Thursday, December 18, 2025

ক্রমশ সরছে বিজেপি’র ঘোমটা, কণাদ দাশগুপ্তর কলম

Date:

Share post:

কণাদ দাশগুপ্ত

আর রাখঢাক নেই৷ সরে গিয়েছে ঘোমটাও৷ এবং ঝুলি থেকে আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসছে বেড়াল৷

বিজেপি বুঝিয়ে দিচ্ছে, একটি রাজ্যের ভোট জিততে যে কোনও ‘অমানবিক, অনৈতিক’ পথে হাঁটতেও তাদের বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই৷ এবং স্পষ্ট হচ্ছে, বিহারে ‘জাস্টিস ফর সুশান্ত’ প্রচারকে হাওয়া দিতেই বাঙালি কন্যা রিয়া চক্রবর্তীকে গ্রেফতার করা জরুরি হয়ে পড়েছিলো৷

বিহার ভোট নিয়ে কত ধরনের কৌশল যে বিজেপি করছে তা বোঝা যাচ্ছে বিহার ভোটে দলের তরফে মহারাষ্ট্রের প্রাক্তণ মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসকে দায়িত্ব দেওয়ার ঘটনায়৷ যেহেতু সুশান্ত রাজপুতের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে মহারাষ্ট্র এবং বিহারের মধ্যে খেউড় চলছে, সে কারনেই এই মুহুর্তে কার্যত কর্মহীন মহারাষ্ট্রের প্রাক্তণ মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসকে বিজেপি বিহারে ভোট করতে পাঠিয়েছে৷ আর এই কাজে পাটনা নেমেই ফডণবীস বলেছেন, “এ কথা ভুললে চলবে না যে, সুশান্ত বিহারের ‘বেটা’। মানুষ ন্যায়বিচার চান। সুশান্ত যাতে সেই ন্যায়বিচার পান, দল তা নিশ্চিত করবে।’’

কেন্দ্রের মোদি সরকারের সার্বিক অকর্মণ্যতায় দেশের কোটি কোটি মানুষ নানা যুক্তিসঙ্গত কারণে কেন্দ্রের কাছে ন্যায়বিচার চাইছেন৷ এইসব অসহায় মানুষের আর্তি এক ঝটকায় উড়িয়ে আজ বিজেপি একমাত্র সুশান্ত রাজপুতকেই তথাকথিত ন্যায়বিচার দিতে কেন মরিয়া, তা বুঝতে বেশি পরিশ্রম করতে হয়না৷ ভোট বড় বালাই৷

এই ফডণবীসই প্রথম নন, দিনকয়েক আগে, রিয়াকে গ্রেফতার করার পরেই বিজেপি মুখপাত্র তথা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গৌরব ভাটিয়া বলেছিলেন, ‘‘মুম্বই পুলিশ ৬৫ দিন কোনও পদক্ষেপ করেনি। কেন্দ্রীয় সংস্থা তদন্ত শুরুর ১৯ দিনের মাথাতেই রিয়াকে গ্রেফতার করলো।’’ আরও বলেন, “উদ্ধব সরকারের মুম্বই পুলিশ বিহারের ভূমিপুত্র সুশান্ত সিং রাজপুতকে ‘ন্যায়’ দেয়নি। অথচ কেন্দ্রীয় এজেন্সি মাত্র ক’দিনেই তা দিতে পেরেছে৷” এসব কথাতেই স্বচ্ছ হয়েছে, রিয়া চক্রবর্তীর গ্রেফতারিতে খুশির অন্ত নেই বিজেপি’র৷ রাজপুত- কাণ্ডে বিজেপি স্পষ্ট করছে, বিহার- জয়ের জন্য রিয়া চক্রবর্তীকে শূলে চড়ানো হলেও আপত্তি নেই৷ কেন এভাবে এক ড্রাগ-অ্যাডিক্ট গাঁজাখোর-কে বিজেপি নিজেদের ‘মুখ’ বানাতে চাইছে, তা বোঝা মুশকিল৷ এতে দলের ইমেজই বা কতখানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা বোঝাও শক্ত৷

আরও পড়ুন-মোদি-ইমেজ অতীত, বিহারে বিজেপির মুখ সুশান্ত রাজপুত, কণাদ দাশগুপ্তর কলম

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিলো এক লাইনের, “সুশান্ত রাজপুত আত্মঘাতী হয়েছেন, না’কি অন্য কোনও কারনে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, CBI তার তদন্ত করবে”৷ কিন্তু ছক কষে তদন্ত আরও ‘শক্তপোক্ত’ করা হলো৷ ‘বিশেষ’ কোনও মহলের অঙুলিহেলন না থাকলে প্রথমে CBI, তারপরে ED, এবং সবশেষে NCB কখনই মাঠে নামতে পারেনা৷ CBI ও ED তদন্তে নেমে তেমন সুবিধা করতে না পারায়, পাঠানো হয় কেন্দ্রীয় সরকারের এজেন্সি নারকোটিক্স কন্ট্রোল বুরো বা NCB-কে৷ এখানে একটা তথ্য জেনে রাখা দরকার, ১৯৮৪ ব্যাচের গুজরাট ক্যাডারের IPS রাকেশ আস্থানা CBI-এর সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন৷ CBI-এর তৎকালীন প্রধান অলোক ভার্মার সঙ্গে ক্ষমতার যুদ্ধের পর আস্থানাকে সিভিল এভিয়েশন সিকিউরিটি-র DG পদে বদলি করা হয়। ওদিকে, গত ৪ জুলাই থেকে NCB প্রধানের পদ খালি ছিল। গত ৩১ জুলাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভায় নিয়োগ কমিটি আস্থানাকে ৬ মাসের জন্য ডিরেক্টর জেনারেল, নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো বা NCB-র অতিরিক্ত দায়িত্বের অনুমোদন দেয়৷ এই NCB-ই গ্রেফতার করে রিয়া চক্রবর্তীকে৷

