কুন্তল চৌধুরী
আপনার নিজের দাদার বউকে দেখে আপনার সেক্স/কাম উত্তেজনা জাগে? আপনার স্ত্রী কে দেখে আপনার ভাই কামাতুর হয়ে ওঠে? আপনার বোনকে তাঁর স্বামীর ভাই ‘ওই দৃষ্টি’ তে দেখে?
কী হলো রেগে যাচ্ছেন কেন? চড় মারতে ইচ্ছে করছে আমাকে? থামুন, থামুন এতো হিপোক্রেসি হয়ে যাচ্ছে। আপনিই তো হইচই সাবস্ক্রাইব করে গোগ্রাসে দুপুরের ঠাকুরপো দেখেন তাই না? সিজিন ১, ২, ৩ আপনার তো মুখস্থ তাই না? সেখানে ‘বউদি-দেবর’ সম্পর্কটাকে ঠিক কীভাবে দেখানো হয়েছে?
কী মনে হচ্ছে নীতি পুলিশগিরি, আরে ভাই এটা ২০২০, আরে কুল ব্রো বাদ দে। এরকমই কিছু বলতে ইচ্ছে করছে তো? সরি, আর বাদ দেওয়া যাচ্ছে না। সিরিয়াসলি বলছি সত্যি আর বাদ দেওয়া যাচ্ছে না। বিষয়গুলো দিন প্রতিদিন যেনো বিনোদনের বদলে সামাজিক আবর্জনা থেকে নোংরামির পীঠস্থান হয়ে যাচ্ছে। কী হচ্ছে?
১) ছোট থেকে আমরা দেখেছি, শিখেছি, পড়েছি বৌদি মায়ের মতো। রামের সুমতির মা মরা রামকেই মনে করুন না। সেই যে সন্তানস্নেহে রাম কে তাঁর বৌদির লালন পালন ওটাই তো আমাদের সমাজে বৌদি-দেবর এর সম্পর্ক ছিলো। সমাজের স্থানে স্থানে ঘুণটা ধরেইছিলো। তারপর একদম সরাসরি সিরিজ বানিয়ে প্রমোট করা হলো ‘বৌদি লালসার একটি বস্তু’ ইনার মিনিং এ ‘দুপুরের ঠাকুরপো’। যে সিরিজকে আপামর বাঙালি হাঁ করে গিললো। বাহবা দিলো। বৌদির পুরো সংজ্ঞাটাই যেনো সামাজিক ভাবে বদলে গেলো। যারা হুল্লোড় করলো তারাও ভুলে গেলো তার বোন/দিদি ও কারো বৌদি হবে, তার স্ত্রীও কারো বৌদি হবে। আর তারপর তাকেও ইঞ্চিতে ফুটে মাপবে “বৌদি লালসার দ্রব্য” চিন্তাধারার সমাজ।
২) সেনা জওয়ানের স্ত্রী যৌন উত্তেজনার বসে পরকীয়াতে লিপ্ত হয়ে প্রেমিককে নিজের স্বামীর উর্দি পরিয়ে সেই উর্দি টেনে ছিঁড়ে অশোকস্তম্ভকে ধুলোতে মিশিয়ে দিচ্ছেন। এটি এএলটি বালাজির XXX আনসেন্সরড সিরিজের দৃশ্য।
৩) বাঙালি পরিচালক কেন ঘোষের Abhay2 সিরিজে দেখা গেলো ক্ষুদিরামকে সন্ত্রাসবাদী সাজিয়ে ক্রিমিনাল লিস্টে স্থান দেওয়া হয়েছে। কতদূরের সাহস পেলে এসব সম্ভব?
