গ্যালিফ স্ট্রিটে ফের সরগরম পোষ্যের হাট

 

 

চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়

শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড় থেকে বিটি রোডের দিকে একটু এগিয়ে সার্কুলার ক্যানেলের ঠিক পাশের গলিতে যখন পৌঁছালাম ঘড়ির কাঁটায় তখন ঠিক ছ’টা।দূরের গঙ্গা থেকে ভেসে আসা বাতাস আর পাখিদের কলকাকলি।জন্তুদের চিৎকারে সকাল সরগরম।কলকাতা তখনও ঘুমের আড়মোড়া ভাঙতে ব্যস্ত। আমি ততক্ষণে চলে এসেছি পশুপাখি আর গাছেদের দেশে।তাই তো ভোর ভোর আসা।কেউ বলে পাখির হাট কেউবা পশুর হাট।আবার কারও কারও মতে গাছের হাট।আবার মাছের হাটও বটে।অবশ্যই রঙিন মাছ।কিন্তু ইউনিয়ন অফিসের গায়ে লেখা বাগবাজার খুশির হাট।আর সবাই জানে এটি গ্যালিফ স্ট্রিট ।আর রবিবার তো স্ট্রিট থাকে না, হয়ে যায় পশু পাখি আর গাছের হাট।
লকডাউনের দৌলতে গত ৫ মাস ধরে বন্ধ ছিল হাট। সে সময় কেমন অপরিচিত লাগতো এই গ্যালিফ স্ট্রিটকে । প্রত্যেক রবিবারের সেই সরগরম পরিবেশ আজ ফিরে এল। হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন , লকডাউন এর ৫ মাস পর আজ থেকে প্রত্যেক রবিবার ফের বসবে এই পোষ্যের হাট । লকডাউনের সমস্ত নিয়মবিধি মানতে রীতিমতো নির্দেশ জারি করেছে বাজার কমিটি। প্রত্যেকটি দোকানদারকে বসানো হয়েছে নির্দিষ্ট দূরত্বে। এবং প্রত্যেকের মুখে মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এমনকি বাজার কমিটির পক্ষ থেকে ক্রেতাদের জন্য স্যানিটাইজার এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরই পাশাপাশি যতদিন এই পরিস্থিতির বদল না হচ্ছে, ততদিন পোষ্যের হাট বেলা বারোটার মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন বাজার কমিটির কর্মকর্তারা। এই হাট পরিদর্শনে আজ উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন সংসদ তথা সাংবাদিক কুণাল ঘোষ, মন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং বিশিষ্টরা।
গ্যালিফ স্ট্রিটে ঢুকে প্রথমেই চোখে পড়ল খরগোস আর কুকুর বিক্রি হচ্ছে দেদার। রকমারি  কুকুরের রকমারি দাম। ছোট্ট স্পিচের ছানা থেকে শুরু করে গোল্ডেন রিট্রিভার।ডালমেসিয়ান লাসার দল।দাম নানারকম। দরদাম তো সব বাজারেরই দস্তুর ।তবে কুকুর চিনতে হবে নিজেকে নতুবা কার বদলে কী চলে আসে ব্যাগে! যখন বদলের কথা ভাবছেন ততক্ষণে মায়ার বাঁধনে বেঁধে ফেলেছেন পোষ্যটিকে।বদল হবে কি করে! পুচকে পাগ থেকে গ্রে হাউন্ডের ছানা উঁকি দিচ্ছে খাঁচার ভিতর থেকে।খরগোস, গিনিপিগ সব মেলে এই খুশির গ্যালিফের বাজারে।
মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বললেন, ভালো লাগছে ফের হাট খোলায়। কারণ, এত লোকের রুটি-রুজির প্রশ্ন যেখানে জড়িয়ে আছে, সেখানে নিয়মবিধি মেনে যদি হাট চালানো যায় তাহলে কোনও অসুবিধাই হওয়ার কথা নয়।
প্রাক্তন সংসদ তথা সাংবাদিক কুণাল ঘোষ বলেন, করোনার এই আবহে মানুষের অবসাদ কাটাতে পোষ্যের হাট যে কতটা জরুরি তা যারা পোষ্য ভালোবাসেন তারাই বুঝবেন। এরই পাশাপাশি দীর্ঘ পাঁচ মাস কর্মসংস্থান থেকে যারা বিচ্যুত তারা কাজ ফিরে পেলেন এটা একটা বড় ব্যাপার। সবমিলিয়ে পোষ্যকে ভালোবেসে এই হাট সমস্ত নিয়মবিধি মেনে আবার শুরু হয়েছে এটা অত্যন্ত আনন্দদায়ক। এবার কুকুর, খরগোশ ছেড়ে একটু এগিয়ে যাওয়া ।এবার পাখি রঙবেরঙের।
টিয়া, বদ্রি ও নানা জাতের রকমারি পায়রার সারিবদ্ধ খাঁচা। দেশি বিদেশি আরও পাখি আছে। তবে তা লুকিয়ে চুরিয়ে। দেশি বহু পাখিই কেনাবেচা নিষিদ্ধ। তবু সেগুলির অনেকরই দেখা মেলে এই বাজারে।
নানা রঙের পাখি দেখতে দেখতে চলে আসুন মাছ বাজারে ।অবশ্য রঙিন মাছ হরেকরকম।সঙ্গে অ্যাকোরিয়ম। অ্যাকোরিয়মের উপযোগী নানারকম গাছ পাথর সবই মেলে এখানে।
মাছের দেশে পৌঁছে দেখা যাবে প্যাকেটে ও কাঁচের বয়ামের মধ্যে ঘুরছে এরা।কত না রঙ আর কত বৈচিত্র্য!
ছোট্ট মলি থেকে জায়েন্ট আরোয়না। গোল্ডফিস, ডিসকাস প্যারোট মনের আনন্দে পাক খাচ্ছে মিষ্টি জলেই। মেরিন ফিসও আছে তবে তা সংখ্যায় কম। আর তারপর গাছ আর ফুল।কত যে নাম আর ততোধিক বাহার।প্লাস্টিকের রঙবেরঙের টব থেকে মাটির সুদৃশ্য টব এখানেই পাওয়া যাবে।সঙ্গে গাছ পরিচর্যার ছুরি কাঁচি। জল দেওয়ার ঝারি।আর গাছে দেওয়ার সব রকম সার তো আছেই।মাটি নেই তো কি হবে, ঘরে গাছ বসাবেন অবশ্যই । তাই ছোবরা আছে ভালো নাম কোকোপিট।রজনীগন্ধা, লিলি গাছ যেমন পাওয়া যাবে, ঠিক তেমনি অর্কিড ।ডালিয়া, জবা, গোলাপ, নয়নতারা কী চাই! গুল্ম তাও আছে খুশির হাটে। এককথায় সব ধরনের শখ এক জায়গায় মিটতে পারে এই খুশির হাটে।
বনেদিয়ানা থেকে হালফিলের করপোরেট কালচার ।সব এখানে মিলেমিশে একাকার।
বাজারের বয়স নিয়ে ইতিহাসের পাতা উল্টে ও জবাব নেই।তবে শ্যামবাজারে বছর পঞ্চাশ চলার পরে গালিফ স্ট্রিট ।তাও বছর কুড়ি হয়ে গেল।
একটু একটু করে কলকাতা জেগেছে।পশুপাখিদের স্বরের সঙ্গে মানুষের স্বর।সে এক অনুভূতি।উওর কলকাতার শ্যামবাজারের ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে গ্যালিফ স্ট্রিট ।পশু পাখি গাছ আর মাছ নিয়ে প্রতি রবিবার জমজমাট ।

