অযোধ্যার উৎসবের মুহূর্তে বিঠুরের সীতাকুণ্ডের জন্য নীরবতাপালন হবে কি? কুণাল ঘোষের কলম

কুণাল ঘোষ

অযোধ্যায় রামমন্দিরের জমজমাট ভূমিপুজোর মুহূর্তে উপেক্ষিত বিঠুরের সীতাকুণ্ড; যেখানে পাতালপ্রবেশ করেছিলেন অপমানিত সীতা।

*******************

5 অগাস্ট অযোধ্যায় রামমন্দিরের ভূমিপুজো।
সবরকম প্রক্রিয়া শুরু।

কারুর কোনো বিশ্বাস বা সম্মানে বিন্দুমাত্র আঘাত দেওয়ার জন্য এই লেখা নয়।
রামায়ণ ও শ্রীরামচন্দ্রের সঙ্গে আমরাও শৈশব থেকে পরিচিত।

অযোধ্যায় রামমন্দির কতটা যুক্তিযুক্ত, সেই বিতর্ক টানতেও এই লেখা নয়। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর এই এনিয়ে বিশ্লেষণটা আপাতত এড়ানোই ভালো। তার ময়নাতদন্তের জন্যেও এই লেখা নয়।

যা নিয়ে বিতর্ক, তা হল ভূমিপুজোর সময়কাল।
করোনার তাণ্ডব চলছে। উত্তরপ্রেদশও আক্রান্ত। মন্দির চত্বরেও করোনার থাবা। এই ধাক্কায় দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত। ঠিক এই মুহূর্তে দেশব্যাপী মন্দির উন্মাদনা তৈরি চেষ্টা এবং অযোধ্যায় এত বড় কর্মসূচি কতটা যুক্তিযুক্ত?

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টুইট করে বলছেন আমি করোনা আক্রান্ত। আমার কাছাকাছি যারা ছিলেন, তারা কোয়ারান্টিনে যান।

তাহলে প্রধানমন্ত্রী কী করবেন?

উত্তরপ্রদেশে যোগীর মন্ত্রীর মৃত্যু। তিনি কী করবেন?

কেন্দ্র বলছে, 65 বছরের বশি বয়সীরা বাড়ির বাইরে বেরোবেন না।
পূজারি ও আমন্ত্রিতদের বয়স কত?

ভিভিআইপি, অতিথি, পূজারি, নিরাপত্তারক্ষীসহ বিরাট জমায়েত। পুজো। লাড্ডু বিতরণ। সারা দেশ থেকে আসা এবং সারা দেশে ছড়িয়ে যাওয়া।

খুব দরকার ছিল এই সময়টায়?

রামমন্দির যাঁদের কাছে বিশ্বাস, ভাবাবেগ, তাঁদের এতটুকু আঘাত না করে বলতে পারি, করোনাযুদ্ধের সময় খোদ প্রধামন্ত্রীকে সামনে রেখে এই ধর্মীয় জমায়েতটা কি একটু পিছিয়ে দেওয়া যেত না?

দেশে নিশ্চিতভাবে অগ্রাধিকার এখন করোনামোকাবিলা এবং আর্থিক হাল ফেরানো।
এই ফোকাসটা এই মুহূর্তে অন্যদিকে সরানো কি ভালো উদাহরণ হচ্ছে?

আর একটি কথা।
সবিনয়ে বলি।
শ্রীরামচন্দ্রের প্রতি পূর্ণ সম্মান দিয়েই বলি।

সম্প্রতি বিঠুর গিয়েছিলাম। কানপুরের কাছে বিঠুরে বাল্মীকি আশ্রম ও সীতামন্দির। দেখলাম। ঘুরলাম। আজও খবর নিলাম। অযোধ্যায় রাজকীয় রামমন্দিরের ভূমিপুজোর সময় উপেক্ষিতই থাকছে বিঠুর।

কয়েকজনের মুখে রামরাজ্যের কথা শুনছি।

আমার সবিনয় কৌতূহল,

অযোধ্যার রামরাজ্যে মা সীতার স্থান হল না কেন?

যে সীতা নিজের সুখের জীবন ছেড়ে স্বেচ্ছায় স্বামীর সঙ্গে বনবাসে গেলেন, সেই স্বামী রাজা হওয়ার পর তাঁকে আবার একা বনবাসে যেতে হল কেন? তাও অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়?

কেন অযোধ্যার রাজপ্রাসাদের বদলে রামচন্দ্রের দুই পুত্রের জন্ম হল জঙ্গলের মধ্যে আশ্রমে?

কেন মা সীতা আর অযোধ্যা ফিরতে পারেননি। এই বিঠুরেই সীতাকুণ্ডে তাঁকে পাতালপ্রবেশ করতে হল?

যদি লব কুশ যুদ্ধে হনুমানকে বন্দি আর শ্রীরামচন্দ্রকে নাজেহাল করতে না পারত, তারা কি বাবার পরিচয় পেত? অযোধ্যায় ফিরতে পারত?

অযোধ্যা যোগীর উত্তরপ্রদেশে।
বিঠুরও যোগীরই উত্তরপ্রদেশে।
অনেকে বহু রামায়ণের বহু সংস্করণ টাতে চাইবেন। কিন্তু বিঠুরের মাটিতে যা স্মৃতিস্থাপত্য, তা অস্বীকার হবে কী করে?

উপেক্ষিত বিঠুর অনেক অভিমান নিয়ে রামরাজ্যের সংজ্ঞার প্রশ্ন তোলে।

রামমন্দিরের ভূমিপুজোর উৎসবের মুহূর্তে বিঠুরের সীতাকুণ্ডের জন্য কি একমিনিট নীরবতাপালন হতে পারে না?

Previous articleবুধবার থেকে খুলছে জিম-যোগ সেন্টার, একাধিক নির্দেশিকা জারি স্বাস্থ্যমন্ত্রকের
Next articleবর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর পর এবার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী! কর্নাটকে করোনা আক্রান্ত সিদ্দারামাইয়া