JEE -NEET নিয়ে কেন্দ্রের যুক্তিহীন ‘ইগো’,কণাদ দাশগুপ্তর কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

◾অজস্র গুরুত্বপূর্ণ জীবন-মরণ সমস্যা রয়েছে এদেশে, যার সমাধানে এই ‘দৃঢ়তা’ একবারও দেখা যায়নি৷

◾অথচ দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকার নির্দিষ্ট এজেন্সির মাধ্যমে নির্ধারিত তারিখে JEE-NEET পরীক্ষা নিতে বদ্ধপরিকর।

◾সাড়ে ৮ লক্ষ পরীক্ষার্থী JEE-তে বসছেন৷ আর NEET-এর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৬ লক্ষ৷

◾ওদিকে দেশের শীর্ষ আদালত কেন্দ্রের এই মনোভাবের পাশেই দাঁড়িয়েছে।

◾কেন্দ্র ঠিক কী প্রমান করতে চাইছে ? বোঝাতে চাইছে যে নরেন্দ্র মোদি এমন একটি শক্তিশালী সরকারের প্রধান, যে সরকার নিজের সিদ্ধান্ত থেকে একদমই পিছু হটে না।

◾বিরোধী দল শাসিত রাজ্যগুলি একযোগে এই JEE ও NEET পরীক্ষা নভেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়েছে।

◾কেন্দ্র এখনও পর্যন্ত সেই আর্জিতে কর্ণপাত করেনি৷ কেন্দ্রের ‘ইগো’ এতটাই টনটনে৷

◾বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকার এই ইগোর লড়াইয়ে নেমে একটা কাজ অবশ্যই করতে পেরেছে৷ এই মুহুর্তে একদমই অপ্রত্যাশিত এক বিরোধী ঐক্য সৃষ্টি করে দিয়েছে।

◾এই ঐক্য কতদিন থাকবে, এই ঐক্য আদৌ কার্যকর হবে কি’না, তা ভবিষ্যৎ বলবে, কিন্তু বর্তমান এটাই, বিরোধী দলগুলিকে এক প্ল্যাটফর্মে এনে দেওয়ার কৃতিত্ব অবশ্যই দাবি করতে পারে বিজেপি তথা কেন্দ্র৷

◾কিছুতেই বোঝা যাচ্ছে না, সেপ্টেম্বরে নির্ধারিত এই পরীক্ষা কেন স্থগিত করা যাচ্ছে না ! নভেম্বর- ডিসেম্বরে পরীক্ষা হলে কার ক্ষতি হবে ? পরীক্ষাথীদের? না’কি কেন্দ্রীয় সরকারের ?

◾শিক্ষাবর্ষের সামান্য সমন্বয় করা গেলেই তো এই সমস্যার সমাধান করা যেত৷

◾এ বছরের JEE – NEET পরীক্ষা যেন মোদি সরকারের দম্ভ আর অহংকারের ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে৷

◾নেহাতই অপরিনত ভাবনাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে অসংগঠিত বিরোধী দলগুলিকে একজোট করে অকারনে এক রাজনৈতিক লড়াইয়ে ঢুকে পড়েছে বিজেপি৷

◾যদি ঘটনাচক্রে JEE – NEET পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়, তার “কৃতিত্ব” কারা দাবি করবে ?

◾আশা করা যায়, প্রধানমন্ত্রী মোদি জানেন, এদেশে এ পর্যন্ত করোনা- আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩,১০, ২৩৪ জন৷

◾আশা করা যায়, তিনি এটাও জানেন এই মারন ভাইরাস এ পর্যন্ত ৬০, ৪৭২ জনকে শহিদ করেছে৷

◾সংখ্যাবৃদ্ধি-যজ্ঞের প্রধান পুরোহিত কেন হতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী?

◾এই ইস্যু তো সহজেই সংখ্যাগরিষ্ঠ পরীক্ষার্থী এবং তাঁদের অভিভাবকদের মতামতের উপর ছেড়ে দেওয়াই যেত৷

◾আরও কয়েকটি প্রশ্ন এর পরেও থাকছেই৷

🔺 কেন্দ্রের অহেতুক জেদে দেশের লক্ষ লক্ষ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী এবং তাঁদের পরিবার অথবা পরীক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত অন্যান্যদের মধ্যে যদি পরীক্ষা চলাকালীন অথবা পরীক্ষার পর সংক্রমণ ধরা পড়ে, কেন্দ্রীয় সরকার প্রত্যেকের চিকিৎসার এবং সুস্থ করার দায়িত্ব নিতে তৈরি আছে তো ?

🔺 এই দায়িত্ব পালন করার টাকা এবং উপযুক্ত সাহস কেন্দ্রের আছে তো ?

🔺 দুর্ভাগ্যক্রমে যদি সংশ্লিষ্ট এই বিশাল সংখ্যক মানুষজনের সামান্য অংশও অপূরণীয় বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়, কে নেবে তার দায় ?

🔺 যেখানে আজও মহামান্য আদালত নিজেরাই একের অপরের মুখোমুখি হতে ‘ভয়’ পাচ্ছে, নিরাপত্তার কারনে অনলাইনে আদালত চলছে , সেখানে আদালতের তরফেই লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের কেন উদ্বেগের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হলো ?

🔺 বোঝা যাচ্ছে না তো এটাও, দেশের VVIP-দের নিরাপদ রাখতে
লোকসভার বাদল অধিবেশনই যখন হাজারো বিধির ফাঁসে আটকে করতে হচ্ছে , তখন এই লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের চরম উদ্বেগের কথা এই সাংসদরা কেন অনুভব করছেন না ?

🔺 দেশজুড়ে আজ হয়তো অনেকেই ভাবছেন, এই মুহুর্তে লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা গ্রহণের পরিবেশ- পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গিয়েছে৷ তাহলে তারা নিশ্চয়ই এটাও ভাবছেন লোকসভা, রাজ্যসভা, বিধানসভা, আদালতে স্বাভাবিক কাজকর্মের পরিস্থিতিও আছে৷ কই, সে কথা তো একজনও বলছেন না ! এ দুয়ের মধ্যে ফারাক করা কি দ্বিচারিতা নয় ?

🔺 লক্ষ লক্ষ JEE – NEET পরীক্ষার্থীর মধ্যে এমন অসংখ্য পরীক্ষার্থী আছেন, যাদের বাবা-মা- অভিভাবকরা বিজেপির হেভিওয়েট নেতা, মাঝারি নেতা, ছোট নেতা বা কর্মী৷ জানতে বড্ড ইচ্ছা করছে এই বিজেপি-পন্থী অভিভাবকরা কী বীরের মতো পাবলিক ট্রান্সপোর্টে চড়ে, হোটেলে থেকে, মুখ বন্ধ করে এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ স্মরণ করে নিজেদের ছেলেমেয়েদের উদ্বেগহীন চিত্তে পরীক্ষা দিতে পাঠাতে পুরোপুরি তৈরি ?

* * * *

রাজহাঁস, ময়ূরদের নিজের হাতে খাওয়ানো একটা গঠনমূলক, মানবিক, রুচিশীল নেশা সন্দেহ নেই৷

কিন্তু ক্রমবর্ধমান এই নেশা যদি রাজহাঁস, ময়ূর ছাড়িয়ে অনাহারী শকুনদের কথা ভাবায়, আতঙ্ক তো হবেই৷

Previous articleতিন দফায় সিবিআই জেরার মুখে রিয়া
Next articleগোয়া অথবা ছত্তীসগঢ়ের হয়ে আগামী মরসুমে খেলতে পারেন দিন্দা