ব বা অঞ্চল স্তরের নেতৃত্বও চাইছেন। কিন্তু অন্যদিকে আবার গোটা জঙ্গলমহলের আইকন তিনি। সেক্ষেত্রে ঝাড়গ্রাম বাদ দিয়েও পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার একটা বৃহৎ অংশ নিয়ে জঙ্গলমহল। সেখানেও প্রচুর আদিবাদী মানুষ থাকেন, তাঁরাও ঝাড়গ্রামের মতো ছত্রধরের নেতৃত্ব চাইছেন। ছত্রধরের কথায়, “জঙ্গলমহল আমাকে পরিচয় দিয়েছে। জঙ্গলমহল আমাকে ছত্রধর বানিয়েছে। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গোটা জঙ্গলমহলের মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে সেটাই আমার বড় প্রাপ্তি।”

তৃণমূল বড় দায়িত্ব দেওয়ার পর আবার তাঁর বিরুদ্ধে নতুন করে নানা ধরণের তদন্তের তোড়জোড় শুরু করছে কেন্দ্র।
২০০৯ সালের ২৭ অক্টোবর পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনগণের কমিটির সশস্ত্র বাহিনী ছত্রধর মাহাতোর মুক্তির দাবিতে ঝাড়গ্রামের বাঁশতলায় পণবন্দি করেছিল রাজধানী এক্সপ্রেস। ছত্রধর ওই কমিটিরই মুখপাত্র ছিলেন। ওই ঘটনার তদন্তে নেমেছে এনআইএ। ছত্রধরের স্পষ্ট উত্তর, “এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। সেটা ছিল বাম আমল। জঙ্গলমহলে সিপিএমের সবচেয়ে বড় শত্রু ছিলাম আমি। ওরা জেল থেকে আমাকে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে দিত না। তাহলে কীভাবে এমন একটা কাজের অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে ওঠে? তবে এতে বিজেপির ক্ষতি। মানুষ বুঝবে ওরা কতটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরায়ণ। কতটা কুৎসাবাজ বিজেপি দল। এতে আখেরে আমাদেরই সুবিধা”।

কারাবাস মুক্ত হওয়ার পর রাজনীতির দ্বিতীয় ইনিংসে ছত্রধরের মূল লক্ষ্য কী? ছত্রধর জানান, রাজনীতির নতুন ইনিংসে রাজ্যে উত্থান হওয়া বিজেপিকে নির্মূল করার তাঁর মূল লক্ষ্য। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে একেবারে বুথ স্তর থেকে পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত সংগঠনকে মজবুত করতে চান তিনি। নীচু স্তরের যে সকল কর্মীরা দলে অবহেলিত, বঞ্চিত, অভিমান ভাঙিয়ে তাঁদের ফিরিয়ে আনতে চান ছত্রধর। কারণ, তিনি মনে করেন তৃণমূল স্তরের কর্মীরাই জর কোনও দলের সম্পদ। তাঁরা বদলে দিতে পারে রাজনীতির পাশার চাল।

লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ঝাড়গ্রাম-সহ জঙ্গলমহলে ভালো ফল করেছে। রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ নিজে মেদিনীপুরের সাংসদ। জঙ্গলমহলে তাঁর একটা দাপট আছে বলে শোনা যায়। তৃণমূলের রাজ্য কমিটি সদস্য ছত্রধর মাহাতোর কাছে এটা কত বড় চ্যালেঞ্জ? ছত্রধর অবশ্য দিলীপ ঘোষকে গুরুত্বই দিতে চান না। তাঁর দাবি, এখানে দিলীপ ঘোষ কিছুই করতে পারবেন না। দিলীপ ঘোষ কোনও বড় নেতা নয়। দিলীপ ঘোষের রাজনৈতিক কেরিয়ারে কোনও গণ আন্দোলনের ইতিহাস নেই। ভোটের সময় গেরুয়া বাহিনী যেটা করতে পারে তা হল, কিছু টাকা ছড়াতে পারে আর কেন্দ্রের মেশিনারিকে কাজে লাগাতে পারে। তবে সেটাও রুখে দেওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছত্রধর মাহাতো। এবং জোরের সঙ্গে তাঁর দাবি, পদ্ম ফোটা তো দূর অস্ত, জঙ্গলমহলে দাঁত পর্যন্ত ফোটাতে পারবে না বিজেপি!

Previous articleকেন রাফাল নিয়ে এত উত্তেজনা? কী রয়েছে রাফালে? জেনে নিন
Next articleগুরুতর অসুস্থ ফুয়াদ হালিম, টুইটে জানালেন স্ত্রী