মমতার মাস্টার স্ট্রোক, বিজেপির নবান্ন অভিযানের জৌলুষ ফ্যাকাসে, অভিজিৎ ঘোষের কলম

অভিজিৎ ঘোষ

বৃহস্পতিবার নবান্ন অভিযান বিজেপির যুব মোর্চার। আসলে বিজেপির কর্মসূচি। সে নিয়ে প্রস্তুতি ছিল তুঙ্গে। রাজ্য প্রশাসনকে ব্যতিব্যস্ত করাই যে আসল লক্ষ্য তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

উদ্দেশ্য, মাইলেজ বাড়ানো। কর্মীদের চাঙ্গা করা। পুজোর আগে ও কোভিড পরিস্থিতির মাঝে গা গরম করার ড্রেস রিহার্সাল। বিধানসভার আগে শক্তি প্রদর্শন। দলের গোষ্ঠী কোন্দল বন্ধ করে এক সূত্রে বাঁধার চেষ্টা। এবং অবশ্যই দেখে নেওয়া দেশ জুড়ে মোদি সরকারের নেতিবাচক সিদ্ধান্তের জের কতখানি পড়ল বাংলায়।

নবান্ন অভিযানের আসল লক্ষ্য সেটাই। ভরা মহাকরণ। মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন। মন্ত্রীরা থাকবেন। আমলা-অফিসার-কর্মীরা কাজ করবেন। সেই সময়ে অভিযান। ফলে সরকারের সদর দফতর যে অস্বস্তিতে পড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যুব-বিজেপি কর্মীদের মনে ছিল বিপুল উচ্চাশা। ভাবটা অনেকটা এইরকম, দেখিয়ে দেব ৮ অক্টোবর। বুঝিয়ে দেব তৃণমূলকে।

ঠিক এই জায়গায় মাস্টার স্ট্রোক দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টানা ৪৮ ঘন্টার জন্য ফাঁকা করে দিলেন নবান্ন। সৌজন্যে কোভিড। প্রয়োজন স্যানিটাইজেশন। তাই নবান্নের সব কর্মীদের দুদিন ছুটি। তাহলে ফাঁকা নবান্ন ঘেরাও করে লাভ কী! যদিও বলেই দেওয়া যায়, নবান্ন ফাঁকা থাকুক বা ভর্তি, বিজেপির একজন কর্মীও নবান্নের হাফ কিলোমিটারের চৌহদ্দির মধ্যে ঢুকতে পারবেন না। রাতে লালবাজার জানাচ্ছে, রাজ্য দফতর আর হেস্টিংসের মিছিলের অনুমতি মেলেনি। ফলে সেখান থেকে আদৌ মিছিল শুরু করা যাবে কিনা সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন।

আরও পড়ুন- জট কাটল! সই সাবুদ শেষ, লাল-হলুদের কোচ সম্ভবত রবি ফাওলার

কিন্তু রাজনৈতিক মহল বলছে, মিছিলের অনুমতি পাওয়া-না পাওয়া পরের ব্যাপার। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যে পদক্ষেপ করেছেন, তাতে বিজেপি নবান্ন অভিযানের যে বেলুনটা ফুলিয়েছিল, সেটা কার্যত অনেকটাই চুপসে গিয়েছে। অনেকে বলছেন, এই মুহূর্তে ফাঁকা মহাকরণ বা রাইটার্সে কোনও অভিযান হলে যে তাৎপর্য বহন করবে, ছুটিতে থাকা নবান্ন অভিযান তার সমার্থক।

আর এটা বুঝতে পেরেই বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেছেন, ভয় পেয়ে নবান্নয় ছুটি ঘোষণা করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী এখন বিরোধীদের ভয় পাচ্ছেন। স্যানিটাইজেশন করলে তো আগে থেকে বিজ্ঞপ্তি দেবেন। পাল্টা সায়ন্তনকে কটাক্ষ করে তৃণমূলের পক্ষে বলা হয়েছে, কাল যদি তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির সদর দফতর অভিযানে যায়, তাহলে সব কাজ ফেলে নেতারা সেখানে গিয়ে বসে থাকবেন নাকি? দেখাবেন যে তাঁরা কত সাহসী! আর নবান্ন স্যানিটাইজড কীভাবে-কখন-কেমন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে করবেন, সেটা একান্ত প্রশাসনের সিদ্ধান্ত। নাকি, মহাকরণ থেকে ঢ্যারা পিটিয়ে তা বলা হবে। না, বিজেপির মেন্টর জগদীপ ধনকড়কে জানাতে হবে! কই আগে তো এভাবেই নোটিশ পড়েছে নবান্নে। তখন তো এই প্রশ্ন তোলেননি সায়ন্তনরা!

আরও পড়ুন- ধর্ষণে অভিযুক্তরা কি কঙ্গনার ভাই? কটাক্ষ সঞ্জয় রাউতের

আসলে সায়ন্তনের কথার মধ্যেই রয়েছে স্পষ্ট হতাশার ছাপ। তাদের অভিযানের অর্ধেক জৌলুষ যে শুরুতেই পাংশুটে হয়ে গেল, তা নিজেরাই মানছেন। তৃণমূলের ঘোর বিরোধী বাম-কংগ্রেসের নেতারাও আড়ালে আবডালে বলছেন, বিরোধী মোকাবিলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিগত সাড়ে ন’বছরে সবচেয়ে চতুর পদক্ষেপ করেছেন বুধবার সন্ধ্যায়। স্যানিটাইজেশনের আড়ালে কোনও সঙ্ঘাতে না গিয়ে প্রশাসনিক চাতুর্যে বিরোধী আন্দোলন ভোঁতা করার পরিকল্পনা। ২৪ বছর টানা মুখ্যমন্ত্রী থাকা প্রয়াত জ্যোতি বসুও ঠিক এভাবেই সিদ্ধান্ত নিতেন।

Previous articleপাহাড় নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাস্ট্রমন্ত্রকের ডাকা বৈঠক নিষ্ফল
Next articleব্রেকফাস্ট নিউজ