স্বাস্থ্যের স্বাধীনতায় বহুতল ছেড়ে বস্তিবাসীর পাশে রুদ্রনীল

রাত পোহালেই ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসকের হাত থেকে পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্তির আরও এক বর্ষপূর্তি। দেশজুড়ে পালিত হবে ৭৪ তম স্বাধীনতা দিবস। এবার করোনা মহামারি আবহের মধ্যে স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের জৌলুস অনেকটাই কম। তবুও এই বিশেষ দিনটিকে গর্বের সঙ্গে পালন করবে প্রতিটি ভারতবাসী। আর ঠিক তার প্রাক্কালে স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ ও মাহাত্ম তুলে ধরলেন অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ।

স্বাধীন ভারতের প্রতিটি নাগরিকের ৫টি মৌলিক অধিকার ফের একবার মনে করিয়ে দিলেন রুদ্রনীল। বিশেষ করে স্বাস্থ্যের অধিকার নিয়ে মুখ খুললেন তিনি। যা এই করোনা মহামারি আবহে বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।

স্বাধীনতা দিবসের ঠিক আগের দিন “জননী” নামের এক সমাজসেবা মূলক কর্মসূচির সূচনা করলেন রুদ্রনীল। যার মূলমন্ত্র “স্বাস্থ্যের স্বাধীনতা”। অর্থাৎ, দেশের প্রতিটি নাগরিক যাতে সুস্থ থাকেন, সেটা দেখার দায়িত্ব তাঁর সহ-নাগরিকদের। এমনটাই মনে করেন রুদ্রনীল। তিনি “জননী” অর্থাৎ মায়ের সঙ্গে এই প্রকল্পের তুলনা টানেন। আর স্বাধীনতা মানেই অধিকার, সেই স্বাধীনতা বা অধিকার স্বাস্থ্যেরও বটে।

মূলত, মহামারির এই কঠিন পরিস্থিতিতে কলকাতা শহরের বস্তিবাসী মানুষদের পাশে দাঁড়াতেই রুদ্রনীল ঘোষের এমন উদ্যোগ। যেখানে শুধু বহুতলের বড় লোকেরা বাঁচবেন, সেটা হয় না। বাঁচাতে হবে বস্তিবাসীরদেরও। তাঁর এই প্রয়াসের পাশে দাঁড়িয়েছে “ওহ এক্সপ্রেস” ও “সঞ্জীবন” হাসপাতাল।

এদিন রুদ্রনীল জানান, প্রাথমিকভাবে কলকাতার প্রায় সাড়ে তিন হাজার বস্তির ৫ লক্ষেরও বেশি পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর সংকল্প নিয়েছেন তাঁরা। সবাই যাতে সুস্থ থাকেন সেই চেষ্টাই রয়েছে এই কর্মসূচির মধ্যে।

শহরের বস্তিগুলিতে এমন অনেক পরিবার আছে, যাঁদের করোনা ও ডেঙ্গু মোকাবিলায় নূন্যতম আর্থিক সামর্থ্যটুকু নেই। এখন থেকে সেই সমস্ত মানুষকে সুস্থ রাখার সংকল্পের নামই “জননী”। আজ থেকে যার পথচলা শুরু।

এদিন শুরুতেই দক্ষিণ কলকাতার গল্ফ গ্রিনের রংকল কলোনিকে বেছে নেন রুদ্রনীল। যে এলাকার একটা বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে বস্তি। আর ঠিক তার পাশেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে অভিজাত সাউথ সিটি মল ও আবাসন। এখানকার বস্তিবাসীদের আট থেকে আশি সকলের হাতে একটি বিশেষ কিট ব্যাগ তুলে দেন রুদ্রনীল। যেখানে থার্মোমিটার, মাস্ক, স্যানিটাইজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ আছে। যা মহামারি মোকাবিলায় প্রাথমিক হাতিয়ার বলেই ব্যাখ্যা করেন রুদ্রনীল। এছাড়াও এখন থেকে প্রতি মাসে বস্তিবাসীদের যাঁরা করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের একটা অংশকে বিনামূল্যে সঞ্জীবন হাসপাতাল চিকিৎসা করবে বলেও জানিয়েছে রুদ্রনীল।

এখানেই শেষ নয়। আগামীদিনে আরও বড় সংকল্প নিয়ে পথ নামার কথা জানিয়েছেন অভিনেতা। ইতিমধ্যেই বস্তিবাসীদের যাতে করোনা টেস্ট করা যায়, তা নিয়ে কলকাতা পুরসভার বিদায়ী মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষের সঙ্গেও তাঁর কথা হয়েছে।

রুদ্রনীল আবেদন করেছেন, এমন একটি উদ্যোগে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-দল-রং নির্বিশেষে সকলকে এগিয়ে আসার।
বিশেষ করে দেশের যুব সমাজের কাছে এই আবেদন রেখেছেন তিনি। এমন একটি বৃহৎ কর্মযজ্ঞে সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সাহায্যও প্রার্থনা করেছেন রুদ্রনীল। একইসঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালগুলির লাগাম ছাড়া বিল নিয়েও সরব হয়েছেন অভিনেতা। বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তারবাবুদের বিষয়টা একটু সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করার অনুরোধও করেছেন তিনি।

সবশেষে করোনা মোকাবিলায় রাজ্যবাসীকে উদ্বুদ্ধ-উৎসাহ দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইতিবাচক ভূমিকা সকলের সামনে তুলে ধরেছেন অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ।

Previous articleএসপি বালাসুব্রহ্মন্যমের শারীরিক অবস্থার অবনতি, রাখা হয়েছে আইসিইউ-তে
Next articleরক্তদান করেই স্বাগত স্বাধীনতা দিবসকে