Saturday, August 23, 2025

শ্যামল চক্রবর্তী এক বহমান ধারার নাম

Date:

Share post:

না,শ্যামল চক্রবর্তী আমার কাছে স্মৃতি নন।শ্যামল চক্রবর্তী একটি বহমান জীবনের ধারার নাম।তাঁকে নিয়ে কিছু লিখব, অন্তত নিজের অভিজ্ঞতার কথা, সেই অভিজ্ঞতার সংখ্যাও আমার কাছে নেহাতই কম।

তাঁকে দূর থেকে এবং কাছ থেকে দেখেছি বহুবার।শুনেছি তাঁর কথা।পড়েছি তাঁর লেখা বই।কিন্তু সেসব নিয়ে লেখবার মত স্পর্ধা বা জ্ঞান আমার কথা বলার মত কথা বলার মত প্রজ্ঞা আমার নেই।

কিন্তু আমার দূর থেকে দেখা প্রিয় নেতাদের অন্যতম সম্পর্কে দুটি ঘটনার কথা না লিখলে রাজনীতির এই বিস্তীর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ে কাছ থেকে দেখা দু একটি ঘটনার কথা কখনোই বলা হবেনা।সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়া হবেনা আমার চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ইতিহাস।আজ জনশূণ্য হাইকোর্টের দীর্ঘ বারান্দায় বসে মোবাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে যখন দেখলাম শ্যামল দার চলে যাওয়ার খবর সেই সময় থেকেই আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে ২০১৩সালের ৩১ শে ডিসেম্বরের কথা।

হিমের রাতে কনকনে ঠান্ডা কলকাতা যখন বর্ষ বরণের আনন্দে কোমড় দোলাচ্ছিল তখনই, ঠিক তখনই মধ্যমগ্রামের সেই ট্যাক্সি চালকের মেয়েটির নিথর দেহ তার বাবার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে সারারাত রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছিল কলকাতা পুলিশ। ঠিক চোরের মত।এ দৃশ্য টেলিভিশনে দেখে মাথা ঠিক না রাখতে পারা অনেকেরই সেরাতে ঘুম আসেনি।হয়ত ঘুম আসেনি শ্যামল চক্রবর্তীরও।সকালে ক্ষমতার দম্ভে উন্মত্ত সাদা পোষাকের পুলিস সেই দেহ ছোঁ মেরে পোড়াতে নিয়ে যাচ্ছিল নিমতলায়। কিন্তু তা হবে কি করে?

ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই পৌছেগেছেন শ্যামল বাবুরা ।লড়াই মানে সম্মুখ সমর।পুলিশের লাঠির সামনে সন্তান হারা পিতার শেষবারের সন্তানের শেষকৃত্য করারা অধিকার প্রতিষ্ঠার। নিজের শরীর, বয়স এসবকে পরোয়া না করে লড়াইয়ের ময়দানে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার সাহস- দেখেছিলাম চোখের সামনে।ভূতনাথ মন্দিরের সামনে শবদেহ বাহী শকটের সামনে দাঁড়িয়ে,আরো অগণিত মানুষের জমায়েতে।সেই সাহসের সামনে আর দেহ আটকাতে পারেনি নিমতলা থেকে শ্রমিক ভবনের যাত্রাপথ।

সেটা ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগের দিন কাকদ্বীপে জীবন্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল কমরেড দেবু দাস ও উষা দাসকে।খুন হয়ে যাওয়া বাবা মার দেহ না পেয়ে কোর্টে মামলা করতে হয়েছিল পুত্র দীপঙ্কর দাসকে।বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর নির্দেশে ডায়মন্ডহারবার হাসপাতালের মর্গ থেকে ছেলে দীপঙ্করের হাতে বাবা মায়ের পুড়ে যাওয়া দেহ তুলে দেবার বন্দোবস্ত করে পুলিশ।কমরেড শমীক লাহিড়ীর নির্দেশে সেই কালবৈশাখী বিকেলে দীপঙ্করের সাথে ডায়মন্ডহারবার যাওয়ার কথা আমাদের কয়েকজনের। শ্যামল বাবু ও কমরেড মিনতি ঘোষও যাবেন। গাড়িতে দীপঙ্করের সঙ্গে সৌরভ মন্ডল,অনন্যা দে,দেবাশীষ নন্দীদের সাথে আমিও ছিলাম।সেদিন কাছ থেকে দেখেছিলাম এই মানুষটিকে, কমরেড হয়ে কমরেডদের পাশে দাঁড়য়ে থাকতে লড়াইয়ের ময়দানে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত।সন্তান হারা পিতা আর পিতা মাতা হীন সন্তানের লড়াইয়ে জানবকবুল করে।

এরপর বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে।কথাও হয়েছে।কিন্তু কমরেডের কাছে আমি শুধুই শ্রোতা,একজন শিক্ষার্থী। পড়তে বলেছেন।জানতে বলেছেন।শিখতে বলেছেন পুরান থেকে কোরান,মহাভারত থেকে রবীন্দ্রনাথ, তত্ব থেকে বাস্তবের মাটিতে লড়াইয়ের নাম কমরেড শ্যামল চক্রবর্তী।
জানলা খোলা মন আর অবারিত সংগ্রামের নেতা শ্যামল চক্রবর্তী।এই।বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে শুভ্র সমুজ্বল প্রজন্মের অগ্রনী নেতা।ইতিহাস তাঁকে মনে রাখবে একজন আধুনিক মানুষ হিসাবে।শেষ যুদ্ধ শুরু আজ কমরেড,এসো মোরা মিলি একসাথ!

লাল সেলাম কমরেড।

spot_img

Related articles

সঠিক পরিকল্পনাই ডায়মন্ডহারবারের সাফল্যের চাবিকাঠি, মনে করছেন আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়

মাত্র তিন বছরের ক্লাব। কিন্তু কী অসাধারণ সাফল্য। কলকাতা লিগ, আইলিগ থ্রি থেকে আইলিগ টু জিতে এবার আইলিগের...

অসংগঠিত শ্রমিক-ক্ষেত্রে পথ দেখাচ্ছে বাংলা: সাহায্য পেলেন ৭২০ শ্রমিক

একের পর এক নতুন প্রকল্প, অসংগঠিত শ্রমিকদের দাবিদাওয়া নিয়ে লাগাতার আলোচনা, তাঁদের পরিবারের প্রতি নজর রাখার ব্যাপারে তৎপর...

প্রাপ্য চায় বাংলা, উপহার না: মোদিকে জবাব তৃণমূলের

বাংলার মানুষ উপহার চায় না, প্রাপ্য চায়। উপহার দিয়ে বাংলার মানুষকে অপমান করবেন না। বাংলায় বরাদ্দ নিয়ে শুক্রবার...

অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ব্যর্থ শাহ, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা মোদির: কটাক্ষ তৃণমূলের

অনুপ্রবেশ ইস্যুকে বার বার জাগিয়ে তুলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার আদতে নিজেদের ভুল নিজেরাই চোখ আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।...