প্রণব মুখোপাধ্যায়, একটি যুগের নাম

বীরভূমের কীর্ণাহারের ছোট্ট গ্রাম থেকে উঠে এসে তিনি হয়েছিলেন দেশের রাষ্ট্রপতি। তিনি ছিলেন এক চলমান ইতিহাস।

প্রাক্তন সাংসদ, লোকসভা এবং রাজ্যসভা, দুই কক্ষেরই সদস্য, দফায় দফায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ কমিটির প্রধান, দেশ ও দলের ক্রাইসিস ম্যানেজার এবং শেষে রাষ্ট্রপতি। বাঙালির গর্বের নাম প্রণব মুখোপাধ্যায়।

রাজনীতিতেও তাঁর চূড়ান্ত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা। বাংলা কংগ্রেস, যুক্তফ্রন্ট আমল থেকে সক্রিয়। কংগ্রেসে দ্রুত উত্থান। ইন্দিরা গান্ধীর বিশ্বস্ত। সেই ১৯৮৩/৮৪ সালেই দেশের মন্ত্রিসভার দুনম্বর ব্যক্তি। ইন্দিরার মৃত্যুর পর রাজীব গান্ধীর সঙ্গে দূরত্ব এবং কংগ্রেস ত্যাগ। আলাদা দল গঠন করেও ব্যর্থ হন তিনি। শেষে কংগ্রেসে প্রত্যাবর্তন। তারপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি।

নরসিংহ রাও থেকে সীতারাম কেশরী; সোনিয়া গান্ধী থেকে মনমোহন সিং- সকলেরই নির্ভরযোগ্য নাম প্রণব মুখোপাধ্যায়। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি থেকে দেশের বিদেশমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী- সব শীর্ষস্থানে তিনি। যখনই কোনো সমস্যা, তখন মুশকিল আসান প্রণববাবুই।
২০১২ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি হন।

অসাধারণ মেধা, স্মৃতিশক্তি, বাস্তববোধ ছিল তাঁর। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা। বিভিন্ন দলের সঙ্গে সুসসম্পর্ক। সেই কারণেই অনায়াসে বামফ্রন্টের মধ্যে ক্রশভোট করিয়ে বাংলা থেকে রাজ্যসভায় দারুণভাবে জিতে যান তিনি। আবার ২০০৮-এ বামেরা ইউ পি এ থেকে সরকার তুলে নিলেও অনায়াসে পূর্ণমেয়াদ সরকার চালানোর আসল কারিগর থাকেন প্রণববাবু।

আরও পড়ুন : দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো, আপনি এই যুদ্ধও হেলায় জয় করবেন

দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে প্রণববাবুর রাজনৈতিক জীবনের বর্ণনা করতে গেলে দেশ ও রাজ্যের ক্ষমতার অলিন্দের ইতিহাস লেখা হয়ে যায়।

পণ্ডিত এই মানুষটি চরম ব্যস্ততার দিনেও সকালে দীর্ঘক্ষণ পুজোয় বসা বাদ রাখতেন না। আবার দেশের রাষ্ট্রপতি হলেও গ্রামের বাড়ির দুর্গাপুজোয় চণ্ডীপাঠ করতেন নিজের মুখে। শিক্ষক পেশা দিয়ে জীবন শুরু। চিরদিন সেই ইমেজ ধরে রেখেছেন।

প্রণববাবুর স্ত্রী শুভ্রাদেবী কিছুকাল আগেই প্রয়াত। তাঁদের দুই ছেলে এবং এক মেয়ে।

এক অসামান্য বাঙালি ছিলেন প্রণববাবু। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে এই উচ্চতা ধরে রাখার ম্যাজিক তিনি দেখিয়েছেন। দিল্লির সবরকম ক্ষমতার কেন্দ্রে তিনি ছিলেন। বাকি থেকে গিয়েছে শুধু একটি পদ। প্রধানমন্ত্রী। তাঁর যোগ্যতা ছিল। কিন্তু কোনো রহস্যময় কারণে তিন তিনবার এই সুযোগ এসেও তাঁকে বঞ্চিত করা হয়েছে। বাঙালির আজও প্রধানমন্ত্রী হওয়া হয়নি।

তবুও প্রণব মুখোপাধ্যায় চিরকাল প্রণববাবুর মর্যাদাতেই থেকে যাবেন। জাতীয় ক্ষেত্রে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি রাজনীতিবিদের সম্মান নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর পরেই যদি কারুর জন্য বিবেচিত হয়, তাহলে নিশ্চিতভাবেই সেই নামটি হবে- প্রণব কুমার মুখোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন : প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়

 

Previous articleদৃঢ় বিশ্বাস ছিলো, আপনি এই যুদ্ধও হেলায় জয় করবেন
Next articleফের মিথ্যাচার! লাদাখে সীমান্ত লঙ্ঘনের দাবি ওড়ালো চিন