এদিকে শুক্রবারই NCB-র এক সূত্র দাবি করেছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে রিয়া চক্রবর্তী NCB- গোয়েন্দাদের বলেছেন, সুশান্ত রাজপুতের লোনাভালার ফার্মহাউসে নিয়মিত মাদকের আসর বসত এবং বলিউডের অনেক তারকা সেখানে আসতেন। NCB-কে বলিউডের সেই সব তথাকথিত তারকাদের নামও জানিয়েছেন রিয়া। মুম্বই থেকে দিল্লি ফিরে এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্তাদের সঙ্গে শুক্রবারই আলোচনায় বসেছেন সুশান্ত-মামলার দায়িত্বে থাকা NCB দলটির প্রধান।

বিহারের যে ‘সুপুত্র’-কে ন্যায়বিচার দিতে ঝাঁপিয়েছে বিজেপি, সেই সুপুত্রের ফার্মহাউসে নিয়মিত মাদকের আসর বসার তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর বিজেপি কিছু বলবে, এটা আশা করা যেতেই পারে৷

মোদ্দা কথা, বিহার, মহারাষ্ট্র বা বাংলা, যে রাজ্যেরই ‘সুপুত্র’ হোন সুশান্ত সিং রাজপুত, ক্রমশ জানা যাচ্ছে ওই সুশান্ত রাজপুত একজন ‘নিষ্ঠাবান’ ড্রাগ-অ্যাডিক্ট৷
আপাতত প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, অঢেল টাকা ছিলো সুশান্তের। নায়ক হওয়ার সুবাদে বহু মহিলা আকৃষ্ট হয়েছিলেন তাঁর প্রতি৷ তাদের সঙ্গে যেমন খুশি তেমনভাবেই সে রাতও কাটাতো। বিদেশে যেত তাদের কাউকে সঙ্গে নিয়ে। এমন বহুগামিতা ছাড়াও গাঁজা, চরস, মারিজুয়ানা, এলএসডি, আরও কত কত নামের ড্রাগও খেত নিয়মিত। বন্ধু- বান্ধবীদেরও খাওয়াত। নইলে রেভ পার্টির মজা পাওয়া যায় না কী! তারপর সুইসাইড। আর তারপর কাঁটাছেড়া শুরু। সুশান্তকে ‘শহিদ’ বানানোর প্রক্রিয়াও শুরু হলো৷

বিহার-ভোটের মুখে আর এই লোকটিকেই ‘ন্যায়বিচার’ দিতে ‘জয় শ্রীরাম’ বলে ঝাঁপিয়ে পড়েছে গেরুয়া বাহিনী৷ একবারও ভেবেও দেখছেনা, বিহারে বিজেপি যতবার সুশান্ত সিং রাজপুতের নাম উচ্চারণ করবে, তার একশো গুণ বেশি শিক্ষিত, সংস্কৃতিমনস্ক বিহারবাসী সরে যাচ্ছে গেরুয়া পতাকার তলা থেকে৷

আরও পড়ুন- বাংলার ভোট, বিজেপি এবং রিয়া চক্রবর্তী, কণাদ দাশগুপ্তর কলম

spot_img

Related articles

নিউটাউনের ঝুপড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর

উত্তর ২৪ পরগনার নিউটাউনে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বুধবার সন্ধ্যার পর...

বিজনেস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি কনক্লেভ: বিনিয়োগের বার্তা নিয়ে শিল্পপতিদের সামনে মুখ্যমন্ত্রী

রাজ্যে শিল্প ও বিনিয়োগের সম্ভাবনাকে আরও বিস্তৃত করতে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ‘বিজনেস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি কনক্লেভ’। ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে...

২২ জানুয়ারি থেকে শুরু ৪৯তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা, ভার্চুয়ালেও মিলবে মেলার স্বাদ

আর দেড় মাসের অপেক্ষা। আগামী ২২ জানুয়ারি থেকে শুরু হতে চলেছে ৪৯তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা। বইপ্রেমীদের জন্য এ...

যুবভারতীর বিশৃঙ্খলা-কাণ্ডে শোকজের জবাব জমা তিন শীর্ষ কর্তার

যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মেসির অনুষ্ঠান ঘিরে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার ঘটনায় শোকজের জবাব জমা দিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, ক্রীড়া...