মার্চ নয়, ৩১ জানুয়ারির মধ্যে বাকি কাজ শেষ করার নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর

কিশোর সাহা

৩১ মার্চ নয়, ৩১ জানুয়ারির মধ্যে রাজ্যের পুরানো ও নতুন সব প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গের সচিবালয় উত্তরকন্যায় প্রশাসনিক সভার মঞ্চ থেকে ওই বার্তা দেওয়া হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, চলতি আর্থিক বছরের যাবতীয় কাজ যাতে জানুয়ারির মধ্যে শেষ হয় সে জন্য প্রতিটি জেলার ডিএম, এসপি, স্বাস্থ্য দফতর সহ সব কটি বিভাগদের শীর্ষ কর্তাদের একযোগে টিম হিসেবে কাজ করতে হবে। শুধু তাই নয়, কোথাও গাফিলতি হলে যে বরদাস্ত করা হবে না সেটাও জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যেমন, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে পুলিশের কাজে কিছু গাফিলতির অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছেছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপারদের আরও তৎপর হয়ে কাজ করাতে হবে। বিশেষত, সীমান্তবর্তী এলাকায় নানা ধরনের প্ররোচনা থাকে সেটা মাথায় রেখেই পুলিশ কর্তাদের সতর্ক থাকতে বলেছেন তিনি।

সাধারণত, ৩১ মার্চ আর্থিক বছর শেষ হয়। সেই মতো যাবতীয় সরকারি প্রকল্পের কাজও ওই সময়ের মধ্যে শেষ করার জন্য লক্ষ্য থাকে প্রশাসনের। এবার বছর গড়ালেই বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি জোরকদমে শুরু হয়ে যাবে। ফলে, প্রশাসনের দৈনন্দিন কাজকর্মেও প্রভাব পড়বে। সর্বোপরি, ভোটের প্রচারে নামার আগে যাবতীয় অসমাপ্ত প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারলে প্রচারে বাড়তি সুবিধা মিলবে সেটাও তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রীর অজানা নয়। তাই আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যেই সব কাজ শেষ করার কথা বারেবারেই তিনি বলেছেন।

কাগজে-কলমে উত্তরকন্যায় জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার প্রশাসনিক বৈঠক হলেও বাস্তবে গোটা রাজ্যেই যে অলিখিতভাবে ভোটের আগাম প্রস্তুতি শুরু হয়েছে তা এদিন অনেকটাই বোঝা গিয়েছে। যেমন, ডুয়ার্সের চা বলয়ের এক বিধায়ক শুক্রা মুন্ডা জানান, চা বাগানে তৃণমূল জমানায় অনেক কাজ হয়েছে। কিন্তু, তাঁরা চা বাগানে গেলে শুনতে পান, তাঁদের আমলে সেভাবে কাজই হয়নি। সে জন্য শুক্রা মুন্ডা প্রচারের খামতি থাকার বিষয়ে দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আনেন।

মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গেই বিষয়টি স্বীকার করে নেন। তিনি জানিয়ে দেন, তাঁরা যেভাবে যতটা কাজ করছেন, ততটা প্রচারে আসছে না। বরং, অপপ্রচার বেশি হচ্ছে বলে আশঙ্কা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই তিনি আগামী মুখ্য সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে ওই মঞ্চ থেকেই নির্দেশ দেন, রাজ্য সরকারের কাজের প্রচারের জন্য আরও সক্রিয়ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

এমনকী, সোশাল মিডিয়ায় নজর রাখার জন্য প্রতিটি থানা এলাকায় দুজন করে কর্মীকে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টিও জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। কোথাও কোনও অপপ্রচার হলে ওই দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সোশাল মিডিয়ায় আসল সত্যি তুলে ধরবেন বলেও মুখ্যমন্ত্রী জানান। দৃষ্টান্ত দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, মালদহে একটি হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে চাউর করা হয় মন্দির ভাঙা হয়েছে। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় তা মিথ্যা। এ ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা মন্দিরের সামনে গিয়ে লাইভ করবেন বলেও মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন।

এদিন প্রায় পৌনে দু ঘণ্টার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গের ওই দুই জেলার দলীয় বিধায়কদের কাছ থেকে এলাকার পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নেন। কয়েকটি সমস্যার কথা সভায় উঠলে সঙ্গে সঙ্গেই তা সমাধানের নির্দেশ দেন। আলিপুরদুয়ার জংশনের রেল কলোনি এলাকা সেখানকার পুরসভার আওতায় নেই। তা আওতায় আনার আর্জি শুনে তখনই ডিএমকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। শিলিগুড়ির একটি উদ্বাস্তু কলোনির বাসিন্দাদের নাম নথিভুক্তির সমস্যার কথা শুনতে পেয়ে এদিনই তা মিটিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। রাজ্যের মুখ্য সচিব রাজীব সিনহা জানান, আগামীকাল, বুধবার বেলা ১২টার মধ্যে ওই নথিভুক্তির কাজ সম্পূর্ণ করে ফেলা হবে।

প্রশাসনিক বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী উত্তরকন্যাতেই রয়েছেন। তবে সন্ধেয় শিলিগুড়িতে পর্যটন দফতরের অতিথি নিবাসে মৈনাকে রাজ্যের মুখ্য সচিব বিভিন্ন বণিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসে তাঁদের নানা সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। শিলিগুড়িতে একটি ফুড পার্ক দ্রুত গড়া হবে বলে মুখ্য সচিব জানান। সেখানে ভুট্টা প্রক্রিয়াজাত কারখানা করার বিষয়টিও সরকারের চিন্তাভাবনায় রয়েছে বলে মুখ্য সচিব জানিয়েছেন। মুখ্য সচিব জানান, এবার যা পরিস্থিতি তাতে ৩১ মার্চ নয়, ৩১ জানুয়ারির মধ্যে যাবতীয় বকেয়া কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে।

আরও পড়ুন-কামতাপুরি ভাষা অ্যাকাডেমি গঠনের ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

Previous articleউত্তরপাড়ায় সিইএসসি অফিসে আগুন
Next articleশ্রীলঙ্কা সফর বাতিল হলেও মার্চে নিউজিল্যান্ড সফর নিশ্চিত বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের