বাস্তবের বিদ্যার দেবী! দুর্গম পথ পেরিয়ে শিক্ষাদানের নজির ঊষার

লেখাপড়ায় কেউ ভালো হলে হামেশাই বলে থাকি সাক্ষাৎ সরস্বতী। তুলনা করতে বিদ্যার দেবী সরস্বতীকে টেনে আনি। নারী শিক্ষা প্রসারের কাজ শুরু হয়েছিল বহু যুগ আগেই। এমনকী নারী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন এই বাংলার ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তাঁর হাত ধরেই বহু নারী লেখাপড়ায় আগ্রহ দেখিয়েছে। সমাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। এমনকী লেখাপড়া করার জন্য মাইলের পর মাইল হেঁটে যাওয়ার ঘটনা আকছার শোনা যায়। কিন্তু শিক্ষাদানের জন্য! তেমন নজিরও আছে এই দেশে।

প্রত্যন্ত এলাকা বা গ্রামগঞ্জে যেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত নয় সেখানে কয়েক মাইল পথ পেরিয়ে স্কুলে যায় পড়ুয়ারা। এমনকী উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় হেঁটে পৌঁছানোর ঘটনা সামনে এসেছে। এবার দুর্গম পথ পেরিয়ে স্কুলে গিয়ে পড়াচ্ছেন ঊষা কুমারী। কেরালার রাজধানী তিরুঅনন্তপুরমের অমবুরি গ্রামে বাসিন্দা ওই শিক্ষিকা। গত ২০ বছর ধরে ৮ কিলোমিটার পাড়ি দেন স্কুলে পৌঁছানোর জন্য।

তবে এই যাত্রাপথ কিন্তু মোটেও মসৃণ নয়। রাস্তা, নদী, জঙ্গল, পাহাড় পেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে হয় তাঁকে। কিন্তু দিনের পর দিন কীভাবে এই কাজ সম্ভব? শিক্ষাদানের প্রবল আগ্রহ এবং সব বাধা পেরোনোর জেদ। এই দুটোই ছিল একমাত্র হাতিয়ার। আর এই দুইয়ের হাত ধরে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন তিনি। তাই নিত্য সংগ্রাম করে যেতে কোনও কষ্ট হয় না বলেই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন শিক্ষিকা। গ্রামের সকলের কাছে তিনি হয়ে উঠেছেন বিদ্যার দেবী।

প্রতিদিন সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে স্কুলের উদ্দেশে। দুর্গম পথ, নদী, পাহাড়, জঙ্গলের প্রাণীর আক্রমণের ভয় থাকে। সেই ভয়কে জয় করে শেষ পর্যন্ত ঠিক পৌঁছে যান গন্তব্যে। প্রথমে স্কুটি নিয়ে পৌঁছন কাদাভু। সেখান থেকে নদী পেরোতে হয়। বেশ খানিকটা দূরে জঙ্গল লাগোয়া অগস্ত্যবনম। জঙ্গলের ভিতর পাহাড়ের গা বেয়ে শুরু হয় ট্রেকিং। সম্বল একটিমাত্র লাঠি। জঙ্গলের প্রাণীদের আক্রমণের ভয় থাকলেও ঠিক পৌঁছে যান স্কুলে।

আর প্রিয় শিক্ষিকার জন্য স্কুলে অপেক্ষা করে থাকে ১৪ জন খুদে। তারা প্রত্যেকেই ঊষা কুমারীর ছাত্র। ওরা সবাই কেরালার কান্নি উপজাতির। আর্থিক অসচ্ছলতার জন্য স্কুলে পড়ার সুযোগ নেই। তাই তাদের শিক্ষিত করে তুলতে মরিয়া ঊষা কুমারী। কোনওভাবেই ওদের শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করতে চান না তিনি। ঊষা কুমারী জানিয়েছেন, একটা সময় গাছতলায় বসে পড়াতেন। এরপর নিজে উদ্যোগ নিয়ে স্কুলবাড়ি তৈরি করেন। ওই শিশুদের ভাষা, অঙ্ক আর বিজ্ঞান পড়ান ঊষা। তবে শুধু পড়ানো হয়। ক্লাস শেষে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়ান ওদের। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রতিদিন দুধ,ডিম দেন শিক্ষিকা।

আরও পড়ুন- থাপ্পড় খেল পাকিস্তান, দুই ভারতীয়কে জঙ্গি ঘোষণার পাক প্রস্তাব খারিজ হল রাষ্ট্রসংঘে

Previous articleথাপ্পড় খেল পাকিস্তান, দুই ভারতীয়কে জঙ্গি ঘোষণার পাক প্রস্তাব খারিজ হল রাষ্ট্রসংঘে
Next articleফিরে এলো ঐশীর স্মৃতি, JNU-তে ফের ABVP-এর বিরুদ্ধে ছাত্র নিগ্রহের অভিযোগ