তৃণমূলের হাত ধরলেন ডাক্তার রেজাউল করিম, বীরভূমে শক্তি বাড়লো শাসকের

একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ফের বড়সড় ভাঙন বিরোধী শিবিরগুলিতে। এবার তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাক্তার রেজাউল করিম ও কৌশিক চাকি। তাঁদের সঙ্গেই ঘাসফুল শিবিরে যোগ দিলেন প্রাক্তন বাম ও বিজেপি নেতা আইনুল হক এবং সুন্দর পাসোয়ান। এদিনের চার রাজনৈতিক ব্যক্তি তারকাখচিত বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এদের সকলের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

তবে এ দিনের সবচেয়ে নজরকাড়া যোগদানটি ছিল ডাক্তার রেজাউল করিমের। ডাক্তার করিমের যোগদান কেন তাৎপর্যপূর্ণ, সেটা জানতে ফিরে যেতে হবে একবছর আগে।

২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেকে নির্দল বলে দাবি করেছিলেন রেজাউল করিম। আদপে তিনি ছিলেন বীরভূমের বামেদের সমর্থনে প্রার্থী। যা নিয়ে “জোট” রাজনীতিতে প্রবল বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। গতবছর লোকসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোটের ধোঁয়াশার মধ্যেই বীরভূম আসনে বামফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী রেজাউল করিম সোশ্যাল মিডিয়ায় নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছা প্রকাশ করে জেলাজুড়ে আলোড়ন ফেলেছিলেন। রাজ্য ও কেন্দ্রের শাসক দল ছাড়া সবার কাছে তাঁর সমর্থন চাওয়া নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সে সময় বিতর্কে জল ঢালতে নেমেছিল বাম নেতৃত্ব।

ওয়াকিবহাল মহলের মতে, শুধুমাত্র বাম সমর্থকদের ভোটে তিনি জিততে পারবেন না বলে কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার কথাও তুলে ধরেছিলেন। এমনকী, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রকে পিতৃপ্রতিম ও অভিভাবক হিসেবেও দাবি করেছিলেন। তিনি যে কোনও দলের সঙ্গেই যুক্ত নন সে কথাও স্পষ্টভাবে জানিয়েছিলেন এই বামফ্রন্ট প্রার্থী। যদিও এসব বলেও কংগ্রেসের মন ভেজেনি। তাদের জন্য অপেক্ষা না করে বীরভূম আসনে একতরফা প্রার্থী ঘোষণা করাকে জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব ভালোভাবে নেয়নি। তাদের স্পষ্ট বার্তা, কংগ্রেসে সঙ্গে এই প্রার্থীর কোনও যোগ নেই। পরে জোট ভেস্তে যাওয়ায় কংগ্রেস সেখানে প্রার্থী করে ইমাম হোসেনকে। এবং রেজাউল করিম সিপিএমের প্রতীকে দাঁড়িয়ে ৯৬ হাজার ৭৬৩ ভোট পেয়েছিলেন। যা সেসময় তৃণমূলকে অনেকটাই রাজনৈতিকভাবে সুবিধা পাইয়ে দিয়েছিল। এবং রেজাউল করিম

লোকসভার আগে জোট জটলার মধ্যেই সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোম দাবি করেছিলেন, তিনি বামফ্রন্টের প্রার্থী। মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সময়েই তিনি বাম আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। স্বাস্থ্য আন্দোলনে তাঁর বড় ভূমিকা রয়েছে। তখন কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সঞ্জয় অধিকারী বলেন, কোন প্রার্থী কী বলছে জানি না। আমরা এই আসনটি নিজেদের জন্য দাবি করেছিলাম। কিন্তু, কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা না করেই যেভাবে বামেরা এই আসনে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে তাতে কর্মীরা ক্ষুব্ধ। তাই তারাও ইমাম হোসেনকে প্রার্থী করেন।

সেই ডাক্তার রেজাউল করিম এখন তৃণমূলের সক্রিয় সদস্য। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ডাক্তার করিমের স্বচ্ছভাবমূর্তি দলের কাজে আসবে বলেই মনে করছে তৃণমূল নেতৃত্ব। ডাক্তার করিম দীর্ঘদিন থেকে একটি অরাজনৈতিক চিকিৎসক সংগঠনের সভাপতি। করোনা মোকাবিলায় তিনি রাজ্যের চিকিৎসার উন্নয়নে অনেক কাজ করেছেন। তাঁর সঙ্গে এদিন তৃণমূল ভবনে এসে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাত থেকে ঘাসফুলের ঝান্ডা তুলে নেন ওই সংগঠনেরই সম্পাদক ডাক্তার কৌশিক চাকি।

এই দুই চিকিৎসক ছাড়াও আরও দুই হাইপ্রোফাইল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এদিন বাম ও বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করলেন। তাঁরা দুজনেই পূর্ব বর্ধমান জেলার নেতা। আইনুল হক দীর্ঘদিনের বামপন্থী নেতা। ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে আসা। বাম জমানায় দীর্ঘদিন তিনি বর্ধমান মিউনিসিপালিটি গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রতিনিধি ছিলেন। ২০১৬ সালে জোটের প্রার্থী হয়ে সিপিএমের প্রতীকে ভোটেও দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তৃণমূল প্রার্থী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের কাছে হেরে যান। এরপর ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। দক্ষ সংগঠক বলে পরিচিত আইনুল হক বিজেপির ওই জেলায় তিনটি আসনে কো-অর্ডিনেটর ছিলেন। এবং সেখানে গেরুয়া শিবিরের শক্তি বাড়িয়ে ছিলেন। যদিও বিজেপি নেতৃত্ব তাকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিল। তাই শেষ পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়তে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরলেন। তার সঙ্গে যেদিন বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন পূর্ব বর্ধমানের আরেক নেতা সুন্দর পাসোয়ান। প্রচুর সক্রিয় বিজেপি কর্মী এদিন তার সঙ্গে তৃণমূলে যোগ দেন। সুন্দর পাসোয়ান তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, পূর্ব বর্ধমানের ৯টি বিধানসভা আসনের একটিতেও বিজেপি জিততে পারবে না।

আরও পড়ুন-বিজেপির যুবদের নবান্ন অভিযান

 

Previous articleবিজেপির যুবদের নবান্ন অভিযান
Next articleমহামারিতে আর্থিক সঙ্কটে প্লাস্টিকের ফুল-মালা তৈরিতে যুক্ত হুগলির ব্যবসায়ী ও কারিগররা