স্ত্রীর মন পেতে দু’বিঘা জমি বেচে হাতি কিনলেন কৃষক!

খায়রুল আলম (ঢাকা) : প্রেয়সীর মন পেতে কত কিছুই না করে থাকেন ! যুগে যুগে চলে আসছে প্রেম রক্ষায় পুরুষের নানান কীর্তি। সম্রাট শাহাজান তার প্রেমের স্মৃতি রাখতে গড়েছেন তাজমহল। যা ইতিহাসের পাতায় আজও প্রেমের মহিমার উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে রয়েছে।

এমনই এক কৃষক দুলাল চন্দ্র রায়। স্ত্রীর স্বপ্ন পূরণে তিনি হাতি কিনে বাড়িতে নিয়ে এসেছেন। দুলাল চন্দ্র রায় লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রথিধর দেউতি গ্রামের মৃত বীরেন্দ্র নাথের ছেলে। হাতি কেনার এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। আশে পাশের এলাকা থেকে অনেকেই আসছেন এই হাতি দেখতে।

জানা গিয়েছে, প্রাণী সংরক্ষণ ও যত্নবান হতে দৈব নির্দেশ পান দুলাল চন্দ্রের স্ত্রী তুলসী রানী দাসী। ওই দৈব নির্দেশ পালনে কয়েক বছর আগে স্বামীর কাছে প্রথমে একটি ঘোড়া, রাজহাঁস ও ছাগল কিনে তাদের পরিচর্যা করেন তুলসী রানী দাসী। এক বছর আগে আবারও দৈব নির্দেশ পান হাতি কিনে যত্ন নেওয়ার। এ নির্দেশনা পেয়ে পুনরায় স্বামী দুলালের কাছে হাতি কিনতে বায়না ধরেন তুলসী রানী।

স্ত্রীর সেই স্বপ্ন পূরণ করতে ১১ বিঘা জমির দুই বিঘা বিক্রি করে হাতি ক্রয়ের পরিকল্পনা নেন দুলাল চন্দ্র। পরিকল্পনা করে থেমে থাকেননি বরং খোঁজ-খবর নিয়ে সিলেটের মৌলভীবাজার গিয়ে সাড়ে ১৬ লাখ টাকায় হাতি কেনেন তিনি। ২০ হাজার টাকা ট্রাক ভাড়া দিয়ে হাতি নিয়ে গত সপ্তাহে বাড়ি ফেরেন কৃষক দুলাল। হাতিকে দেখভাল করতে ইব্রাহিম মিয়া নামে এক মাহুতকে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা বেতনে মৌলভীবাজার থেকে নিয়ে আসেন তিনি।

গ্রামের প্রভাবশালী কৃষক দুলাল চন্দ্র হাতি কিনেছেন শুনে শুধু সেখানকার গ্রামবাসী নয়, দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন হাতিটি দেখতে ভিড় করছেন দুলাল তুলসী দম্পতির বাড়িতে।

ওই গ্রামের অতুল চন্দ্র জানান , অনেক দিন ধরে শুনছি দুলাল চন্দ্র হাতি কিনবেন। অবশেষে জমি বিক্রি করে তিনি স্ত্রীর কথামত হাতি কিনে এনেছেন। সেই হাতি দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে শত শত মানুষ বাড়িতে ভিড় করছেন। তারা প্রভাবশালী মানুষ। হাতি দিয়ে চাঁদাবাজি বা ব্যবসা করার জন্য কেনননি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। পাশ্ববর্তী কুড়িগ্রাম রাজারহাট এলাকার শতবর্ষী বাসন্তী রানী জানান, জীবনে অনেক বার হাতি দেখেছি। তবে স্ত্রীর স্বপ্ন পূরণে এই যুগে কেউ হাতি কিনেছেন সেটা শুনে দেখতে এসেছি।

হাতির মাহুত ইব্রাহিম জানান, খাওয়া থাকা মালিকের এবং প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা মজুরিতে মৌলভীবাজার থেকে এসেছি। আগামীতে মাহুত বানাতে স্থানীয় দুইজনকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তারা প্রশিক্ষিত হলে তাদের ওপর দায়িত্ব দিয়ে চলে যাবো।

হাতির মালিক দুলাল চন্দ্র রায় জানান, “স্ত্রীর স্বপ্ন পূরণে জমি বিক্রি করে সাড়ে ১৬ লাখ টাকায় হাতিটি কিনেছি। হাতিটির দেখভাল করতে মৌলভীবাজার থেকে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা বেতনে মাহুতকে নিয়ে এসেছি। যাতে হাতির পরিচর্যায় কোনো সমস্যা না হয়। আপাতত হাতির পিছনে মাহুতের মজুরি এবং কলাগাছের জন্য দৈনিক ১০০-১৫০ শত টাকা খরচ হচ্ছে। এর আগেও ঘোড়া ও রাজহাঁস কিনতে বলায় সেটাও কিনে দিয়েছি। স্ত্রীকে খুশি করতেই হাতিটি কিনেছি।”

আরও পড়ুন-ইলিশ মিলবে সারা বছর! হাসিনা সরকারের আড়াইশো কোটির প্রকল্প

Previous articleবাঙালিকে মাছ খাইয়ে মুনাফা তুলছে রেল
Next articleপা চাটতে না পারায়  অধিনায়ক দলের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছেন রায়াডুকে,জাদেজার মন্তব্যে চাঞ্চল্য