হ্যাঁ, সামাজিক সম্পর্ক থেকে বিপ্লবীদের চরিত্র বদলে দেওয়ার সাহসটা ওদের হয়ে গেছে। ওদের যে সাহসটা সেটা এই দর্শক সমাজই করে দিয়েছে। যে কোন ওয়েব সিরিজে যত বেশী যৌনতা, যত বেশী বিকৃত চিন্তাধারার প্রকাশ তত হটকেক। তত আলোচনা। বিকৃত মনস্কতার বাঙালি-অবাঙালি বলে কোন ভেদ নেই। হয়তো হইচই ১৫% যথাযথ স্ক্রিপ্ট আর ৮৫% সফট পর্ন দেখিয়ে পপুলার OTT প্ল্যাটফর্ম হতে পারতো না।
জানি যুগ বদলেছে। আমরা আধুনিক কিন্তু তাই বলে শ্রদ্ধা, সম্মানের সম্পর্কগুলোকেও সেক্সের বন্ধনে আবদ্ধ করতে হবে? ফ্রিডম অফ স্পীচের নামের যা খুশি তাই দেখিয়ে দেওয়া যাবে? বিষয়টা যদি চরম বিতর্কিত হয় তো একটা সমালোচনার ঝড় ওঠার পর তৎক্ষনাৎ ‘ক্ষমা’ চেয়ে নিলেই সাত খুন মাফ?
এই যে ক্ষুদিরামকে ক্রিমিনাল দেখিয়ে ZEE5, বাঙালি পরিচালক কেন ঘোষ ক্ষমা চেয়ে নিলো ব্যস মিটে গেল ব্যাপারটা? একটা ছবি কী দুম করে শ্যুট করেই রেডি হয়? কতটা সময় লাগে সেটা এডিট করতে? তখন গোটা ইউনিটের কেউ জানতো না ছবিটা ক্ষুদিরামের? বাঙালি পরিচালক কেন ঘোষ ও ক্ষুদিরামকে চেনে না? না, এটা হতে পারে না। সবটা জেনে বুঝেই করা হয়েছে। নেগেটিভ পাবলিসিটির জন্য। তাই এই ভুলের কোন ক্ষমা নেই।
এখন বলতে পারেন সিরিজ হয়েছে মানেই দেখতে হবে? যার ইচ্ছে সে দেখবে। খুব ভালো কথা। কিন্তু আমরা যে সমাজবদ্ধ জীব। সমস্যাটা তো এখানেই। আমি দেখছি না, সুস্থ চিন্তাধারার মানুষজন দেখছে না। কিন্তু পাশের বাড়ির ছেলেটা দেখছে। আর তারপর ফাঁকা রাস্তায় তার সম্পর্কের তুতো বৌদিকেও এমন ইঙ্গিত করছে যেটা সভ্য সমাজে চরম দৃষ্টিকটূ। হয়তো ছেলেটার মনে সুপ্ত নগ্ন চিন্তায় ভর্তি ছিলো। এখন সেই চিন্তাধারাকে একদম স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে ‘বৌদি’ সম্পর্কটাকে অন্যভাবে রিপ্রেজেন্ট করে।
এই জিনিস থামবেও না। কারণ ‘ন হন্যতে’ টুকে ফিল্ম বানানো সঞ্জয়লীলা বনশালির কন্ট্রোভার্সি কনসেপ্ট এখন সকলেই ক্যাপচার করে নিয়েছে। এটাই এখন সফলতার সবচেয়ে শটকার্ট পথ। যত বিতর্ক তত দর্শক তত হিট। তাছাড়া সাকসেসের জন্য এরা বিপ্লবী, সেনা জওয়ান, ভাই-বোন, বৌদি-দেবর হয়তো মা-ছেলে সম্পর্ককেও যখন তখন সেখানে খুশি নামাতে পারে।
ধন্যবাদ। আমরা ‘প্রগতিশীল’ ‘আধুনিকমনস্ক’, শিক্ষিত মানুষ, কারণ অশিক্ষিতদের চেয়ে সমাজের এলিট শ্রেণীই কিন্তু এগুলো সাবস্ক্রাইব বেশী করে………