পূর্ব বর্ধমানে কবরস্থানের জন্য জমি দান মুখোপাধ্যায়দের

সম্প্রীতির বার্তা দিতে অনুষ্ঠান, আয়োজন, প্রচারের প্রয়োজন হয় না। মানসিকতা, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মান এসবই সেই রাস্তা করে দেয়। তার জ্বলন্ত উদাহরণ পূর্ব বর্ধমানের তালিত গ্রামের কালীকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়। গ্রামের মুসলিম সম্প্রদায়ের কবরস্থানের জন্য নিজের জমি দান করলেন এই বৃদ্ধ। অশীতিপর বৃদ্ধের দেওয়া ১ একর ৬ শতক জমিতেই এখন মৃত্যুর পরে সমাধিস্থ করা হয় স্থানীয় মুসলিম বাসিন্দাদের।

বর্ধমানের তালিতে হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের বাস। কিন্তু গ্রামের পূর্ব ও দক্ষিণ পাড়ার কোনও কবরস্থান ছিল না। করব দিতে যেতে হত অনেক দূরে। দুই পাড়ার মাঝে সাধুপুকুরের পাশেই ১ একরের বেশি জমি ছিল ডাঙাপাড়ার বাসিন্দা কালীকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের। সমস্যা সমাধানে তিনিই এগিয়ে আসেন। দান করেন ১ একর ৬ শতক জমি। বেশ কয়েক বছর আগেই এই জমি দান করলেও সম্প্রতি এই জায়গা নথিভুক্ত হয়েছে কবরখানা হিসাবে। কবরস্থানে ঢোকার মুখে দিন পাঁচেক আগে নমজ পড়ার জন্য জায়গা বাঁধানোও হয়েছে।

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কালীকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের কাছে কবরের জমি নিয়ে সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন স্থানীয় শেখ সরিফুদ্দিন, শেখ সাবেদ আলিরা। তখনই জমিদারের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তাঁর জায়গায় গ্রামের মানুষের শেষকৃত্য হচ্ছে এটা ভেবে সন্তুষ্ট বৃদ্ধ। তাঁর মতে, “এটাই আমাদের ঐতিহ্য। আমরা সকলেই একটা পরিবার”। এটা কর্তব্য বলেই মনে করেন কালীকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়।
শুধু কবরস্থান নয়, পূর্ব ও দক্ষিণ পাড়ার মাঝে একটি রাস্তা করার জন্যও জমি দিয়েছেন অশীতিপর বৃদ্ধ। নিজেদের দুটি পুকুরের মাঝে কিছুটা জায়গা দিয়ে তিনি রাস্তা তৈরির অনুমতি দিয়েছেন। ফলে তাঁর পুকুরের কিছুটা অংশও রাস্তার দিতে হয়েছে। এই রাস্তা হওয়ার ফলে দুই পাড়ার যাতায়াতের সুবিধা হয়েছে। কালীকৃষ্ণবাবুর নাতি সাহেব মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘দেশের কোথায় কী হচ্ছে জানি না, আমাদের গ্রামে হিন্দু মুসলিমে কোনও ভেদাভেদ নেই। আমরা কবর দেওয়া জন্য জায়গা দিয়েছি।  প্রতিবছর আমাদের উঠোনে মহরমের ঢাল যায়”।

জায়গা পেয়ে খুশি মুসলিম অধ্যুষিত পাড়ার মানুষজন। স্থানীয় মসজিদের সদস্য শেখ সরিফউদ্দিনের মতে, উনি মহৎ মানুষ।

আরও পড়ুন : ‘তুই কি আমার জন্য মরতে পারবি?’ বান্ধবীর প্রশ্ন, তিনদিন পর উদ্ধার পড়ুয়ার দেহ

Previous article‘তুই কি আমার জন্য মরতে পারবি?’ বান্ধবীর প্রশ্ন, তিনদিন পর উদ্ধার পড়ুয়ার দেহ
Next articleনিউ নর্মাল জীবনে রাজ-শুভশ্রী