পালিয়ে বিয়ে করলে কি
হাতছাড়া হবে ‘রূপশ্রী’ প্রকল্পের ২৫ হাজার টাকা?

‘রূপশ্রী’-বিধিতে এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলা নেই৷ তাই বিপাকে অনেক ‘কন্যা’৷ এই ‘গুরুত্বপূর্ণ’ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ভিড় করেছেন সরকারি দফতরে৷

এমনই প্রশ্নের মুখে পড়েন আরামবাগ এসডিও অফিসের ‘রূপশ্রী’ প্রকল্পের দায়িত্ব থাকা অফিসার৷ প্রশ্ন শুনে প্রথমবার হোঁচট খেলেও পরে সামলে নিয়েছেন৷ কারন, প্রায় রোজই না’কি তাঁর কাছে এমন প্রশ্ন নিয়ে আসছেন সদ্য ১৮-উর্ধ্ব ‘রূপশ্রী’-রা৷

প্রশ্ন করার আগে মুখবন্ধ আছে৷ জানিয়েছেন ওই অফিসার৷ প্রথমে বলা হয়, ‘আমার বয়স ১৮ পেরিয়েছে। নিজের পছন্দের ছেলেকেই বিয়ে করতে চাই। কিন্তু, বাড়ির লোকজন প্রবল আপত্তি করছে৷ তাই শেষপর্যন্ত পালিয়েই বিয়ে করতে হবে৷ এ ছাড়া কোনও বিকল্প নেই!’
এর পরেই সেই প্রশ্ন, “আচ্ছা স্যর, পালিয়ে বিয়ে করলে ‘রূপশ্রী’ প্রকল্পের ২৫ হাজার টাকা হাতছাড়া হয়ে যাবে না তো?”
এর উত্তর স্পষ্টভাবে দিতেও পারছেন না সংশ্লিষ্ট পদাধিকারীরা৷ কারন, বিধিতে এই বিষয়ে কোনও উল্লেখ নেই৷ আবার ‘টাকা মিলবে না’, এমনও বলতে পারছেন না৷ তাই একটু ঘুরিয়ে
বলছেন, “আবেদন নিয়ম মেনে হলে এবং নথিপত্র ঠিকঠাক থাকলে আবেদনকারীর অ্যাকাউন্টে ঢুকে যাবে রূপশ্রী প্রকল্পের ২৫ হাজার টাকা।”

এ প্রসঙ্গে প্রশাসনের এক কর্তা বলেছেন, সরকারের উদ্দেশ্য এই প্রকল্পের মাধ্যমে নাবালিকা বিয়ে আটকানো। এছাড়াও মেয়ের বিয়ে দিতে দুঃস্থ, দরিদ্র পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করার উদ্দেশ্যে এই রূপশ্রী প্রকল্প চালু হয়েছিল। ওই প্রকল্পের গাইডলাইনের কোথাও বলা নেই, অভিভাবকের সম্মতিতে বিয়ে হবে, না’কি পাত্রী নিজেই নিজের পাত্র পছন্দ করে, বাড়ির লোকের আপত্তিতে বিয়ে করবেন, তার কোনও উল্লেখ নেই। বলা নেই পালিয়ে বিয়ে করলে, ‘রূপশ্রী’ পাওয়া যাবে না৷ তাই প্রয়োজনীয় নথিপত্র দিয়ে আবেদন জানালে তিনি প্রকল্পের সুবিধা পেতে বাধ্য।

‘রূপশ্রী’ প্রকল্পের গাইডলাইনে বলা আছে, ১৮ পার করা যুবতীকে সাদা কাগজে বিয়ের বিষয়ে একটি স্বীকারোক্তি দিতে হবে। সেখানে বলতে হবে, ‘আমি এটাই প্রথমবার বিয়ে করতে চলেছি’। সঙ্গে রেজিস্ট্রি ম্যারেজের নোটিসের কপি, পাত্র ও পাত্রী, দু’জনের সচিত্র পরিচয়পত্র, আধার কার্ড, জন্ম সার্টিফিকেট বা বয়সের প্রমাণপত্র সঙ্গে জমা দিতে হবে। পাত্রীর পরিবারের বার্ষিক আয়ের কাগজ, বাসস্থানের সার্টিফিকেট, থাকলে বিয়ের কার্ড ওই আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়াও আবশ্যিক ৷ ওই আবেদন খতিয়ে দেখে জেলাস্তরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সবকিছু ঠিক থাকলে পাত্রীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ২৫ হাজার টাকা ঢুকে যায়। গাইডলাইনে যেহেতু নিষেধাজ্ঞা নেই, বাড়ির লোকের অমতে অথবা বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করলেও রূপশ্রীর টাকা পেতে তাই আপাতত কোনও অসুবিধা নেই৷