 

 

 

 

 

 

 

লকডাউনের দৌলতে গত ৫ মাস ধরে বন্ধ ছিল হাট। সে সময় কেমন অপরিচিত লাগতো এই গ্যালিফ স্ট্রিটকে । প্রত্যেক রবিবারের সেই সরগরম পরিবেশ আজ ফিরে এল। হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন , লকডাউন এর ৫ মাস পর আজ থেকে প্রত্যেক রবিবার ফের বসবে এই পোষ্যের হাট । লকডাউনের সমস্ত নিয়মবিধি মানতে রীতিমতো নির্দেশ জারি করেছে বাজার কমিটি। প্রত্যেকটি দোকানদারকে বসানো হয়েছে নির্দিষ্ট দূরত্বে। এবং প্রত্যেকের মুখে মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এমনকি বাজার কমিটির পক্ষ থেকে ক্রেতাদের জন্য স্যানিটাইজার এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরই পাশাপাশি যতদিন এই পরিস্থিতির বদল না হচ্ছে, ততদিন পোষ্যের হাট বেলা বারোটার মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন বাজার কমিটির কর্মকর্তারা। এই হাট পরিদর্শনে আজ উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন সংসদ তথা সাংবাদিক কুণাল ঘোষ, মন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং বিশিষ্টরা।
গ্যালিফ স্ট্রিটে ঢুকে প্রথমেই চোখে পড়ল খরগোস আর কুকুর বিক্রি হচ্ছে দেদার। রকমারি  কুকুরের রকমারি দাম। ছোট্ট স্পিচের ছানা থেকে শুরু করে গোল্ডেন রিট্রিভার।ডালমেসিয়ান লাসার দল।দাম নানারকম। দরদাম তো সব বাজারেরই দস্তুর ।তবে কুকুর চিনতে হবে নিজেকে নতুবা কার বদলে কী চলে আসে ব্যাগে! যখন বদলের কথা ভাবছেন ততক্ষণে মায়ার বাঁধনে বেঁধে ফেলেছেন পোষ্যটিকে।বদল হবে কি করে! পুচকে পাগ থেকে গ্রে হাউন্ডের ছানা উঁকি দিচ্ছে খাঁচার ভিতর থেকে।খরগোস, গিনিপিগ সব মেলে এই খুশির গ্যালিফের বাজারে।
মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বললেন, ভালো লাগছে ফের হাট খোলায়। কারণ, এত লোকের রুটি-রুজির প্রশ্ন যেখানে জড়িয়ে আছে, সেখানে নিয়মবিধি মেনে যদি হাট চালানো যায় তাহলে কোনও অসুবিধাই হওয়ার কথা নয়।
প্রাক্তন সংসদ তথা সাংবাদিক কুণাল ঘোষ বলেন, করোনার এই আবহে মানুষের অবসাদ কাটাতে পোষ্যের হাট যে কতটা জরুরি তা যারা পোষ্য ভালোবাসেন তারাই বুঝবেন। এরই পাশাপাশি দীর্ঘ পাঁচ মাস কর্মসংস্থান থেকে যারা বিচ্যুত তারা কাজ ফিরে পেলেন এটা একটা বড় ব্যাপার। সবমিলিয়ে পোষ্যকে ভালোবেসে এই হাট সমস্ত নিয়মবিধি মেনে আবার শুরু হয়েছে এটা অত্যন্ত আনন্দদায়ক। এবার কুকুর, খরগোশ ছেড়ে একটু এগিয়ে যাওয়া ।এবার পাখি রঙবেরঙের।
টিয়া, বদ্রি ও নানা জাতের রকমারি পায়রার সারিবদ্ধ খাঁচা। দেশি বিদেশি আরও পাখি আছে। তবে তা লুকিয়ে চুরিয়ে। দেশি বহু পাখিই কেনাবেচা নিষিদ্ধ। তবু সেগুলির অনেকরই দেখা মেলে এই বাজারে।
নানা রঙের পাখি দেখতে দেখতে চলে আসুন মাছ বাজারে ।অবশ্য রঙিন মাছ হরেকরকম।সঙ্গে অ্যাকোরিয়ম। অ্যাকোরিয়মের উপযোগী নানারকম গাছ পাথর সবই মেলে এখানে।
মাছের দেশে পৌঁছে দেখা যাবে প্যাকেটে ও কাঁচের বয়ামের মধ্যে ঘুরছে এরা।কত না রঙ আর কত বৈচিত্র্য!
ছোট্ট মলি থেকে জায়েন্ট আরোয়না। গোল্ডফিস, ডিসকাস প্যারোট মনের আনন্দে পাক খাচ্ছে মিষ্টি জলেই। মেরিন ফিসও আছে তবে তা সংখ্যায় কম। আর তারপর গাছ আর ফুল।কত যে নাম আর ততোধিক বাহার।প্লাস্টিকের রঙবেরঙের টব থেকে মাটির সুদৃশ্য টব এখানেই পাওয়া যাবে।সঙ্গে গাছ পরিচর্যার ছুরি কাঁচি। জল দেওয়ার ঝারি।আর গাছে দেওয়ার সব রকম সার তো আছেই।মাটি নেই তো কি হবে, ঘরে গাছ বসাবেন অবশ্যই । তাই ছোবরা আছে ভালো নাম কোকোপিট।রজনীগন্ধা, লিলি গাছ যেমন পাওয়া যাবে, ঠিক তেমনি অর্কিড ।ডালিয়া, জবা, গোলাপ, নয়নতারা কী চাই! গুল্ম তাও আছে খুশির হাটে। এককথায় সব ধরনের শখ এক জায়গায় মিটতে পারে এই খুশির হাটে।
বনেদিয়ানা থেকে হালফিলের করপোরেট কালচার ।সব এখানে মিলেমিশে একাকার।
বাজারের বয়স নিয়ে ইতিহাসের পাতা উল্টে ও জবাব নেই।তবে শ্যামবাজারে বছর পঞ্চাশ চলার পরে গালিফ স্ট্রিট ।তাও বছর কুড়ি হয়ে গেল।
একটু একটু করে কলকাতা জেগেছে।পশুপাখিদের স্বরের সঙ্গে মানুষের স্বর।সে এক অনুভূতি। উওর কলকাতার শ্যামবাজারের ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে গ্যালিফ স্ট্রিট ।পশু পাখি গাছ আর মাছ নিয়ে প্রতি রবিবার জমজমাট ।

ছবি- নিজস্ব চিত্র

Previous articleরিয়া গ্রেফতার হতে পারেন আজই
Next articleসিঁড়িতেই আদালত! বৃদ্ধার জন্য অভিনব শুনানি বিচারপতির