Monday, May 12, 2025

নজিরবিহীন ! প্রতিমা তৈরির মাটি এলো রাজনৈতিক দলের দরজা থেকে

Date:

Share post:

দুর্গাপুজোর সঙ্গে এ ভাবে এতদিন যুক্ত ছিলো না রাজনীতি৷ রাজনৈতিক লোকজন শহরে বড় বড় পুজোর আয়োজন করেন, নিজের দলের শীর্ষ নেতা-নেত্রীরা সে সব পুজো উদ্বোধন করেন, এইটুকুই ছোঁয়া ছিলো রাজনীতির৷

এ বছর চক্রবেড়িয়া সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির উদ্যোক্তারা আরও বড় আকারে পুজোর সঙ্গে রাজনীতিকে মিশিয়ে দিলেন৷ এবছর চক্রবেড়িয়ার ৭৫তম বছরের পুজো৷ আর কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মেনে চক্রবেড়িয়ার দুর্গাপ্রতিমা তৈরির মাটি আনা হয়েছে রাজ্যের প্রধান চারটি রাজনৈতিক দলের প্রধান কার্যালয়ের সামনে থেকে।

যেদিন এই দুর্গোৎসবের খুঁটিপুজো হয়, সেদিনই উদ্যোক্তারা কেউ গিয়েছিলেন ইএম বাইপাসের তৃণমূল কংগ্রেসের সদর দফতরে, কেউ গিয়েছিলেন কংগ্রেসের বিধান ভবনে। আবার কেউ চলে যান সোজা আলিমুদ্দিন স্ট্রিট৷ কেউ গিয়েছিলেন মুরলিধর সেন লেনে ভারতীয় জনতা পার্টির রাজ্য সদর দপ্তরেও। এই চার রাজনৈতিক দলের সদর দফতরের সামনে থেকে খুঁড়ে আনা হয়েছে মাটি৷ মাটি আনা হয়েছে মন্দির, মসজিদ, গির্জা ও গুরুদ্বার থেকেও। সব জায়গা থেকে মাটি এনে মেশানো হয়েছে এক জায়গায়৷ মাখা হয়েছে স্যানিটাইজার দিয়ে। তারপর মৃৎশিল্পী সেই মাটির প্রলেপ দিয়েছেন চক্রবেড়িয়ার এ বছরের দুর্গাপ্রতিমার অঙ্গে৷

কেন এই অদ্ভুত ইচ্ছা ?

উত্তরে উদ্যোক্তারা বলেছেন, রাজনীতির রং যাতে পুজোর আনন্দকে বিবর্ণ করতে না-পারে, সেজন্যই তাদের এই উদ্যোগ৷

প্রশ্ন উঠেছে, বাংলার দুর্গাপুজো এবং পুজোর আনন্দ, আবহ কবে রাজনীতির রং লেগে বিবর্ণ হয়েছে ? দুর্গাপুজোয় বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে দলীয় রাজনীতির আকচাআকচি, কোথায় হয়েছে ? উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, বাংলার সমাজ থেকে ধর্মীয় বিভাজন আর রাজনৈতিক হানাহানি নিশ্চিহ্ন করতেই এই প্রচেষ্টা৷ পুজো কমিটির যুগ্ম সম্পাদক তিমির সরকার বলেছেন, ‘বাংলার মানুষ রাজনীতি নিয়ে উৎসাহী। কিন্তু রাজনীতির চেহারা এখন যা দেখা যাচ্ছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। এখন এমন হয়েছে যেন ভিন্ন মত মানেই তিনি শত্রু। এটা তো বাংলার সংস্কৃতি নয়। সেটাই শোধরানোর একটা চেষ্টা করা”৷
তবে এই চেষ্টার অন্য ব্যাখ্যাও হচ্ছে৷ অনেকে বলছেন, “এতে সামগ্রিক রাজনৈতিক কার্যক্রমকে খাটো করা হচ্ছে৷ রাজনৈতিক দ্বেষ বিচ্ছিন্ন ঘটনা৷ এজন্য গোটা রাজনীতি-ব্যবস্থাকে কাঠগড়ায় তোলা ঠিক নয়৷” কেউ কেউ বলেছেন,
“রাজনীতির জন্য সামাজিক পরিস্থিতি এমন জায়গায় চলে গিয়েছে যে সমাধান আর আমাদের হাতে নেই। এ জিনিস তো আগে কখনও করতে হয়নি। এটা খুব খারাপ লক্ষণ।”
যে চার রাজনৈতিক দলের. কার্যালয়ের সামনে থেকে প্রতিমার মাটি আনা হয়েছে, সেই দলগুলির নেতারা কী বলছেন ?

রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারি শাস্ত্রমতে পুজো করার পক্ষপাতী ৷ তাঁর কথা, “পুজো করার একটা পদ্ধতি আছে। আমি মনে করি সেটা মেনেই পুজো করা উচিত। এর বাইরে কিছু বলব না।” বিজেপির রাজ্য সহ- সভাপতি বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরি মনে করছেন, “পুজো করতে হলে যথাবিহিত শাস্ত্র মেনে করা উচিত। না-হলে সেটা ছেলেখেলার পর্যায় পৌঁছে যায়। পুজোটা তেমন নয়।”
বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, “রাজনৈতিক পরিস্থিতি তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে৷ সাধারণ মানুষ এই ভাবে মরিয়া উদ্যোগ নিচ্ছেন পরিস্থিতি শান্ত রাখতে। অতীতে কখনও এমন করতে হয়নি”৷

আরও পড়ুন- লাল-সাদা শাড়িতে এস বি পার্কের পুজোর ঢাকে কাঠি দিলো আস্ত একটি রোবট

spot_img

Related articles

দুর্ভাগ্যজনক! জঙ্গিদের হয়ে ব্যাট ধরেছিল পাক সেনা: স্পষ্ট জানাল ভারতীয় সেনাবাহিনী

এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, জঙ্গিদের হয়ে ব্যাট ধরেছিল পাক সেনা। জঙ্গিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে লড়েছে। আমরা তার...

অভিনব উদ্যোগ রাজ্য পুলিশের, সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ক্রাইম থ্রিলার

রাজ্য পুলিশ(Wb Police) প্রতিদিন নানা ধরনের অপরাধের কিনারা করছে আবার অনেক ক্ষেত্রে কিনারা করা একপ্রকার অসম্ভব হয়ে ওঠে।...

চিনের মিসাইল-ড্রোনেই ভারতে হামলা পাকিস্তানের: তথ্য পেশ ভারতীয় সেনার

প্রতিরক্ষায় পাকিস্তান যে পুরোপুরিভাবে চিনের উপর নির্ভরশীল ফের একবার প্রমাণ করে দিল ভারতীয় সেনা (Indian Army)। আকাশপথে ভারতের...

ছত্তিশগড়ে ট্রেলার-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১৩, শোক প্রকাশ রাষ্ট্রপতির

ছত্তিশগড়ের (Chhattisgarh) রায়পুরে ট্রাক ও ট্রেলারের মুখোমুখি সংঘর্ষ। এখনও পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। বেশিরভাগই শিশু ও...