ত্রিধা বিভক্ত বিজেপি, ঘর সামলাতে ঘুম ছুটেছে মেননদের, অভিজিৎ ঘোষের কলম

রাজনৈতিক মহলে যারা ১০বছর ক্ষমতায় থাকা তৃণমূলের ছিদ্রান্বেষণে ব্যস্ত, তাঁরাই এখন বিজেপির বর্তমান চেহারাটায় বেশ চিন্তিত। ক্ষমতায় আসার আগেই বিজেপির অন্দরের চেহারা দেখে তাঁদের চক্ষু চড়ক গাছ।

রাজ্য বিজেপিতে নতুন জোয়ার এনেছেন দিলীপ ঘোষ। এটা মানতে বাধ্য হচ্ছেন দলের রাজ্য থেকে কেন্দ্রের নেতারা। দিলীপ যতদিন নিজের স্টাইলে দল চালিয়েছেন, ততদিন তরতর করে দল এগিয়েছে, ফলও মিলেছে হাতেনাতে। দিলীপ মাঠে নেমে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। ঢিলের জবাব পাটকেলে দেন। তপন শিকদারের পর এমন সভাপতি বিজেপিতে আসেননি, তা দলের তৃণমূলস্তর থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা একবাক্যে মেনে নেন। সবচেয়ে বড় কথা দিলীপের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর কোনও বিষয় এইসব নেতাদের হাতে নেই।

কিন্তু ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের সাফল্যের পর পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। বিজেপির মধ্যে ধারণা তৈরি হয়, তারা রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে পারবেন একটু চেষ্টা করলেই। কেন্দ্রীয় নেতারাও বুঝতে পারেন জমি তৈরি হচ্ছে।

আর ঠিক এই সময়েই দলের কৃতিত্ব বাড়াতে দলবদলুদের জন্য দরজা হাট করে খুলে দেয় বিজেপি। ভাবখানা এইরকম যে, ভাঙ এদের। মাজা ভেঙে দাও ওদের লোকজনকে নিয়ে। এদের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠা করতে মাঠে নেমে পড়েন কৈলাশ বিজয়বর্গীরা। লবি, লবি এবং লবি। এই লবির কাছে হার মানলেন অমিত শাহ থেকে জে পি নাড্ডাও। ভাবলেন, এদের দলে উচ্চপদ দিয়ে কাজে নামালে দল আরও শক্তিশালী হবে। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা যাবে। একবারও ভেবে দেখলেন না, কী কারণে পুরনো দল এদেরকে ঘরের বাইরে রেখে দিয়েছিল!

এরা দলে এসে আদি বিজেপির সঙ্গে মিশে যাওয়ার চাইতে নিজেদের দল ভারী করার কাজ শুরু করল। দিলীপ যখন একের পর এক জেলা সফরে, চায় পে আড্ডায় জনসংযোগ করে দলের ভিত তৈরি করছেন, তখন এদের কাজ, দিলীপের জামা টেনে ধরা, পায়ে বেড়ি পরানো। দিলীপ জলে ভিজে রোদে পুড়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, আর এইসব নেতারা নানা রাজনৈতিক বালখিল্যতায় ছবি আর বুমের সামনে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় ব্যস্ত। দিলীপের কাজ ভাগাভাগি নয়। দিলীপ জমি তৈরি করছেন, আর তারা সেই জমিতে গিয়ে বীজ লাগাতে ব্যস্ত। ফলে কাজের লোক আর কাজ দেখানোর লোকেদের মধ্যে বিজেপিতে “শার্প ডিভিশন” তৈরি হয়ে যাচ্ছে। তার উপর এইসব দলবদলুদের আমচা-চামচার রক্ষী পরিবেষ্টিত থাকার ছবিতে দলেই বিরক্তি তৈরি হয়েছে। নবান্ন চলোতে দিলীপ হাঁটলেন, ব্যারিকেডের মুখোমুখি হলেন। আর এইসব দলবদলুরা দু’পা হেঁটে শাকাহারী কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে বিক্ষোভের ফুটেজ দিল্লিতে পাঠিয়ে ক্রেডিট নেওয়ার খেলায় ব্যস্ত থাকলেন। ফলে বিজেপিতে এখন কাজের আর অকাজের লোকেদের মধ্যে তীব্র আকচা-আকচি। দিলীপ ঘোষ অবশ্য এইসব ভাগাগাগি মানতে নারাজ। তিনি বলছেন, বিজেপি ঐক্যবদ্ধ। কিন্তু অন্দরের খবর, দিলীপ বিরক্ত। পার্টিজান দিলীপের মুখ থেকে একটি শব্দও বের করা যাচ্ছে না।

আর এইসব দলবদলুদের কারণে, যেভাবে আদি বিজেপিকে উপেক্ষা করেছেন দিল্লির নেতারা, তাতে আবার অশনি সঙ্কেত দেখছেন রাজ্য নেতারা। রাহুল সিনহা থেকে রীতেশ তেওয়ারিরা দলের খারাপ সময়ের কর্মী। দলের প্রদীপ যখন রাজ্যে টিমটিম করে জ্বলত, তখন সেই প্রদীপ জ্বালার কাজটা তাঁরাই করেছেন। আর আজ যখন রাজ্যে বিজেপি প্রধান বিরোধী দলের তকমা পেয়েছে, তখন তাদেরকে উপেক্ষা করায় ক্ষোভে ফুঁসছেন আদি বিজেপিরা। ভোটে তাঁরা অনেক হিসাব ওলট-পালট করে দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। দিলীপ চেষ্টা করছেন এদের মর্যাদা দিতে, কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতাদের বদান্যতায় এরা এতখানি ডালপালা মেলেছে যে সব কিছু এখন আর তাঁর হাতে নেই।

ফলে ত্রিধা বিভক্ত বিজেপি। বিধানসভা ভোটের মুখে এই সমস্যায় রাতের ঘুম উড়েছে শিব প্রকাশ আর অরবিন্দ মেননের। এই নব্য বিজেপির দল এখন বিজেপির অন্দরের নতুন কাঁটা। এই দুই নেতার কাঁটা তোলার ক্ষমতাতো নেই। বরং প্রতি পদে পদে তাঁরা বুঝছেন, নীলকণ্ঠ হয়ে থাকাই বোধহয় আপাতত তাঁদের ভবিতব্য!

আরও পড়ুন-যোগী থেকে গেহলট, অমানবিক রাজনীতিকদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তাড়ান ভোটাররা, অভিজিৎ ঘোষের কলম

Previous articleছড়িয়ে পড়েছে ক্যানসার-বেড়েছে অস্থিরতা, অত্যন্ত সঙ্কটজনক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়
Next article‘অটল টানেল’ থেকে গায়েব সোনিয়ার নামাঙ্কিত ফলক! তীব্র প্রতিবাদ কংগ্রেসের