হাতে মাত্র একদিন, রিভিউ পিটিশনের শুনানি অনিশ্চিত, কণাদ দাশগুপ্তর কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

NEET – JEE পরীক্ষা পিছোনোর দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে যৌথভাবে রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছেন ৬ অ-বিজেপি রাজ্য, পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, ছত্তিশগড় ও ঝাড়খণ্ড।

কিন্তু এই রিভিউ পিটিশনের ভবিষ্যৎ কী ?

NEET এবং JEE পরীক্ষা সংক্রান্ত এই আর্জি আদালতে আরও আগে করা উচিত ছিলো৷ একবারে শেষ মুহুর্তের এই
রিভিউ পিটিশনের শুনানি আদৌ হবে ? কারন হাতে আছে শুধুমাত্র একটি দিন, সোমবার ৷ ঠিক পরের দিন, মঙ্গলবার থেকেই JEE শুরু হবে৷ এই পরিস্থিতিতে ১ সেপ্টেম্বরের আগে এ মামলা নিয়ে কোর্টে কিছু হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে৷ মামলার মূল আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি এবং তাঁর সঙ্গে থাকা আরও কয়েক জন বিশিষ্ট আইনজীবীও এমনই ভাবছেন৷ আবেদনের দ্রুত শুনানির আর্জি জানানো হলেও আইনি মহলের বক্তব্য, এই পিটিশন আরও আগে করা উচিত ছিলো৷ এখন যা পরিস্থিতি, তাতে ১ সেপ্টেম্বরের আগে শুনানি অথবা রিলিফ পাওয়া মুশকিল৷ ওদিকে ১ তারিখেই JEE শুরু হচ্ছে৷

পরীক্ষার্থীদের জন্য শুধুই ভালো কিছু আশা করা ছাড়া বাস্তবে এখন আর কিছুই ৬ রাজ্যের হাতে নেই৷ কারন, কেন্দ্রের অনুমতি ছাড়া কোনও রাজ্যই NEET বা JEE-র মতো পরীক্ষা বন্ধ করতে পারবেনা৷ আইনত তা সম্ভবও নয়৷ এতেই বোঝা যাচ্ছে, সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ ছাড়া NEET এবং JEE পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই৷ এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি প্রশ্ন রয়েছে, যা এই রিভিউ পিটিশনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে৷
সাধারনভাবে শীর্ষ আদালতে বিভিন্ন রায় পুনর্বিবেচনার আর্জিতে আগের রায়ই বহাল রাখেন বিচারপতিরা৷ তাছাড়া রিভিউ মামলার শুনানি হয় মূল মামলার এজলাশেই৷ এই মামলার রায়েই গত ১৭ আগস্ট
সুপ্রিম কোর্ট রায় ঘোষণা করে বলেছে, “এ বছর নির্ধারিত তারিখেই হবে NEET ও JEE।” সংশ্লিষ্ট মামলা খারিজ করে সেদিন বিচারপতিরা বলেছিলেন,”ছাত্রছাত্রীদের কেরিয়ার কিছুতেই বিপদের মুখে ফেলা যাবে না।” সেই একই এজলাশে এই রিভিউ পিটিশনের ভবিষ্যৎ কতখানি পরীক্ষার্থীদের পক্ষে ইতিবাচক হতে পারে, ভাবাচ্ছে তা-ও৷

দ্বিতীয়ত, রিভিউ পিটিশনকারীরা দাবি করেছেন, এই মামলা করা হয়েছে শুধুই পরীক্ষার্থীদের স্বার্থে৷ এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই৷ কিন্তু আর্জি জানানো ৬ রাজ্যেই এখন বিজেপি বিরোধী দল ক্ষমতায়৷ ফলে, একদম রাজনীতি নেই, একথা বোঝানো মুশকিল ৷ এই মামলা কেন্দ্রও রাজনৈতিক কারনেই সিরিয়াসলি লড়তে পারে৷
আদালত নিয়ে আদালতের বাইরে কিছু বলা হলে, তাতে অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে৷ ইদানিং সুপ্রিম কোর্টে বেশ কিছু মামলার যেভাবে নিষ্পত্তি করেছে, তা দেখার বা শোনার পরেও এ বিষয়ে কিছু না বলাই নিরাপদ৷ তবে এক্ষেত্রে একমাত্র “আশার আলো” প্রশান্ত ভূষণ এবং তাঁর আইনি লড়াই৷

জানা গিয়েছে, NEET এবং JEE পরীক্ষা সংক্রান্ত এই রিভিউ পিটিশনে তুলে ধরা হয়েছে একাধিক যুক্তি৷ তুলে ধরা হয়েছে, ঘোষিত দিনেই পরীক্ষা নেওয়া হলে পরীক্ষার্থীদের ঠিক কী কী সমস্যা হতে পারে৷ রিভিউ পিটিশনে সেই বিষয়টিকে ৪ ভাগে ভাগ করা হয়েছে৷

১) পরীক্ষার্থীদের সুরক্ষা,

২) পরীক্ষাকেন্দ্রে আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা,

৩) সামগ্রিক পরিকাঠামো,

৪) চলতি শিক্ষাবর্ষে যথেষ্ট সময় থাকা সত্ত্বেও কেন পরীক্ষা স্থগিত করা যাবে না৷
বলা হয়েছে, বর্তমান শিক্ষাবর্ষে এখনও যতখানি সময় আছে, তাতে এ বছরের নভেম্বরে পরীক্ষা গ্রহণ করে অনায়াসে জানুয়ারিতে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষ চালু করা সম্ভব৷ সব থেকে গুরুত্বপূর্ণভাবেই তুলে ধরা হয়েছে আরও একটি বিষয়৷ বলা হয়েছে,

এইভাবে পরীক্ষা নেওয়ার অর্থ, কেন্দ্র নিজেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের জারি করা করোনা- প্রোটোকলের বিরোধিতা করছে৷ এ কাজ কতখানি সঙ্গত ?

কেন কেন্দ্র করোনা-নির্দেশিকা মানছে না, তার ব্যাখ্যায় পিটিশনে বলা হয়েছে, JEE-র ক্ষেত্রে প্রতি সেন্টারে পরীক্ষা দেবেন ১৫০০ জন পরীক্ষার্থী৷ NEET- এ এই সংখ্যা ৪৫০ জন৷ দু’ক্ষেত্রেই লঙ্ঘিত হচ্ছে কেন্দ্রের করোনা- প্রোটোকল৷ এক কেন্দ্রে এত মানুষের সমাগম যদি করোনা-কালে আইনসিদ্ধ হয়, তাহলে কেন এখনই স্বাভাবিক পথেই চালু করা হচ্ছে না লোকসভা, বিধানসভা, অফিস- আদালত, ধর্মস্থান৷

তবে ওই রিভিউ-পিটিশন যতই যুক্তিসঙ্গত হোক, তা কার্যকর হবে দ্রুত শুনানি হলেই৷ ১ সেপ্টেম্বরের আগে যদি শুনানিই না হয়, তাহলে কাজের কাজ কিছুই হবেনা৷ মাঝখান থেকে পরীক্ষার্থীদের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত অনিশ্চয়তায় থাকতে হবে৷ এভাবে সর্বভারতীয়স্তরের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দেওয়া সত্যিই মুশকিল৷
তাই, শীর্ষ আদালতে রিভিউ পিটিশন দাখিলের সিদ্ধান্ত আরও আগেই নেওয়া উচিত ছিলো৷ আরও আগেই এই ইস্যুতে বিজেপি-বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের ভার্চুয়াল বৈঠকে বসাও উচিত ছিলো৷ কারন, এই সমস্যা হঠাৎ গজিয়ে ওঠেনি৷ গত ১৭ আগস্ট শীর্ষ আদালত জানিয়েছে নির্ধারিত দিনেই পরীক্ষা হবে৷ এই রিভিউ পিটিশনের যদি শুনানিই ঠিক সময়ে না হয়, তাহলে পরীক্ষার্থীদের কোনও উপকারই হবেনা৷
অথচ, বোঝাই যাচ্ছে, NEET এবং JEE পরীক্ষা এই মুহুর্তে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির অন্যতম এক কেন্দ্রবিরোধী হাতিয়ার হয়ে উঠেছে৷ এই অস্ত্র ভোট-রাজনীতির প্রচারেও ব্যবহৃত হতে পারে৷ এটা অভিপ্রেত কি’না, সেটাও অবশ্যই ভাবার৷

Previous articleআরব আমিরশাহী থেকে দেশে ফিরছেন রায়না! থাকছেন না আইপিএল-১৩তে
Next articleআগামী ৫০ বছর বিরোধী আসনেই বসতে হবে কংগ্রেসকে, বোমা ফাটালেন আজাদ